Saturday, July 27, 2024

CBI On SSC Recruitetment: এস.এস.সিতে সিবিআই! আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়ালদের

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: “কিছু লিখতে হবেনা, শুধু নাম রোল নম্বর লিখে সাদা খাতা জমা দিয়ে আসবেন। সিল করা উত্তরপত্রের নিচের অংশ খুলে উত্তর লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পরীক্ষকদের কাছে।” স্কুল সার্ভিস কমিশনের লেটেস্ট রেট যাচ্ছিল ১৬লাখ। মাস চারেক আগে এরকমই এক অডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার এক দালাল কথা বলছিলেন এক ফেল করা ক্যান্ডিডেটের সঙ্গে। শেষ অবধি ১৪ লাখ অবধি নেমেছিল ওই দালাল। কলকাতা হাইকোর্টেরও পর্যবেক্ষণ এরকমই দুর্নীতি হচ্ছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে। আর এটা যে হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে কমিশন বনাম পর্ষদের হলফনামায়। কমিশন বলছে, আমরা নিয়োগের সুপারিশ করিনি আর পর্ষদ বলছে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই নিয়োগ হয়েছে। যে কারনে স্কুলে গ্রূপ-ডি বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ মামলায় সিবিআইয়ের হাতে প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধানের ভার দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

সোমবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ জানায়, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের হলফনামা অনুসারেই পরিষ্কার, ওই নিয়োগ অস্বচ্ছ ভাবে হয়েছে। এবং এর পিছনে আর্থিক বিষয়ও জড়িত। যে হেতু দু’টি সংস্থাই রাজ্যের তাই এই মামলার অনুসন্ধান করবে সিবিআই। আদালত এও বলেছেন যে, সিবিআই আগামী ২১ ডিসেম্বর সিবিআই প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে। তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আদালত। ফলে আপাতত বলাই যায়, শিক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে কি না এখন তা খতিয়ে দেখবে সিবিআই।

ঘটনায় রীতিমত আতঙ্কে রাজ্য সরকার। সেই আতঙ্ক কতটা তা স্পষ্ট হয়ে গেছে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বলেন, “অনুরোধ করছি সিবিআই দেবেন না। রাজ্যের পুলিশের উপর এক বার ভরসা করা হোক। রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ নেই যে তারা যথাযথ তদন্ত করেনি। সিবিআই তদন্ত একটা সময় গিয়ে থেমে যায়।” তিনি আরও বলেন, “যে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিয়ে তদন্ত করালেও অসুবিধা নেই।” পুলিশ তদন্ত নিয়ে রাজ্য হলফনামা জমা দিতে চায় বলেও আদালতে জানিয়েছেন এজি।

এদিন সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করার প্রানপন চেষ্টা করেছেন রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একাধিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তা শুনে বিচারপতি মন্তব্য করেন, “আপনার যা বলার আছে তার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেব। কেন বুঝতে চাইছেন না আপনারা মামলায় হেরে গিয়েছেন। আপনাদের হলফনামা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়নি। আমি এর তদন্তের জন্য সিবিআই ঠিক করে নিয়েছি।”

এরপরই বিচারপতি বলেন, “যে হেতু এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে, তাই রাজ্যের কোনও সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা যাবে না।” আদালত আরও জানিয়েছে, সিবিআই-কে একটি তদন্তকারী দল গঠন করতে হবে। ওই দলে মাথায় একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর এবং ডিআইজি বা এসপি মর্যাদার কোনও অফিসার থাকবেন। শুধু তাই নয়, দলে থাকা কোনও অফিসার তদন্ত চলাকালীন বেরিয়ে যেতে পারবেন না। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ২১ ডিসেম্বর আদালতে জমা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

উল্লেখ্য ২০১৯ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রচুর নিয়োগ হয়েছে বলে মামলা দায়ের হয় আদালতে। প্রাথমিক ভাবে ওই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল কমিশনের বিরুদ্ধে। কিন্তু গত বুধবার কমিশন আদালতে জানায়, ওই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও সুপারিশ তারা করেনি। এমনকি, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে তারা একটি হলফনামাও জমা দেয়। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এসএসসি যদি সুপারিশ না করে, তবে ওই নিয়োগ হল কী ভাবে? আর এতেই জড়িয়ে পড়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নাম। তবে বৃহস্পতিবার আদালতে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন পর্ষদের আইনজীবী। তিনি জানান, পর্ষদ নিজে থেকে কোনও নিয়োগ করেনি। কমিশনের সুপারিশ মেনেই হয়েছে যাবতীয় নিয়োগ। ফলে শুনানি কক্ষেই কমিশন এবং পর্ষদের মধ্যে একে অপরের প্রতি দোষারোপের পালা শুরু হয়ে যায়।

অবশ্য শুধুই চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারীই নয় শিক্ষক নিয়োগেও বহু প্রশ্ন উঠে আসছে। অভিযোগ নিয়োগ দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটে ভরে রেখেছে চুনোপুঁটি থেকে রাঘববোয়াল নেতারা। আর যে কারনে কাকে নিয়োগ দেবে আর কাকে নয় তাই নিয়ে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়ে আছে। তাই নিজেরাই নিজেদের লোক দিয়ে মামলা করে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে রেখেছে। কারন যাঁদের নিয়োগ হবেনা তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেননা। সিবিআই তদন্ত হলে এসবই উঠে আসতে পারে।

এদিকে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিদ্যালয় প্রধানদের সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসস। সংগঠনের
রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেছেন,
হাইকোর্টের এই রায় কে আমরা স্বাগত জানাই।উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

- Advertisement -
Latest news
Related news