নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র ১রাতের বৃষ্টি আর তাতেই কার্যত জলের তলায় খড়গপুর শহরের মাটি থেকে কংক্রিট। রাত ১০টা নাগাদ শুরু হয়েছিল বৃষ্টি যা শেষ হয়েছে ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ। মাঝে বৃষ্টি কমেছে, বেড়েছে কিন্তু একেবারে থেমে যায়নি। হিসাব অনুযায়ী টানা সাড়ে ৬ঘন্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১০০মিলিমিটার কিংবা তারও বেশি আর তাতেই জলের তলায় খড়গপুর। বুধবার সকাল ৮টা অবধি ঘর থেকে বাইরে বেরুতে পারেননি বুলবুলচটি, সাঁজোয়াল, দেবলপুর, পাঁচবেড়িয়া, ইন্দার সুকান্ত নগর, বিদ্যাসাগরপুর, নিউটাউন, সুভাসপল্লী, ভবানীপুরের একাংশের মানুষ। ইন্দা আনন্দনগর, খরিদা, মালঞ্চ, নিমপুরা, আরামবাটির একাংশ বুধবার বেলা ১২টার পরও জমা জলে বন্দি রয়েছে।
গত প্রায় ৩মাস ধরে বৃষ্টির জলে নাকানি চোবানি খাচ্ছে খড়গপুর শহর। কিন্তু শহরের যে জায়গাগুলোতে বারবার জল জমছে সেই জায়গা গুলো পরিদর্শন করার পর সেখানকার নিকাশি ব্যবস্থাকে উন্নত করার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, মানুষের হয়রানির শেষ হয়নি। রাস্তাঘাট নালানর্দমা মিলে মিশে একাকার হয়ে নোংরা জল ঢুকছে মানুষের উঠোন এমনকি ঘরের ভেতরে। খড়গপুরে যে কোনও পৌর প্রশাসন রয়েছে তা এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ মালুম হচ্ছেনা।
বেলা ১২টার পরও রাস্তা জুড়ে জল থৈথৈ করছে ঝপেটাপুর থেকে পৌরসভা মোড় হয়ে কৌশল্যা কিংবা রেলস্টেশন যাওয়ার রাস্তায়। ওই রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে যাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে, প্রায় হাঁটুর কাছাকাছি জল। রেলকলোনীর ২৮নম্বর ওয়ার্ড ও সংলগ্ন কয়েকটি রাস্তাও পুরো জলে ডুবে যাওয়ার রাস্তা ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। নিমপুরা, আরামবাটি, আয়মার কয়েকটি রাস্তার অবস্থা একই রকম। ইন্দা আনন্দনগরের প্রায় সমস্ত রাস্তাই জলের তলায়। একই অবস্থা মালঞ্চর পেছনের দিক মাঠপাড়াতে। রেল কলোনীর ভেতরে থাকা বেশিরভাগ বস্তির অবস্থাও তথৈবচঃ।
খড়গপুর রেলস্টেশন আবারও জলে থৈ থৈ করছে। স্টেশনের ভেতরে থাকা অধিকাংশ লাইন জলের তলায়। বোগদার দিক থেকে স্টেশনে ঢোকার পুরো চত্বর আগের মতই জলে ডুবে রয়েছে। রেলের এই অংশের জল বেরুনোর একটা বড় নিকাশি হল হাতিগোলা পোল সংলগ্ন এলাকা। কিন্ত এতজল সেখান দিয়ে বেরুতে না পারায় ঠাকুরচক, গোয়ালাপাড়া, বামুনপাড়ার একটা বিস্তীর্ণ অংশ ভাসছে।
একই অবস্থা হয়েছে মেদিনীপুর শহরের নিচু অংশগুলিতেও। সুজাগঞ্জরের নিচের দিকে পালবাড়ি, গণপতিনগর, বকশিবাজার, মহাতাপপুর, নজরগঞ্জের একটি বড় অংশই হাঁটু থেকে কোমর জলের তলায়। ধর্মার রামকৃষ্ণনগর কিংবা হবিবপুরের পেছনে জাতীয় সড়কের দিকের বাড়ি গুলি জলবন্দি হয়ে রয়েছে। শহরের মধ্যেও বিভিন্ন রাস্তায় জল জমেছে এক রাতের বৃষ্টিতে।
যদিও এতেই দুর্যোগের শেষ হচ্ছেনা বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে মঙ্গলবার যে ঘূর্ণাবর্তটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল সেটি এখন গভীর নিম্নচাপ হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি অবস্থান করছে। ফলে বুধবারও সারা দিন কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে জোরালো বর্ষণ শুরু হয়। তার লক্ষণও মিলছে। বুধবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে ঝিরিঝিরি। মাঝে মধ্যে আকাশ একটু ফাঁকা হলেও ফের আকাশ ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, সুস্পষ্ট নিম্নচাপের জেরেই এমন পরিস্থিতি। এর প্রভাব আগামী ২৪ ঘণ্টা চলবে। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের কয়েকটি জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সব মিলিয়ে শনি কাটছেনা খড়গপুর মেদিনীপুরের। খড়গপুরের জলছবিগুলি অচিন্ত্য ত্রিপাঠী, জাহির চৌধুরী, গোবিন্দ রাজু এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া।