নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন টিট ফর ট্যাট। তুমি চল ডালে ডালে তো আমি চলি পাতায় পাতায়। কেশপুরের তৃনমূল সমর্থক পরিবারগুলির দায়ের করা মোট ৩টি মামলায় সিপিএম নেতৃত্বকে এলাকা ছাড়া করে দিয়েছিল তৃনমূল কংগ্রেস। এবার সেই একই কায়দায় তৃনমূলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করল বিজেপি সমর্থকরা। ২০২১ ভোট পরবর্তী একটি খুনের মামলায় কেশপুরের প্রায় সমস্ত নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল এক বিজেপি নেতার পরিবার। বলা বাহুল্য আগের মামলাগুলি যেমন তৃনমূল নেতাদের পরামর্শেই তাদের সমর্থক পরিবারগুলি করেছিল এক্ষেত্রেও বিজেপি সমর্থক পরিবারটিও তাদের নেতাদের পরামর্শেই এই কাজ করেছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছিল ২রা মে। গত আগষ্ট মাসে মৃত্যু হয় কেশপুরের সুশীল ধাড়ার। বিজেপি নেতা সুশীল ধাড়াকে কইগেড়িয়ার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী বাজারে। সেখানে একটি চা দোকানে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ২লক্ষ টাকা জরিমানার পাশাপাশি তৃণমূলে যোগ দিতে বলা হয় সুশীলকে। সুশীলের মেয়ে সঙ্গীতা ধাড়া চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘বাবা ওই শর্ত মানতে রাজি না হওয়ায় বেধড়ক মারধর করা হয়। দু’দিন তাঁকে হাসপাতালে নিয়েই যেতে দেওয়া হয়নি। এরপর কোনও ভাবে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় বাবার। বাবার দেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে দুস্কৃতিরাই দাহ করে দেয়। সঙ্গীতা আরও অভিযোগ করেছেন যে কেশপুর থানার পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয়নি শুধু তাই নয়, পুলিশ আধিকারিকও তাঁর বাবাকে এক সময়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
এই মামলায় তৃনমূলের কেশপুর ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জয় পান, বর্তমান সভাপতি উত্তমানন্দ ত্রিপাঠী সহ কেশপুর ব্লকের ১৪টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার ১৩ জন অঞ্চল সভাপতিকে যুক্ত করার পাশাপাশি কেশপুর তৃনমূলের সিংহভাগ বুথ সভাপতিকেই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার দিক থেকে অভিনব অভিযোগ পত্রে মোট ১২১ জন তৃনমূল নেতা-কর্মীর নাম জড়িয়েছে। যদিও এখানেই থেমে নেই অভিযোগকারিনী। এর বাইরেও অনেকে আছেন বলে তিনি অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন। উল্লেখ্য আদালতের রায়ে ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত মামলা গুলির তদন্তভার CBI নিয়েছে। খড়গপুর শহরে একটি ক্যাম্প করে অভিযোগকারীদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে CBI আধিকারিকরা। এই মামলায় ইতিমধ্যেই ৯ জনকে সমন পাঠিয়েছে CBI. ঘটনায় রীতিমত তটস্থ তৃনমূল নেতাকর্মীরা। কখন কাকে গ্রেফতার করে বসে CBI.
এই ঘটনায় যেন তৃণমূলেরই পুরানো কৌশল রপ্ত করতেই দেখা গিয়েছে। ২০১৪ সালে কেশপুরে খুন হয়েছিলেন তৃনমুল কংগ্রেস থেকে নির্বাচিতা জেলাপরিষদ সদস্যা কাকলী বরদোলাই। সেই ঘটনায় ২২টি গ্রামের ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল মৃতা কাকলীর পরিবার। এর আগে ২০১১ জুন মাসে বেনাচাপড়া কঙ্কাল উদ্ধার কান্ডে মামলা হয়েছিল সুশান্ত ঘোষ সহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই আরও একটি মামলায় ফের প্রায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে তৃনমূল। কিন্তু তৃনমূলের এই ৩ মামলার সম্মিলিত রেকর্ড ভেঙে দিল কেশপুরের এক বিজেপি সমর্থক পরিবারের দায়ের করা মামলা। পরিবারের প্রধান এক বিজেপি নেতাকে খুন করা হয়েছে দাবি করে কেশপুর তৃনমূলের সর্বস্তরের মোট ১২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল পরিবারটি। একটি মামলায় এতজন অভিযুক্ত নিয়ে একটি রেকর্ডও করল মামলাটি।