নিজস্ব সংবাদদাতা: না, আর চিকিৎসক নন। এবার নবজাতককে দুনিয়া দেখবেন নার্স দিদিমনিরাই! সারা বিশ্বের আধুনিক দেশ গুলির এটাই রোল মডেল, মায়ের প্রসবের পাশে থাকবেন একজন মা অথবা মেয়ে যিনি ধাত্রী বিদ্যায় বিশেষ ভাবে পারদর্শিনী। সম্প্রতি তেমনটাই করতে চাইছে ভারত সরকার আর সেই পথেই এবার হাঁটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গও। এই নিয়ম অনুযায়ী জটিলতাহীন স্বাভাবিক প্রসব বা নর্মাল ডেলিভারি করবেন ধাত্রী বিদ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সরাই। কেবলমাত্র প্রেশার, সুগার, হার্ট বা রক্তের অসুখ, ক্যানসার-সহ নানা সমস্যায় প্রসবে জটিলতার আশঙ্কা থাকলে, তখনই সাহায্য নেওয়া হবে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। রাজ্যের এক স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের মত দেশ যেখানে জন্মের হার অত্যন্ত বেশি যেখানে জন্মকালীন নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয় সেখানে এই পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। এরফলে জন্মকালীন মৃত্যুর হার কিংবা জন্মের পরে পরে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জানা গেছে এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের সহায়তায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ উদ্যোগে চালু হতে চলেছে ন্যাশনাল মিডওয়াফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। রাজ্যে তার প্রধান সেন্টার হল নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল। এখানেই ধাপে ধাপে মায়েদের প্রসব করানোর প্রশিক্ষন দেওয়া হবে রাজ্যের নার্স দিদিমনিদের। এই নার্স দিদিমনিদের প্রশিক্ষন দেবেন বাংলারই কয়েকজন মাস্টার ট্রেনার। যে কারণে ১২ জন বি এস সি এবং তদূর্ধ্ব শিক্ষিত নার্সদের পাঠানো হয়েছে দক্ষিণের রাজ্য তেলেঙ্গনায়। সেখানে তাঁরা ছয় মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণ শেষে ওই নার্সরা রাজ্যে ফিরলেই তাঁদের ধাত্রী বিদ্যায় দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ দেবেন ইউনিসেফ ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং এই বিষয়ে প্রশিক্ষিতরা। সেই প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হলে ওই ১২ জন নার্স হবেন প্রশিক্ষক। তখন তাঁরাই আবার ধাপে ধাপে অন্যান্য হাসপাতালের নার্সদের ধাত্রী বিদ্যার এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবেন।
জানা গেছে ইতিমধ্যেই নার্সদের মাধ্যমে প্রসব করানোর জন্য একটি পৃথক মিডওয়াইফারি লেড লেবার রুমও তৈরি করা হয়েছে নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। দফায় দফায় এখানেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে প্রসব বিদ্যার খুঁটিনাটি জানবেন জেলা এবং অন্যান্য হাসপাতালের নার্স দিদিমনিরা। তারপর তাঁরা ফিরে যাবেন নিজেদের হাসপাতালে। খুব তাড়াতাড়ি রাজ্যের হাসপাতাল গুলিতে প্রথাগত নিয়ম বদলে প্রসবের দায়িত্ব তাঁরাই নিজেদের হাতে তুলে নেবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জটিলতাহীন প্রসবে এটাই বিশ্বের আধুনিক দেশগুলির মডেল। সেই পথেই হাঁটতে চলেছে এবার বাংলাও।
কিন্তু কেন এই পথ? বলা হচ্ছে সাধারণ এবং স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে নার্স দিদিমনিরা যুক্ত হলে জটিলতা যুক্ত প্রসব বা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সিতে অনেক বেশি সময় দিতে পারবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ফলে মাতৃমৃত্যু হার কমানো সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, আটকানো যাবে অপ্রয়োজনীয় সিজার। আর সবথেকে বড় কথা, কর্মী ও চিকিৎসক সঙ্কটে সময়ে সরকারি হাসপাতালে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা প্রসব করানোর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। “বর্তমান প্রথা অনুযায়ী হাসপাতালে আসা প্রতিটি প্রসূতি মায়ের প্রসবের সময় কোনও একজন চিকিসকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। যেখান চিকিৎসক ও রোগীর অনুপাত অত্যন্ত কম সেখানে একজন জটিলতা নিয়ে আসা প্রসূতি মাকে চিকিৎসক কম সময় দিতে পারেন যা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। নতুন পদ্ধতিতে জটিল প্রসবের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বেশি সময় দিতে পারায় মা এবং নবজাতক অনেক বেশি ঝুঁকি মুক্ত হতে পারবেন।” জানালেন রাজ্যের এক স্বাস্থ্য আধিকারিক।