নিজস্ব সংবাদদাতা: দিনের শেষ বিঁড়াটা ঝাড়তে গিয়ে হাত দুটো মাথার উপরেই থেকে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর- ২ ব্লকের পলশা গ্রামের নিবারন মাইতির। সন্ধ্যা তখন পৌনে ছ’টা। একটা জ্বলন্ত অগ্নিবলয় পুব আকাশে ছুটে যাচ্ছে। তার পেছন দিয়ে আগুনের সাথে উদ্গীরন হচ্ছে ধোঁয়া। মুহুর্তে হাতের বিঁড়া ফেললে মোবাইল নিয়ে ছবি তুলতে ছুটল নিবারন।
ততক্ষনে মানিকপুর, গোকুলপুর, সাঁকোয়া, ধনেশ্বরপুর, রাউতমনি, আমলপুর, মাওয়া, মাদপুর থেকে শুরু করে ফাঁকা জায়গায় ছু্টছে ডেবরা, পিংলা, সবং, ঘটালের গ্রাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা, কেজিপি বাংলার দপ্তরে এসে পৌঁছেছে ১৪ টি ভিডিও ফুটেজ ও চল্লিশটি ছবি। কেউ বলছে ধূমকেতু কেউ বলছে উইফো বা আন আইডেন্টিফায়েড ফ্রাইং অবজেক্ট (UFO).
যদিও শুধুই পশ্চিম মেদিনীপুর নয় পরে জানা গেল দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জায়গার আকাশেই দেখা পাওয়া গেছে ওই অবাক আলোর। যাকে নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে জেলায় জেলায়। অনেকে জানিয়েছেন ধূমকেতুর মতো আকারের এই আলো ক্রমশ সরেছে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে। স্থানভেদে আলোর স্থায়িত্ব ছিল ৩ – ৫ মিনিট।
দিগন্তবিস্তৃত আকাশে প্রথমে পশ্চিম দিকে দেখা যায় এই আলো। ক্রমশ আলোর উৎস পূর্ব দিকে সরতে থাকে। পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও হুগলির আরামবাগ, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ থেকে এই আলো দেখা গিয়েছে। আলোর উৎসের উচ্চতা ছিল বেশ।
প্রথমে ধাঁধায় ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেছিলেন, এই আলোর ৩টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত এই আলো উল্কাপাতের কারণে হতে পারে। কারন এখন উল্কাবৃ্ষ্টি হচ্ছে। তবে সেটা সন্ধ্যা নয়, রাত ১২টা নাগাদ হয়। কিন্তু, এটা দেখে মনে হচ্ছে আলোর আকার কিছুটা বড়। দ্বিতীয়ত কারও কারও মতে এটা ছিলরকেটের কোনও অংশ। কারন তাঁরা মনে করছিলেন আলোটি বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে গিয়েছে। তাঁরা বলেন দেখে মনে হচ্ছে, কোনও রকেটের জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছে। তারই একটি ছোট অংশ পৃথিবীর দিকে আসছে। সেই অংশটি আকারে ছোট বলেই তার আলো তত উজ্জ্বল।’’ তৃতীয় সম্ভাবনাটি ছিল, কোনও জায়গা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়ে থাকতে পারে। এটা তারই আলো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই অবশ্য এই তৃতীয় বিষয়টিকেই নিশ্চিত করল ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ” এটি অগ্নি ফাইভ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আলো। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের জন্য অগ্নি ৫ মিসাইল সর্বোচ্চ পাল্লায় উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। ওড়িশার হুইলার্স আইল্যান্ড থেকে ছোড়া হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। যার পাল্লা ৫,০০০ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিপুনভাবে আঘাত হেনেছে ক্ষেপণাস্ত্রটি। এর ফলে চিনের প্রায় সব শহর ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার ভিতরে চলে এল। আসলে দিনের আলোর তীব্রতায় যা সহজে নজরে পড়েনা তাই সহজে ধরা পড়েছে শীতের ছোট হয়ে যাওয় বেলায়।