নিজস্ব সংবাদদাতা: সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। মোদী রাজ্যের ভোট বলে কথা তাই জোর কদমে চলছে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে প্রচার। রবিবার সেই উন্নয়নের ফানুস ফুটো করে ভেঙে পড়ল গুজরাটের মরবি ঝুলন্ত সেতু। রাত ১১ টা অবধি উদ্ধার হয়েছে ৯১টি মৃতদেহ। এখনও কত দেহ জলের তলায় আর কতই বা ভেসে গেছে বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে গত সাত মাস ধরে মেরামত কাজ চালানোর পর মাত্র ৪ দিন আগেই জনগনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল ১৪০ বছরেরও বেশি পুরনো এই সেতুটি। তার আগে সেতুটি চলাচলের জন্য উপযুক্ত বলে সার্টিফিকেট দিয়েছিল গুজরাটের পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা! গোটা ঘটনায় মুখ পুড়েছে গুজরাট সরকারের। মৃতদের উদ্দেশ্যে ক্ষতিপূরণ ঘোষনা করে তড়িঘড়ি তদন্তের আদেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। মৃতদের উদ্দেশ্যে শোক জ্ঞাপন করে ক্ষতিপূরণ ঘোষনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর তরফেও শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৪২ মিনিট নাগাদ। আমেদাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে এই মাচ্ছু নদীর দু’ পাড়ে ছট পূজো উপলক্ষ্যে ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছিলেন সদ্য খুলে দেওয়া সেতুটির ওপর দিয়ে। প্রায় ৫০০ লোক নিয়ে ৭৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু লোহার কেবল ছিঁড়ে জলে পড়ে যায়। সংবাদমাধ্যম ANI-তে প্রকাশিত ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সেতু ভেঙে মাচ্ছু নদীতে পড়ে যান অনেকে। কেউ সাঁতার কেটে প্রাণরক্ষা করার চেষ্টা করছেন, কেই ঝুলন্ত ব্রিজের দড়ি ধরে ঝুলে রয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। ঘটনা চক্রে ভোটের মুখে নানা সরকারি প্রচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজের রাজ্য গুজরাটেই ছিলেন।
জানা গেছে ১৮৭৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের গভর্নর রিচার্ড টেম্পল ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। ১৮৮০ সালে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময় এই সেতু তৈরির যাবতীয় উপকরণ ইংল্যান্ড থেকেই আমদানি করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজ চলেছে প্রায় ৭ মাস ধরে। ওধভজি পটেলের মালিকানাধীন ওরেভা গ্রুপকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে ২৬ অক্টোবর সেতুটি চালু করা হয়। বেসরকারি ভাবে জানানো হয়েছে ঘটনার পর থেকে একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার হতে হতে রাত ১১ টা অবধি সংখ্যাটা ৯১ এ দাঁড়িয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি। অন্তত আরও ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনার পরই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যাতে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকমভাবে সাহায্য করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় বিধায়ক ললিত অভিযোগ করেছেন অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এই সেতুর সংস্কারের জন্য।