Monday, May 20, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-১৩৫ ।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশ পশুপতিনাথ শিব মন্দির, ভোগদণ্ড (পিংলা)
 
এক সময় মন্দিরময় গ্রাম বলা হোত ভোগদণ্ডকে। বলা হবে নাই বা কেন? ষাট-সত্তরটি দুর্গাপূজা হোত এই একটি গ্রামে। সবগুলিই পারিবারিক পূজা। সবগুলিই আয়োজিত হোত প্রতিমা গড়ে, ধুমধাম করে। সবগুলিই ব্রাহ্মণবাড়ির পূজা। … ঘর ব্রাহ্মণের বাস ছিল তখন গ্রামটিতে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

জানা যায়, এই পরিবারগুলির ভিতর নিজস্ব জমিদারী ছিল বেশ কয়েকজনের। এবং সেগুলি ইংরেজ আসার পর, অর্থাত ইং ১৭৯৩ সালে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা’ পর, গড়ে তোলা নব্য জমিদারী নয়। অনেকেই তার পূর্বকাল থেকে জমিদারী করে আসছিলেন। কয়েকজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদারের কথা আজও শোনা যায় প্রবীনদের মুখে।
এই জমিদারগণ প্রায় সকলেই নিজস্ব এক বা একাধিক দেবালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এক সময় আট-দশটি দেবমন্দির ছিল ভোগদণ্ড গ্রামে। নিত্য আরাধনা হোত দেবতামণ্ডলীর। গ্রামের বাতাস নিনাদিত হোত কাঁসর-ঘন্টার শব্দে।

কিন্তু আজ দু’-একটি জীর্ণ পরিত্যক্ত দেবালয় ছাড়া, কোনটির অস্তিত্বটুকুও নাই আর। জমিদারী ব্যবস্থা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়াকেই এর মূল কারণ বলে মনে করা হয়।
যে দুটি মন্দির তাদের জরাজীর্ণ চেহারা নিয়ে আজও কোন রকমে টিকে আছে, তাদেরই একটি হোল পশুপতিনাথ শিবের এই মন্দিরটি।

মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাঁরা, সেই বংশটিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বহুকাল। বর্তমান সেবাইতগণের কাছে জানা যায়, মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল ভট্টাচার্য্য পদবীর একটি জমিদারবংশ। তাঁদের বিশদ বিবরণ জানা যায় না। তবে, বংশের শেষ জমিদার ছিলেন জনৈক প্রিয়নাথ ভট্টাচার্য্য।
প্রিয়নাথ ছিলেন অপুত্রক। তিনি একমাত্র কন্যা কিশোরীবালার বিবাহ দিয়েছিলেন জনৈক প্রবোধ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সাথে। যোগেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পুত্র প্রবোধ চন্দ্র, মেদিনীপুর শহর থেকে এসে, সেসময়  ভোগদণ্ডের এক জমিদারবাড়িতে গৃহশিক্ষকতা করতেন।
প্রিয়নাথ লোকান্তরিত হওয়ার পর, তাঁর সমূহ সম্পত্তির আধিকারী হয়ে, প্রবোধ চন্দ্র এবং কিশোরীবালা ভোগদণ্ড গ্রামের স্থায়ী অধিবাসী হয়ে গিয়েছিলেন। মন্দির আর দেবসেবার ভার তুলে নিয়েছিলেন নিজেদের হাতে।

একটি প্রতিষ্ঠা-লিপি আছে পশুপতিনাথের এই মন্দিরে। তা থেকে জানা যায়, ইং ১৭৮২ সালে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। দীর্ঘ আয়ুর কারণে, ভয়াণক জীর্ণ হয়ে পড়েছিল মন্দিরটি। প্রবোধ চন্দ্রের দুই পৌত্র তপন কুমার এবং স্বপন কুমার দেবতার বর্তমান সেবাইত। নতুন একটি মন্দির গড়ে, দেবতাকে সেখানে এনে প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা। তিলে তিলে ধ্বংসের দিন গুনছে পুরাতন সৌধটি।
পূর্বমুখী ইটের মন্দিরটি দ্বিতলবিশিষ্ট দালান-রীতিতে নির্মিত হয়েছিল। গর্ভগৃহের মাথায় দ্বিতলেও সমমাপের একটি গর্ভগৃহ আছে। কিন্তু নীচ তলায় অলিন্দ থাকলেও, দ্বিতলে সেটি নির্মিত হয়নি।

অলিন্দে খিলান-রীতির তিনটি দ্বারপথ, গর্ভগৃহ দুটিতে একটি করে দ্বার। দ্বিতলে গর্ভগৃহের দু’দিকে থামযুক্ত দুটি প্রতিকৃতি-দ্বার রচিত আছে।
অলিন্দের দক্ষিণে একটি সিঁড়ি আছে দ্বিতলে যাওয়ার জন্য। কোন অলঙ্গকরণ নাই মন্দিরে। পলেস্তারা না থাকায়, মন্দিরে যে কাট-ব্রিকের ব্যবহার করা হয়েছিল, তা দেখা যায়।

সাক্ষাতকারঃ সর্বশ্রী তপন মুখোপাধ্যায়, স্বপন মুখোপাধ্যায়, হরনারায়ণ ভট্টাচার্য্য, কুমার ভট্টাচার্য্য—ভোগদণ্ড।
পথনির্দেশঃ খড়গপুর থেকে জামনামুখী রাস্তায় দুজিপুর। সেখান থেকে ৩ কিমি দূরে ভোগদণ্ড গ্রাম। এছাড়া, বালিচক স্টেশন থেকে দক্ষিণে ফতেপুর গিয়ে, পশ্চিমমুখে ৫ কিমি পেরিয়ে ভোগদণ্ড।

- Advertisement -
Latest news
Related news