Wednesday, May 1, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-১৯৭ ।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশ আশুতোষ শিব মন্দির,গোছাতি
(দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর) একেবারে পৌরাণিক কাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে ভারতবর্ষে। এই দেশে ‘বেদ’কে প্রাচীন শাস্ত্র হিসাবে মান্য করা হয়। বেদ শব্দের প্রথম ও প্রধান অর্থ হোল জ্ঞান। শাস্ত্র, শ্রুতি, ধর্ম এবং ব্রহ্ম—এই চার বিষয়ের প্রতিপাদক হিসাবে, বেদ-কে ঋক, সাম, যজু এবং অথর্ব—এই চারটি নামে ও ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। বলা হয়, যে বেদে আয়ু সম্পর্কিত আলোচনা আছে, তার নাম আয়ুর্বেদ। স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা আয়ুর্বেদ সৃষ্টি করেছিলেন। তাই আয়ুর্বেদ-এর অন্য নাম—পঞ্চম বেদ। পরবর্তীকালে এর থেকে বহু ‘সংহিতা’ সৃষ্টি হয়েছে। তার সুবাদে, আয়ুর্বেদ বা চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রভূত চর্চা ও উন্নতি সাধিত হয়েছে দেশ জুড়ে। আয়ুর্বেদের বিকাশ হয়েছে বাংলাতেও।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

নিম্নবঙ্গের এই মেদিনীপুর জেলায় কয়েকটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসক বংশের বসবাস আছে। এই প্রাচীন বংশগুলির অধিকাংশেরই আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গ বা অধুনা বাংলাদেশে। সেকালের চেতুয়া পরগণার গোছাতি গ্রামের মানিকবংশ তাদেরই একটি।
এই বংশের পূর্বপুরুষগণ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার সাথে যুক্ত ছিলেন। এটি ছিল তাঁদের বংশানুক্রমিক বৃত্তি। এই বংশের জনৈক উদয় চন্দ্র মানিক বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বহু বনেদি, সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবারের চিকিৎসার ভার তাঁর উপর ন্যস্ত ছিল।
সেই সুবাদে চিকিৎসা থেকে প্রচুর ধনাগম হয়েছিল উদয় চন্দ্রের। সেসময় বাংলায় “চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা” প্রচলিত ছিল। সেই আইনের সুবাদে, নিজের একটি জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।
জমিদারী গড়েই, মহাদেব শিবের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যিনি সহজেই তুষ্ট হন, তিনি আশুতোষ। উদয় চন্দ্রও “আশুতোষ” নামকরণ করেছিলেন তাঁর দেবতার। মন্দিরে আশুতোষের বিগ্রহটি ভারি সুদর্শন। আগাগোড়া শ্বেতপাথরে খোদাই করা।
উদয় চন্দ্র অপুত্রক ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের পর, বিগত কয়েক পুরুষ ধরে, তাঁর জ্ঞাতিবর্গই দেবতার সেবাপূজার ধারাটি বজায় রেখেছেন।
ইটের তৈরি আশুতোষের পূর্বমুখী মন্দিরটি শিখর দেউল রীতির। বাঢ় এবং গণ্ডী জুড়ে সপ্ত-রথ বিভাজন করা। জগমোহন নাই। সঙ্কীর্ণ প্রদক্ষিণ-পথ থেকে সরাসরি গর্ভগৃহে প্রবেশ। দ্বারপথটি খিলানের। গর্ভগৃহের সিলিং হয়েছে, আটটি চাপা-খিলানের মাথায়, ছোট গম্বুজ রচনা করে।
দাসপুর থানার মন্দির টেরাকোটা অলঙ্করণের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এই মন্দিরে টেরাকোটার ফলক নাই। অলঙ্করণের কাজ হয়েছে স্টাকো আর পঙ্খের নকশায়। যেমন—১. দক্ষিণের দেওয়ালে রাহাপাগের উপর, একটি চতুষ্কোণ খোপে, মন্দির প্রতিষ্ঠাতা উদয় চন্দ্রের উপবিষ্ট ভঙ্গিমায় জপরত মূর্তি। ২. সেই মূর্তির মাথার উপর শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানি। ৩. পূর্বদিকের দেওয়ালে সিদ্ধিদাতা গণেশের চতুর্ভূজ মূর্তি। ৪. মন্দিরের সিঁড়িতে দু’দিকে দুটি গো-মুখ রচিত। সবগুলিই স্টাকো রীতির কাজ।
পঙ্খের ফুলকারি নকশার রঙীন কারুকাজ আছে গর্ভগৃহের ভিতর, পিছনের দেওয়ালে। বাইরে, উত্তরের দেওয়ালে, রাহাপাগ-এর উপর, ভিনিশীয় রীতির, সুন্দর একটি প্রতিকৃতি গবাক্ষ নির্মিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারঃ শ্রীমতী যশোদা মানিক, শ্রীমতী সন্ধ্যা মানিক, শ্রী রজত মানিক—গোছাতি।
পথনির্দেশঃ পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে ঘাটাল গামী পথে গঙ্গামাড়োতলা। সেখান থেকে পূর্বে, পলাশপাই খালের উত্তরপাড় ধরে জোতঘণশ্যাম যাওয়ার পথে, আজুড়িয়া বাংলো স্টপেজ। সেখানে নেমে, সামান্য দূরেই গোছাতি গ্রাম। এছাড়াও, পূর্বোক্ত পথের সুলতান নগরে নেমে, সোনাখালি হয়েও গোছাতি পৌঁছানো যায়।

- Advertisement -
Latest news
Related news