নিজস্ব সংবাদদাতা: তিন তিনবার পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ সরকারকে মুচলেকা দিয়েছিলেন, আমাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হোক বলে। চিঠিতে বলেছিলেন, ভারতে ইংরেজ শাসনের পক্ষেই থাকবেন। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে ওই মুচলেকা দিয়েই মুক্তি পাওয়ার পর ভারতীয় বিপ্লবীদের বিপক্ষেই আচরণ করেছেন তিনি। বিপ্লবীরা যখন আন্দামান জেলে পচছেন তখন ওই মুচলেকার জেরে তিনিই একমাত্র বন্দি যিনি মেয়াদ শেষের আগেই দিপান্তর থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

এ হেন ‘বিপ্লবী’ সভারকারের ছবি ঠাঁই পেয়েছে স্বাধীনতার ৭৫বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্টোরিকাল রিসার্চ বা ICHC বানানো ডিজিটাল পোষ্টারে কিন্তু বাদ গিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী আবুল কালাম আজাদ আর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ছবি। আর তাকে ঘিরেই ফের একবার জাতীয় বিতর্ক চরমে উঠেছে।
সম্প্রতি ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে ডিজিটাল পোস্টার লঞ্চ করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্টোরিকাল রিসার্চ। সেই পোস্টারে ঠাঁই হয়নি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর। আর এই বিষয়টি নিয় বেজায় চটেছএন কংগ্রেসের নেতারা। শশী থারুর থেকে জয়রাম রমেশ, সবাই এই প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন। এদিকে কাউন্সিলের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই বিতর্ক অহেতুক। অতকিছু ভেবে পোস্টারের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখ বেছে নেওয়া হয়নি। কাউন্সিলের সচিব কে রতনম দাবি করেন, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে তুল্যমূল্য করা তাঁদের লক্ষ্য নয়।
‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে প্রকাশিত ডিজিটাল পোস্টারটির স্ক্রিনশট প্রথমে কংগ্রেস নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে। তাতে দেখা গিয়েছে, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, ভগত সিং, বিআর আম্বেদকর, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মদন মোহন মালভিয়া, ভিডি সাভারকরদের চেহারা রয়েছে। তবে সেখানে নেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু কিংবা আবুল কালাম আজাদের প্রতিকৃতি।
এরপরই জয়রাম রমেশ এই পোস্টারের বিরোধিতায় সরব হন। দলের মুখপাত্র গৌরব গগৈ এই পোস্টারকে ‘হীনচেতা’ এবং ‘অনৈতিক’ বলে আখ্যা দেন। টুইট করেন শশী থারুরও। লেখেন, ‘এটা শুধু হীনচেতা বরং এর কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। ভারতীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া নেতা ছিলেন জওহরলাল নেহরু। এই কাজ করে আইসিএইচআর ফের একবার নিজেকে অসম্মান করেছে। এটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে।’
গৌরব গগৈ এই বিষয়ে বলেন, ‘এভাবে পণ্ডিত নেহরু এবং আবুল কালাম আজাদের মুখ সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অনৈতিক কাজ করেছে আইসিএইচআর। ভারত কখনও ভুলবে না যে আরএসএস ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল।’ বিতর্ক উঠেছে যে আরএসএস ভারত ছাড়ো আন্দোলন সহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইংরেজ বিরোধী তাবৎ কার্যকলাপের বাইরে ছিল সেই আরএসএস এখন নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছে আর ICHC সেই প্রক্রিয়াকেই কার্যকরী করতে উদ্যোগী হয়েছে।