Monday, May 20, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ১৩৪ ।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল                                                                                             চিন্ময় দাশ                                  কিশোরী মোহন মন্দির, আস্তি ঠাকুরবাড়ি (পিংলা)

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

মহাপ্রভু চৈতন্যদেব দু’বার মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে জগন্নাথক্ষেত্র পুরী গিয়েছেন। পরবর্তীকালে বৈষ্ণব সাধক শ্যামানন্দ প্রভু গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রচার করেছিলেন সারা জেলা জুড়ে। সেই দুই অভিঘাতে বহু গোস্বামী, মোহন্ত আবির্ভূত হয়েছিলেন নিম্নবঙ্গের এই জেলায়। গড়ে উঠেছিল বহু মঠ, আশ্রম, অস্তল ইত্যাদি।এই জেলার কেদারকুণ্ড পরগণায় গোকুল দাস অধিকারী নামিত এক মোহন্তের আবির্ভাব হয়েছিল। আস্তি গ্রামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই সাধক।
গোকুল দাসের পরবর্তী নবম মোহন্ত ছিলেন নরহরি দাস অধিকারী। ততদিনে বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছিল আশ্রমটি। তাঁর সময়ে মুর্শিদাবাদের নবাবের এক দেওয়ান একটি সনন্দবলে ১০০ বিঘা সম্পত্তি দিয়েছিলেন আশ্রমকে। এর পাশাপাশি ভক্তদের দেওয়া অনেক সম্পত্তিও পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

কিন্তু বৈষয়িক বুনিয়াদ শক্ত হলেও, কোনও মন্দির ছিল না দেবতার। নরহরির পরে, শ্রীধর দাস অধিকারী, হৃদয়নাথ দাস অধিকারী এবং শশীভূষণ দাস অধিকারী যৌথভাবে আশ্রমের মোহন্ত হয়েছিলেন। এই ত্রয়ীর আন্তরিক প্রচেষ্টায়, বাংলা ১৩১৬ সনে (ইং ১৯০৯ সালে) দেবতার জন্য একটি স্থায়ী মন্দির এবং রাসমঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছিল।
মন্দির, রাসমঞ্চ, গোশালা, গোলাঘর, অতিথিশালা, রসুইঘর ইত্যাদি নিয়ে, ’ঠাকুরবাড়ি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল আশ্রমটি।

বর্তমানে দেখা যায়, বিপুল খ্যাতি, অসংখ্য শিষ্যমণ্ডলী, ঠাটবাট, ঘরবাড়িগুলি সবই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। জমিদারী প্রথার বিলোপ, রাজনৈতিক ডামাডোল আর স্বার্থান্ধ পরিচালনায়, মাত্র শ’খানিক বছরেরও কম সময়ে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে সব। টিকে আছে কেবল জীর্ণ মন্দির আর আধ-ভাঙ্গা রাসমঞ্চের কঙ্কালটুকু। উতসব-অনুষ্ঠানের আড়ম্বর উধাও হয়ে গিয়েছে। দেবতার সেবাপূজার ধারাটি কোন রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে নমো-নমো করে।

বেশ উঁচু পাদপীঠের উপর শিখর দেউল রীতির পূর্বমুখী ইটের মন্দির। সামনের চাপা-জগমোহনটির মাথায়  কলিঙ্গ-ধারায় পীঢ়-ভাগ করা  চালা ছাউনি। কার্ণিশগুলি সরলরৈখিক। খিলান-রীতির তিনটি দ্বারপথ। রচিত হয়েছে আটটি করে গোলাকার স্তম্ভের গুচ্ছের সাহায্যে।
গর্ভগৃহে একটিই দ্বারপথ। ভিতরের সিলিং গড়া হয়েছে চার দেওয়ালের মাথায় চারটি পাশ-খিলানের মাথায় গম্বুজ স্থাপন করে। বিমানসৌধের বহিরঙ্গে সপ্ত-রথ বিন্যাস করা। শীর্ষদেশে বেঁকির উপর পরপর দুটি আমলক, কুলস, পদ্মকোরক, ধ্বজদণ্ড এবং বিষ্ণুচক্র শোভিত।

জগমোহনের সামনের দেওয়ালে তিনটি প্যানেলে কিছু টেরাকোটা ফলকের বিন্যাস আছে। এছাড়া, জগমোহনের মাথায় ব্যাদিতবদন দুটি সিংহমূর্তি। গর্ভগৃহের বাইরের দক্ষিণের দেওয়ালে একটি দ্বারবর্তিনী মূর্তি রচিত আছে।
যেদিন থেকে রাস উতসবটি আর আয়োজিত হুয় না, মঞ্চটিও সেদিন থেকে অবাঞ্ছিত, অপাংক্তেয় হয়ে পরিত্যক্ত হয়েছে। তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার অপরূপ রূপলাবণ্য। ফুট চারেক উঁচু ভিত্তিবেদী। সপ্ত-রত্ন মঞ্চটির ছ’টি দ্বারপথের দু’দিকে মোট বারোটি পূর্ণায়বয়ব দ্বারপালিকা মূর্তি। ছ’টি কার্ণিশে বড় আকারের মূর্তিবিন্যাস করা টেরাকোটা প্যানেল। মোটিফ নেওয়া হয়েছে রামায়ণ, মহাভারত থেকে। ফুলকারী নকশার উতকৃষ্ট কারুকাজও আছে কার্ণিশ আর খিলানের মধ্যবর্তী অংশগুলিতে।

সাক্ষাতকারঃ  সর্বশ্রী চিত্তরঞ্জন দাস অধিকারী—বলরামপুর, পুরুলিয়া। বিষ্ণুপদ দাস অধিকারী—আস্তি, ঠাকুরবাড়ি। বাদল পণ্ডা, পুরোহিত। চণ্ডীচরণ চক্রবর্তী—বড় আস্তি। প্রণব জানা—বেলাড়। সতীপ্রসাদ (গণেশ) দে—বড়াই।
পথনির্দেশঃ  খড়্গপুর থেকে বারবেটিয়া হয়ে, কিংবা বালিচক থেকে জামনা হয়ে—দুজিপুর। সেখান থেকে ৩ কিমি দক্ষিণে আস্তি ঠাকুরবাড়ি।

- Advertisement -
Latest news
Related news