নিজস্ব সংবাদদাতা: শনিবার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরে। একটি নির্মীয়মান বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কে নেমে প্রাণ হারালেন এক রাজমিস্ত্রি ও তাঁর সহকারি। ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ২জন। দাসপুর থানার রবিদাসপুরের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত রাজমিস্ত্রি ও তাঁর সহকর্মীর নাম যথাক্রমে মধুসূদন দাস (৫০) ও কার্তিক সিংহ (৩৫)। দুজনই ওই গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে রবিদাসপুরে একটি পাকা বাড়ির নির্মাণ করছেন সহদেব দাস নামক এক ব্যবসায়ী। বাড়িটি নির্মীয়মান হলেও তার শৌচালয়ের সেফটি ট্যাঙ্কের চেম্বার নির্মাণ হয়ে গেছিল মাসখানেক আগে। সেই চেম্বারের প্রধানমুখ বা ম্যানহোলটি ঢাকনা লাগিয়ে কাজ শেষ করে চলে গিয়েছিল মিস্ত্রি। চেম্বারের ভেতরে রয়ে গেছিল প্লাস্টারের জন্য স্থাপিত পাটাতন। শনিবার বাড়ির কাজের ফাঁকে সেই পাটাতন খুলতে আসে মিস্ত্রি ও তাঁর সহকারি। যদিও সহদেব দাস তাদের আগেই সতর্ক করে দেয় যে, আজ শুধু ম্যানহোলের মুখটাই যেন খোলা হয়। ওই ভাবেই একদিন রেখে আগামীকাল চেম্বারের ভেতরে নামা হবে।
জানা গেছে সহদেব দাস শুধু সতর্ক করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি চেম্বারে নামার জন্য ম্যানহোলের মধ্যে দিয়ে যে ছোট বাঁশের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয় সেটিকে সরিয়েও রেখে নিজের ব্যবসার কাজে চলে যান। যদিও সেই বারণ না মেনেই একটি বাঁশের সাহায্যে ম্যানহোল দিয়ে চেম্বারে নামার প্রস্তুতি নেয় মিস্ত্রি ও তার সহকারি। প্রথমে নিচে নামে কার্তিক। কিছুক্ষণ পরে সাড়াশব্দ নেই দেখে নামেন মধুসূদন। কিন্তু ২জনের কেউই উঠছে না দেখে এবার নীচে নেমে মধুসূদনের ছেলে বিশ্বম্ভর এবং পরে নামে আরেক সহকারি সঞ্জয় দিয়াসী।
এদিকে ঘটনাস্থলের পাশাপাশি এক প্রতিবেশী অরূপ কাপাস বিষয়টি দেখে কাছে গিয়ে দেখেন চারজনের কেউই উঠে আসেনি। তাঁদের ডেকে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছিলনা। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকায় কিছু দেখাও যাচ্ছিলনা। কিছু একটা রহস্য রয়েছে আন্দাজ করে অরূপ এবার কোমরে দড়ি বেঁধে নিচে নেমে বিষয়টি দেখতে যান। কিন্তু কয়েক পা নেমেই তিনি বুঝতে পারেন ভেতরে মারন গ্যাস রয়েছে। সাথে সাথে ওপরে উঠে আসেন তিনি। শুরু করে দেন চিৎকার, হৈচৈ। এরপর ওই চেম্বারের ইটের দেওয়াল ফাটিয়ে গ্যাস নির্গমনের কিছুটা ব্যবস্থা করে বের করে আনা হয় ৪জনকে। নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন মধুসূদন ও কার্তিককে। বাকি ২জনের চিকিৎসা চলছে।