নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনাকালে তছনছ হয়ে যাওয়া শৈশব ও তার পড়ার জগৎ! করোনা শুধু শিশুর স্কুল কাড়েনি কেড়ে নিয়েছে জীবনের সেই মূল্যবান দুটি বছর যা তাকে জীবনে বড় হয়ে ওঠার বহির্বিশ্বের পাঠ। হাজার হাজার অপুরা হারিয়েছে স্বপ্ন মাখা শৈশবের সেই সর্বগ্রাসী প্রকৃতিকে গিলে খাওয়ার ক্ষুধা যা খেয়ে তার মনের গঠন হওয়ার কথা ছিল। অতিমারির কারনে ক্ষুদেদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া জীবনের অতি প্রয়োজনীয় শৈশবকে কিছুটা হলেও বাঁচাতে পেরেছেন অশোক রুদ্রের মত মানুষ ও তাঁর সংগঠন পরিচালিত লকডাউন পাঠশালা। সম্প্রতি তাই নজর কেড়ে নিয়েছে এডুকেশন ওয়ার্ল্ড (Education World) নামক মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি সর্বভারতীয় ম্যাগাজিনের। ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ওই ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যায় তাই দেশের ত্রিশ জন সর্বভারতীয় স্তরের শিক্ষাবিদের সাথে আলোচিত হয়েছে অশোক রুদ্রর নেতৃত্বে লকডাউন পাঠশালার এই বিশেষ উদ্যোগের কথা।
কোভিড সুনামির প্রলয়ঙ্করী ঢেউয়ের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত জনজীবনে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অসম্ভব অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে বা এখনও হয়ে চলেছে সে সম্পর্কে দেশের বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ পন্ডিত রামচন্দ্র গুহের মত ব্যক্তিত্বের প্রবন্ধের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে অশোক রুদ্রদের এই উদ্যোগের কথাও যেখানে করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময় পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য রূপালি রেখা ও ক্রিয়েটিভ কর্মসূচির স্বীকৃতি দিলো।
উল্লেখ্য দেশের একমাত্র কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠনের কার্যক্রম, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির লকডাউন পাঠশালাতে সারা রাজ্যে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রায় একহাজার দল গড়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ীতে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল। এই কর্মসূচি করোনাকালে শিক্ষা ক্ষেত্রে রূপালি দিশা হিসাবে চিহ্নিত করে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র কে এই ত্রিশজন দেশের ক্রিয়েটিভ শিক্ষাবিদের মধ্যে জায়গা দেওয়া হয়েছে একমাত্র রাজনীতিবিদ শিক্ষক হিসাবে।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি ও অশোক রুদ্র বলেন,’এটা একটা অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের কাছে। চ্যালেঞ্জটা হল এই ভয়ঙ্কর অতিমারির মারন খাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শিশুকে রক্ষার করার পাশাপাশি তার শৈশবকে রক্ষা করা। শুধুই প্রথাগত পাঠ নয় তার পাশাপাশি শিশু যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে প্রকৃতির সাথে শৈশবের পাঠ নিয়ে থাকে তাকে অক্ষুন্ন রাখা। আমাদের সংগঠনের শিক্ষক শিক্ষিকারা লকডাউন পাঠশালার মাধ্যমে শিশুদের দুয়ারে শিক্ষা এবং প্রকৃতিকে পৌঁছে দিতে সফল হয়েছেন।’
শ্রী রুদ্র আরও জানান,’ আমরা ছাত্রছাত্রীদের বুনিয়াদি শিক্ষার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ক্রীড়া ও পুষ্টি সামগ্রী বিতরণ করেছি। আমাদের সহকর্মীরা বন্ধুরা নিজেদের বেতনের টাকা থেকে পড়ুয়াদের বই খাতা পেন পেন্সিল থেকে খেলাধুলার সরঞ্জাম সহ নানা দ্রব্য কিনে দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এই কর্মসূচি পালনের জন্য আমরা আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী ও আমাদের অন্যতম অভিভাবক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের সহযোগিতা পেয়েছি।”
শ্রী রুদ্র জানিয়েছেন, বাংলার সেই সমস্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা যেখানে অন-লাইন পড়াশুনা, ভার্চুয়াল পাঠ বাস্তবে স্বপ্নের জগৎ সেই জঙ্গলমহল, ডুয়ার্স, চা বাগান, সুন্দরবন এলাকায় আমাদের ১০০০দল ৫০হাজার শিক্ষক ১৩লক্ষ শিশুকে লকডাউন পাঠশালার আওতায় পাঠ দিয়েছে। উল্লেখ্য করোনাকালীন সময়ে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যরা ৪.১৫কোটি টাকা প্রদান করেছে যা রাজ্যের ২৩টি জেলার ৯২হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নানা ভাবে পুষ্ট করেছে।