নিউজ ডেস্ক: ৭০ বছরের হস্তিনীর মৃত্যুর পর উঠে এসেছিল মানুষের লোভ আর মনুষ্যত্ব হীনতার এক মর্মান্তিক ঘটনার কথা। জানা গেছিল মৃত্যুর আগের মুহুর্তেও রেহাই দেওয়া হয়নি বৃদ্ধা হস্তিনীকে। ১০দিন ব্যাপী একটি ধর্মীয় উৎসবে অন্য আরও ৬০টি হাতির সঙ্গেই দিনরাত খাটানো হয়েছিল তাকে। আর পাহাড়ে পর্যটকদের পিঠে নিয়ে তাকেই ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরতে হত। পর্যটকরা তাকেই পছন্দ করত কারন পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে তাকে এতটাই রুগ্ন করে ফেলা হয়েছিল যে তাকে দেখে ভয় করতনা! তারপর সারা বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয় টিকিরি র ছবি যা দেখে আঁতকে উঠেছে বিশ্বের পশুপ্রেমীরা। তীব্র ধিক্কার জুটেছে শ্রীলঙ্কার কপালে। হাতিদের প্রতি এই অমানবিক ব্যবহারে গর্জে উঠেছে সভ্য দুনিয়া। অবশেষে তাই হাতি পালন তথা হস্তি সংরক্ষণে একগুচ্ছ নয়া নিয়ম নিয়ে এল ভারতের পড়শি দেশ।
উল্লেখ্য বছর দুয়েক আগে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে কেগাল্লেতে টিকিরি নামে ওই হাতির মৃত্যু হয়। ঠিকমতো খেতে না পেয়েই টিকিরি অস্বাভাবিক রোগা হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন হস্তি বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত জয়বর্ধনে। জানা যায় শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে আয়োজিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ওই চেহারাতেই নামানো হয় টিকিরিকে।অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সিগিরিয়াতে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানোটাই আকর্ষণ। অনেকদিন থেকেই একটি হাতিকে সেই কাজে ব্যবহার করা হত। দিনের বেশিরভাগ সময়ই পিঠে পর্যটক নিয়ে চলতে হত তাকে। সামান্য বিশ্রামটুকুও মিলত না। রোজকার মতোই সেরকমই বিশ্রাম না নিয়ে নাগাড়ে সে পিঠে মানুষ নিয়ে ঘুরছিল হাতিটি। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবেই পরে হাতিটির মৃত্যু হয়।
শ্রীলঙ্কা সরকার বারবার এই ঘটনার পর এবার হাতি সংরক্ষণে কঠোর হল। হাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী শ্রীলঙ্কায় দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চা হাতিদের কাজ করানো নিষেধ, এছাড়াও তাদের মায়েদের সঙ্গে রাখতে হবে। এছাড়াও হাতি হ্যান্ডলার বা মাহুত, কাজ করার সময় মাদক গ্রহণ করতে পারবে না। হাতির সঙ্গে মাদকাসক্ত থাকা অবস্থায় ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
সম্প্রতি এই নোটিশটি প্রকাশ করেছেন পড়শি দেশের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা প্রতিমন্ত্রী উইমালাবিরা দিসনায়েক । তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি গৃহপালিত হাতির একটি পূর্ণদৈহিক ছবি এবং ডিএনএ বিশদ সহ একটি বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র থাকতে হবে।’ পশুপ্রেমীদের আফসোস টিকিরি মরার আগে যদি সরকার এ বিষয়ে নজর দিতেন তবে এই অমানবিক মৃত্যু অন্ততঃ হতনা তার।