Saturday, May 18, 2024

West Midnapur: চলে গেলেন তপন ভট্টাচার্য, তেমাথানি, মোগলানিচকের দেবতা ! গরিবের ডাক্তাররের অকাল প্রয়ানে কাঁদছে সবং

- Advertisement -spot_imgspot_img

শশাঙ্ক প্রধান : পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার মোগলানিচকের ঘরে ঘরে যেন মহরমের শোক। বুক চাপড়ে কাঁদছেন যুবক বৃদ্ধ মহিলারা। যেন ইন্তেকাল হয়েছে কোনও পীরজাদার। শুধু মোগলানিচক নয়, তেমাথানি থেকে শুরু করে সমগ্র দেভোগ, পার্শ্ববর্তী গ্রামীন খড়গপুর, পিংলা ও নারায়নগড় থানার সংলগ্ন এলাকার মানুষের গরিবের ‘মসিহা’ ছিলেন ডাক্তার তপন কুমার ভট্টাচার্য। রাত ২টাতেও কল করলে বাড়িতে পৌঁছে যেতেন তিনি। খুব গরিব মানুষের কাছ থেকে পয়সা তো নিতেনই না উল্টে ওষুধ পথ্য কেনার পয়সা গুঁজে দিতেন হাতে। এ হেন মানুষটিকে হারিয়ে শোক যেন আছড়ে পড়েছে সবংয়ের গ্রামে গ্রামে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বড়মা হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ডাক্তার তপন কুমার ভট্টাচার্যের। সবে ৭০ পেরিয়েছিলেন তিনি। তার আধঘন্টার মধ্যেই সেই মর্মান্তিক খবর ছড়িয়ে পড়ে মোগলানিচক, তেমাথানিতে। আপাদমস্তক সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মোগলানিচকের হেঁসেল থমকে গেছে খবরটা পেয়েই। খবরটা পেয়েই হাঁড়ি চড়েনি অনেকের ঘরে। যাঁরা রান্না চাপিয়েছিলেন, রান্না রয়ে গেছে তেমনই। কুটোটি কাটেনি অনেকেই। ঘরে ঘরে তখনও একটাই কথা না মুনকিন, হতেই পারেনা। এই তো গতকালও মাঠে ফুটবল খেলে গেছেন!

মোগলানিচক আজাদ ক্লাবের সম্পাদক সেক মইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আমাদের সমস্ত টুর্নামেন্ট আর বাৎসরিক রক্তদান শিবিরের উদ্বোধক থাকতেন তিনি। খেলাধুলায় আমাদের নিরন্তর উৎসাহ দিতেন এবং নিজে নিয়ম করে জার্সি পরে মাঠে নামতেন। রাতে ভিতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাকলেই ছুটে আসতেন ঘরে। চিকিৎসার জন্য পয়সা নিতেন নামমাত্র আর যাঁর পয়সা নেই তাঁকে পয়সা দিতেন ওষুধ পথ্য কেনার জন্য। আমাদের এলাকার মানুষের কাছে উনিই পীর, উনিই দেবতা। এলাকার গরিব দুঃস্থ মানুষগুলোর তাঁকে হারিয়ে আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম।’

সবং স্পোর্টস আ্যশোসিয়েশনের সহসভাপতি তথা শিক্ষক পার্থপ্রতিম মাইতি জানিয়েছেন, ‘আমাদের আ্যশোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ডাক্তারবাবু। ১৯৯৪ সাল থেকে একাধিক বড় বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব নিয়েই কাজ করে এসেছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষদের উৎসাহ দিতেন শরীর চর্চা ও যুবকদের খেলাধুলা করার জন্য। নিজে প্রতিদিন ব্যায়াম করতেন এবং এই বয়সেও ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতেন। গরিবের জন্য তাঁর চেম্বার ছিল সব সময় খোলা।”

তেমাথানির বাসিন্দা সমাজসেবি তথা তৃনমূল নেতা বিপুল মাইতি বলেন, ‘আমি তো স্বপ্নেও ভাবতে পারছিনা কাকে হারালাম আমরা। এই বয়সে এমন গুনী মানুষের মৃত্যু আমাদের শূন্য করে দিয়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবতেও পারিনি।’                                                                                           সবংয়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভূঞা বলেন, “আমি হতবাক হয়ে গেছি খবরটা শুনে। ও আমার খুব কাছের মানুষ ছিল। নিজে খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করত। একবারও বুঝতে পারেনি যে ওর হৃৎযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে! গোটা তেমাথানি ওকে হারিয়ে আজ হাপুস নয়নে কাঁদছে। এমন অনাথবন্ধু মানুষটির প্রয়ানে আমি মর্মাহত। ওঁর পরিবারের সদস্যদের আমার আন্তরিক সমবেদনা। আমি পরিবারের পাশে আছি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ডিএমএস পাশ করার পর এ্যলোপ্যাথি চিকিৎসাবিদ্যা রপ্ত করেন ডাক্তার তপন কুমার ভট্টাচার্য্য। নিজের বাড়িতেই চেম্বার করে চিকিৎসা করতেন। গরিব মানুষের কথা ভেবেই সেখানেই প্রসবের সুযোগ সুবিধাও রেখেছিলেন। দিনরাত চিকিৎসা পরিষেবাই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান। স্ত্রী ছাড়াও রেখে গেলেন দুই কৃতি সন্তান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল ও চিকিৎসক অনিরুদ্ধকে। আর রেখে গেলেন অগণিত সেই সব যুবকদের যাঁরা আজ তাঁর আদর্শকেই জীবনের আদর্শ মেনে মানব সেবার শপথ নিচ্ছে।

- Advertisement -
Latest news
Related news