নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির ট্রেন দুর্ঘটনায় এখনও অবধি ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনায় প্রায় ৫০জন আহত হয়েছেন। এর বাইরেও বেশ কয়েকজন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরার মধ্যে আটকে রয়েছেন।

রেলসূত্রে জানা যাচ্ছে পটনা থেকে গুয়াহাটিগামী দুর্ঘটনাগ্রস্ত ১৫৬৩৩ আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ওই সময় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। হঠাৎ ট্রেনের ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। ইঞ্জিনের পর থেকে লাইনচ্যুত হওয়া ওই ১২টি কামরাই দুর্ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৭টি কামরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক বাবে জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনটি ছাড়ার সময় তাতে প্রায় ৭০০ যাত্রী ছিলেন। পরে বিভিন্ন স্টেশন থেকে যাত্রীরা নামা-ওঠা করেন। এই দুর্ঘটনার জেরে অনেক যাত্রীর প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখনও অবধি আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে এবং ১৬ জনকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের আঘাত সামান্য। রেল এই ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রথম দিকে আহত যাত্রীদের প্রাথমিক ভাবে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে সেখানকার পরিকাঠামো উপযুক্ত না হওয়ায় সেখান থেকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে আহতদের স্থানান্তরিত করা হয়। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ব্লক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এবং নার্সদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫০টিরও বেশি অ্যাম্বুল্যান্স রওনা দিয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু প্রথমে তিন জনের দেহ উদ্ধারের কথা জানালেও পরে আরও ৫টি দেহ উদ্ধারের কথা জানায় জেলা প্রশাসন। অন্ধকার নেমে যাওয়ায় উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় আলো এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মেডিক্যাল কলেজের দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। ইতিমধ্যে গ্যাসকাটার দিয়ে ট্রেনের বগি কেটে যাত্রীদের উদ্ধার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আলীপুর দুয়ার থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন রওনা হয়েছে। ৫২টি অ্যাম্বুলেস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্ধকার নেমে আসায় জেনারেটরের মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা একলব্য চক্রবর্তী বলেছেন, এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো উদ্ধারকাজ চলছে। ইতিমধ্যে ট্রেন থেকে ৪০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। রেল মন্ত্রণালয় প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, গুরুতর আহত ব্যক্তির পরিবারকে ১ লাখ ও সামান্য আহত ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় প্রশাসনকে সমস্ত রকম সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।