নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশের মধ্যবিত্ত ও গরিব মেধাবী পড়ুয়াদের নিজের অঙ্গনে পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ভারতের কারিগরী বিদ্যার সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur)। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ‘আইআইটি খড়গপুরে পড়তে ইচ্ছুক এমন ১০০জন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের তাঁরা বৃত্তি প্রদান করবে।’ স্বাভাবিকভাবেই আইআইটি কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণা আশার আলো জুগিয়েছে সেই সব ছেলে মেয়েদের মধ্যে যাঁরা দেশের অন্যতম ব্যয়বহুল এই প্রতিষ্ঠানটিতে পড়ার স্বপ্ন দেখেন কিন্তু অর্থাভাবে পড়ার কথা ভাবতে পারেননা। আদতে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত অনেকটাই বিনা খরচে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ বলা যেতে পারে।
আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে
সর্বভারতীয় স্তরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্সড (Joint Entrance -Avanced ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম একশো জন সেই সব শিক্ষার্থী যাঁদের পারিবারিক আয় ২০লক্ষ টাকার নিচে তাঁরা যদি আইআইটি খড়গপুরে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাহলে তাঁদের একটি স্কলারশিপ (Scholership)বা বৃত্তি প্রদান করা হবে যেই টাকায় তাঁরা আইআইটি খড়গপুরে পড়ার খরচ বহন করতে পারবেন। যদিও এই টাকার পরিমান ঠিক কত তা বলা হয়নি তবে এটিকে বলা হচ্ছে সম্পূর্ণ বৃত্তি বা Full Ride Scholership’ যার অর্থ পড়াশুনার যাবতীয় খরচ মেটাবে এই স্কলারশিপ। এখানে যাবতীয় খরচ বলতে টিউশন ফিজ ছাড়াও হোস্টেল খরচ, বইপত্র ও পাঠ্য সরঞ্জাম, গেজেট ইত্যাদি সমস্ত খরচের কথা বলা হচ্ছে।
সাধারণভাবে বর্তমান বাজার মূল্যে আইআইটি খড়গপুরের পড়তে গিয়ে চার বছরের বি.টেক (B.Tech) কোর্সটি সম্পূর্ণ করতে মোটামুটি ভাবে ১৫ থেকে ১৬লক্ষ টাকা খরচ হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই পরিমাণ বৃত্তিই দেওয়া হবে পড়ুয়াকে। আইআইটি তার ৭১তম প্রতিষ্ঠা দিবসেই এই ঘোষণা করেছে। আইআইটি খড়গপুর ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তিওয়ারি বলেছেন, বাংলার তথা দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে এই স্কলারশিপের নাম করন করা হয়েছে যার পোশাকি নাম হল, ‘পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফুল স্কলারশিপ ফর টপ হান্ড্রেড জে.ই(আ্যডভান্স) র্যাঙ্কারস’ বা ‘Pandit Ishwar Chandra Vidyasagar Full Scholarship for Top JEE (Advanced) Rankers’ এই স্কলারশিপ দেশ জুড়ে প্রান্তিক অঞ্চলের নতুন মেধার অন্বেষণ করবে।
খড়গপুর আইআইটির অ্যলুমনি অ্যাফেয়ার্স এন্ড ব্রান্ডিং বিভাগের সহকারী ডিন অধ্যাপক সূর্যকান্ত পাল জানিয়েছেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল বহু পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিপুল পরিমাণ খরচের জন্য খড়গপুর আইআইটিতে ইচ্ছা ও যোগ্যতা থাকলেও পড়া সম্ভব হয় না। অথচ এঁরা এই শিক্ষা পেলে দেশ ও সমাজের প্রচুর উপকার হবে। আর বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলে এঁরা অনেকটা চিন্তা ও চাপ মুক্ত হয়ে মনোনিবেশ করতে পারবেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন এই প্রচেষ্টা সম্ভবত গোটা দেশে খড়গপুর আইআইটিতে প্রথম চালু হচ্ছে। পথ দেখাচ্ছে আইআইটি।
বাস্তবিকই এই স্কলারশিপ গোটা দেশে নজির করেছে যার পেছনে রয়েছেন খড়গপুর আইআইটির প্রাক্তনীরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আইআইটি খড়গপুর আ্যলামনি বা প্রাক্তনীরাই নিচ্ছেন এই স্কলারশিপের আর্থিক দায়ভারের একটি বড় অংশ। করোনা কালে আইআইটি খড়গপুরের ওপর নির্ভরশীল রিক্সাওয়ালা, পরিচারিকা, মেসবয়, দোকান কর্মচারী সহ প্রায় ১০হাজার পরিবারকে নিয়মিত রেশন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য জুগিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিলেন এঁরাই। এবার দেশের মধ্যবিত্ত ও দুঃস্থ পরিবারের মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য বিশ্বমানের এই প্রতিষ্ঠানের দুয়ার খুলে দিচ্ছেন তাঁরাই।