নিজস্ব সংবাদদাতা: আর মাত্র পক্ষকালের মাথায় পৌরভোট। তার আগে খড়গপুর পৌরসভার জন্য নিজেদের দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা মেদিনীপুর সংসদীয় ক্ষেত্রের সাংসদ দিলীপ ঘোষ।

অথচ সেই সভায় দেখা গেলনা খড়গপুর পৌরসভা লড়াইয়ে বিজেপির প্রধান মুখ তথা খড়গপুর শহরের বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কেই। যার একটাই অর্থ পুরসভার চূড়ান্ত লড়াইয়ের মুখে দাঁড়িয়েও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি বিজেপির দিলীপ আর হিরণ গোষ্ঠী। বিজেপির ম্যায়-ম্যায় তু-তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যেই যে যার মত করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব অস্থিত্ব রক্ষার।
শনিবার রাতে খড়গপুর পুর নির্বাচনের এই বিজেপির ইস্তাহারটি প্রকাশ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। খড়গপুর শহরের কৌশল্যা এলাকায় একটি লজে এই ইস্তাহার প্রকাশ কর্মসূচি হয়েছে। সেখানে বিজেপির জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অনুপস্থিত থাকলেন বিজেপির তারকা বিধায়ক হিরণ।
কেন হিরণ উপস্থিত থাকেননি তাঁর একটা ব্যাখ্যা অবশ্য বিধায়ক দিয়েছেন কিন্তু হিরণ অনুগত এক বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, পুর নির্বাচন লড়বেন হিরণ আর ইশতেহার প্রকাশ করবেন সাংসদ? সর্বত্রই ওনার মোড়লি করা আর মেদিনীপুরকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে নেওয়ার প্রবণতা আমরা মানতে পারিনি। তাই ঢাকঢোল পেটানো, প্রচার সর্বস্ব, মুখ দেখানো ওই অনুষ্ঠানে আমরা যাইনি। আমাদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভোটে হিরণদাকে জিতিয়ে আনা। তাই দাদাকে নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত ছিলাম আমরা।
বিধায়ক তথা খড়গপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিরণ নিজে বলেছেন ” আমি প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অনেক রাত পর্যন্ত জনসংযোগ করেছি। তাই প্রচারের কাজ ছেড়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় সাংসদ দিলীপ ঘোষের ওই ইস্তাহার প্রকাশ কর্মসূচিতে থাকতে পারি নি। নির্বাচনের আর দেরি নেই। হাতে মাত্র দশদিন রয়েছে। তাই আমার কাছে ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে থাকার তুলনায় জনসংযোগে থাকা বেশি জরুরি মনে হয়েছে। তাই থাকতে পারি নি।”
বিজেপির ইশতেহারে খড়গপুরে জল কর মকুব ও ঘরে ঘরে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তারসাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য নিয়ে উন্নতমানের জলনিকাশী ব্যবস্থা করার জন্য খড়গপুরে মাস্টার প্ল্যান তৈরীর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতি মুক্ত পুরসভা গড়তে সমস্ত কাজ অনলাইনের মাধ্যমে করা সহ আরও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও সে সবকে ছাপিয়েই আলোচনায় উঠে এসেছে হিরণের অনুপস্থিতির কথা। কারন, এই প্রথমবার নয় গত ছ’মাসেরও বেশি সময় খড়গপুর শহরে থেকেও মুখ দেখাদেখি নেই দুই নেতার। দিলীপ ঘোষের ডাকা একের পর এক মিটিং এড়িয়ে চলেছেন হিরণ। এমনকি দিলীপ ঘোষের রেলবাংলোতে পুরনির্বাচন উপলক্ষ্যে সাংগঠনিক বৈঠকেও তিনি হাজির থাকেননি।
তবে শনিবার রাতের কর্মসূচিতে তারকা বিধায়ক হিরণের অনুপস্থিতি নিয়ে বিজেপির কেউ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হন নি। যদিও প্রত্যেকে ঘনিষ্ঠ মহলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই ব্যাপারে বিজেপির খড়গপুর উত্তর মন্ডলের সভাপতি তথা উনিশ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দীপসোনা ঘোষ বলেছেন ” আমি জানি না কেন বিধায়ক অনুপস্থিত ছিলেন। মনে হয় প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন।” শনিবার রাতে দলীয় ইস্তাহার প্রকাশের পর দিলীপ ঘোষ খড়গপুর পুরসভায় বিজেপির সমস্ত প্রার্থী থেকে শুরু করে শক্তি প্রমুখ সহ মন্ডল সভাপতিদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে হিরণ বাদে বাকি সকলেই উপস্থিত ছিলেন।
তবে প্রচারে অবশ্য কোনও খামতি রাখছেননা অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। খড়গপুর পুরসভায় সিপিমের জেতা আসনে কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। সিপিএমের প্রার্থী ছাড়াও এই স্টার ওয়ার্ডে লড়ছেন তৃনমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী প্রার্থী জহরলাল পাল। রয়েছেন আমরা বামপন্থীর পক্ষে প্রাক্তন কাউন্সিলর মনোজ ধর। অতএব কঠিন এই লড়াইয়ে এক ফোঁটা শক্তি হারাতে রাজি নন হিরণ। শনিবারের পর রবিবারের ছুটির দিনে ওয়ার্ডের একের পর এক এলাকা চষে ফেলেছেন পুরসভা নির্বাচনের প্রার্থী হিরণ।