নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পশুখাদ্য মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবকে নাকা চোবানি খাইয়ে ছিলেন এক সময় যে সিবিআই অধিকর্তা, তিনি এখন প্রাক্তন। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্তকারী বর্তমান আধিকারিকদের কার্যতঃ ক্লাশ নিয়ে গেলেন তিনি আর সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়ে গেলেন প্রায় ৪০০কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে এই শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। বুধবার কলকতা হাইকোর্টে হাজির হয়ে তৃণমূল জামানার প্রথম বিধায়ক ও মন্ত্রী যা বলে গেলেন তাতে হাড়ে কাঁপন ধরার মতই বিষয় এই মামলায় অভিযুক্তদের।
কিছুদিন আগেই এই শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বোমা ফাটিয়ে ছিলেন সিবিআইয়ের এই প্রাক্তন অতিরিক্ত অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস। তাঁর সোশ্যাল পোস্টে সামনে আনেন রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়টি। বাগদা রঞ্জন নামের সততায় ভরা পোস্ট আলোড়ন ফেলে দেয় রাজ্য জুড়ে। বুধবার সেই উপেন বিশ্বাস কলকাতা হাইকোর্টে নিজে পৌঁছে গেছিলেন। তারপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে পর্দাফাঁস করলেন সেই বাগদা রঞ্জনের। উপেন সটান বিচারপতিকে বলেন, বাগদা রঞ্জনের আসলে চন্দন মণ্ডল। মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিমরা আদালতে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেন, এই চন্দন মণ্ডলের বিরুদ্ধেই তাদের মামলায় অভিযোগ।
এরপরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় উপেন বিশ্বাসকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি কেন ফেসবুক পোস্ট করে অভিযোগ করলেন? কেন পুলিশে অভিযোগ করলেন না কোনও ? কেন সৎ রঞ্জন বললেন? উত্তরে উপেন বিশ্বাস বলেন স্ট্রেট ব্যাটে জবাব, ”মাই লর্ড, আমি হেল্পলেস ছিলাম। মাকড়সার জালে রঞ্জন একটা বিন্দু। মাকড়সার জালের এমন অনেক রঞ্জন তাদের খুঁজে বার করতে হবে। বাগদা রঞ্জন আসলে সুসংগঠিত একটি অপরাধ। এই অপরাধ একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। অনেকেই যুক্ত এই অপরাধে। ধরুন ৪০০ কোটির দুর্নীতি।”
বিশ্বাস বলেন, “এই দুর্নীতির অঙ্কের টাকা গুনতেও যেমন অনেক লোক লাগে। ঠিক তেমনই সংগঠিত অপরাধ ঘটানো একা রঞ্জনের কম্য নয়। একটা ডট মাত্র রঞ্জন। রঞ্জন ভুলে যান, আজ থেকে আমি বলছি রঞ্জন আসলে চন্দন মণ্ডল। মাকড়সার জালে রঞ্জন একটা বিন্দু। মাকড়সার জালের এমন অনেক রঞ্জন তাদের খুঁজে বার করতে হবে।” এরপরই তিনি বলেন,”নির্দিষ্টভাবে সিট-এর নেতৃত্ব কে দেবেন, কোন কোন অফিসার থাকবেন তা আদালত নির্দেশ জারি করে স্থির করে দেবে। নিয়মিত হাইকোর্টে রিপোর্ট দেবে সিট। যুগ্ম অধিকর্তা হেড হয়ে থাকলে সিটের, তিনি রিপোর্ট পেশের দিন আদালতে উপস্থিত থাকবেন। নূন্যতম ১৫-২০ সদস্যের সিট গঠন দরকার। সিট সদস্যদের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও বদলি করা যাবেনা।” উপেন বাবুর সেই কথা সিবিআই ক্লাসের বাধ্য ছাত্রের মতই শুনলেন যেন দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী সিবিআই অফিসারেরা।
উপেন বলে চলেন, ‘সিবিআই-এর কোনও মাথা নেই এখানে কোনও নির্দিষ্ট ডিআইজি নেই। লোকবল কম। সিবিআই এই টিম দিয়ে কিং পিন কেন, একটা পিন’কেও হেফাজতে নিতে পারবে না সিবিআই আদালত নিযুক্ত সিবিআই এর সিট গড়ে দেওয়া হোক। আদালতের নজরদারিতে হোক সিবিআই তদন্ত। তাহলে খোদ প্রধানমন্ত্রীও নাক গলাতে পারবেন না তদন্তে। সিবিআই কে আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা উজাড় করে সাহায্য করতে চাই তদন্তে। ২৪ ঘন্টা, দিন রাত যখন চাইবে, আমায় সিবিআই তদন্তে সহযোগিতার জন্য পাবে।” বলাবাহুল্য উপেন বাবুর পরামর্শে থুড়ি ক্লাসে খুশি হয়েছেন খোদ বিচারপতিও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, উপেনবাবুর তথ্য ও পরামর্শে আমি সমৃদ্ধ।”