শশাঙ্ক প্রধান: চিকিৎসার সুযোগই পাওয়া গেলনা। শরীর খারাপ লাগছে বুঝতে পেরেই তাঁর কাছে এগিয়ে আসার ইঙ্গিত করেছিলেন সহকর্মীকে কিন্তু তার আগেই ঝুঁকে পড়লেন নিজের টেবিলেই। দু’মিনিটের রাস্তা হাসপাতাল, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর কর্মীরা। গোটা ঘটনাই এত দ্রুত ঘটে গেল যে কেউ কিছু বুঝে উঠতেই পারছেনা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, সোমবার।
একটি সূত্র মারফৎ জানা গেছে মৃত সহকারি লাইব্রেরিয়ানের নাম অশ্বিনী মাসান্ত। মাত্র বছর খানেক আগেই এই চাকরিতে যুক্ত হয়েছিলেন ৩১বছরের অশ্বিনী। পড়াশুনায় বরাবরই তুখোড় অশ্বিনীর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার অন্তর্গত মুন্ডুমারী বাস স্ট্যান্ডের ওপরেই। বাবা অমল মাসান্ত মুন্ডুমারী বাজারের ওপরেই একটি মুদি দোকান চালাতেন। বছর দু’য়েক সেই দোকান বন্ধ করে দেন ছেলে প্রথম চাকরি পাওয়ার পর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অশ্বিনী ২ বছর আগে প্রথম একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন। সেই চাকরি করার সময়েই আইআইটি খড়গপুরে (IIT Kharagpur ) আ্যসিসটেন্ট লাইব্রেরিয়ান পদের জন্য পরীক্ষা দেন। মেধাবী ছাত্র হওয়ার জন্য সহজেই সেই পদে নিয়োগ পেয়ে যান তিনি। তারপর এখানে যোগ দেন। বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতেন তিনি। কখনও সখনো থেকে যেতেন আইআইটি ক্যাম্পাস লাগোয়া মামা বাড়িতে।
অশ্বিনীর এক সহকর্মী জানিয়েছেন, ” মাসান্ত এদিনও নিয়মমতই কাজ করছিলেন নিজের টেবিলে বসে। এখন আমাদের ক্যাটালগিং থেকে বই ইস্যু সবই ডিজিটাইজ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। তাছাড়া এক বিশাল সংখ্যক ডিজিটাল লাইব্রেরি সামলাতে হয় আমাদের। এরই কিছু কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎই হয়ত অসুস্থতা বোধ করায় হাতের ইশারায় ডাকেন এক সহকর্মীকে। সেই ইশারা মত এগিয়েও যান ওই সহকর্মী কিন্তু ততক্ষণে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়েছিলেন মাসান্ত। বাকিরা ছুটে এসে দেখেন জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। সাথে সাথে ডাকা হয় আ্যম্বুলেন্স। ট্রমাকেয়ার আ্যম্বুলেন্স করেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মাত্র ১কিলোমিটার দুরে ক্যাম্পাসের বি.সি.রায় হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকরা পরীক্ষা করেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আফসোস একটাই যে চিকিৎসা করার সুযোগই পাওয়া যায়নি।”
গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পিংলার মুন্ডুমারী এলাকায়। এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, ‘কোনও সাতে পাঁচে না থাকা শান্ত শিষ্ট ছেলে অশ্বিনী। ছিলনা সাধারণ পান সিগারেটের মত নেশাও ছিলনা তাঁর। বাবার দুই সন্তানের মধ্যে অশ্বিনী বড়, বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে বাবা-মার অবলম্বন ছিল অশ্বিনীই। বাবার স্বাস্থ্য খুব ভালো না যাওয়াতেই ছেলে চাকরি পাওয়ার পরই নিজের দোকানটি বন্ধ করে দেন। হয়ত এই বয়সে ফের তাঁকে দোকান খুলে বসতে হবে।” কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা অবশ্য এখুনি বলতে রাজি নন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা স্টোক থেকেই এটা হয়ে থাকতে পারে অথবা ম্যাসিভ হার্ট আ্যটাক। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে আসল কারন।