Wednesday, May 1, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ১৯৯।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশ পাবকেশ্বর শিব মন্দির, কেদার
(দাঁতন, পশ্চিম মেদিনীপুর)যে গ্রামে অবস্থান করেন, সেই নামের সাথে মহাদেব শিবের নামকরণ হয়েছে, এমন উদাহরণ অজস্র। আমাদের আলোচনা  তেমনই এক শিব এবং তাঁর মন্দির নিয়ে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

পূর্বকালের তুর্কাচৌর পরগণার (বর্তমান দাঁতন থানা) গ্রামটির নাম—কেদার। বিখ্যাত এক শিবের অবস্থান সেই গ্রামে। দেবতার নাম—পাবকেশ্বর শিব। কিন্তু কেদার গ্রামের নাম থেকে, লোক্মুখে তিনি “কেদারেশ্বর শিব” নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
বলা হয়—দেশে কেদারেশ্বর শিব ৩ জন ঃ প্রথম জন আছেন হিমালয়ে মন্দাকিনী নদীর তীরে। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম তিনি। দ্বিতীয় জন আছেন মেদিনীপুর জেলারই সেকালের কেদারকুণ্ড পরগণার (বর্তমান ডেবরা থানা) চণ্ডীপুর গ্রামে। বিখ্যাত শোলাঙ্কি রাজপুরুষ বীর সিংহ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৃতীয় কেদারেশ্বর হলেন বর্তমান আলোচ্য কেদার গ্রামের এই মহাদেব।তুর্কাচৌর পরগণার খণ্ডরুইগড়ের জমিদার ‘সিংহ গজেন্দ্র মহাপাত্র’ বংশের গোশালা ছিল কেদার এলাকায়। নিত্য একটি দুধেল গাই একটি জলাশয়ের পাড়ে একটি কুণ্ডের উপর দুধ ঝরিয়ে আসত। সেখানে একটি শিবলিঙ্গ পেয়ে, মন্দির গড়ে বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার।
দেবসেবার জন্য, ওড়িশা থেকে দশনামী সম্প্রদায়ের ‘গিরি’ শাখার ব্রাহ্মণ এনে বসত করানো হয়েছিল। একটি সনন্দ মূলে প্রায় তিনশ’ বিঘা সম্পত্তি দান করা হয়েছিল ব্রাহ্মণকে।
মন্দিরের লাগোয়া কুণ্ডপুকুর নামে একটি জলাশয় আছে। পূর্বকালে নিয়মিত বুদবুদ উঠত জলাশয়টির বায়ুকোণে। সেকারণে এটি ‘কেদার ভুড়ভুড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। মন্দির স্থাপনের সময়, সেই ভুড়ভুড়ির উপর মাকড়া পাথরের একটি চারটি মুখ বিশিষ্ট ‘জলহরি’ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছিল।
সন্তানহীন বা মৃতবৎসা রমণীরা সন্তানলাভের বাসনায়, এই পুকুরে ডুব দিয়ে, জলহরি পার হয়ে যেতেন। বহু দূর দূরান্তর পর্যন্ত এই বিশ্বাসটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরিতাপের কথা, বর্তমানে কিছুকাল পুকুরটিতে প্রায়শই জল থাকে না।
গর্ভগৃহের গম্ভীরার সাথে যোগ ছিল এই পুকুরের। গম্ভীরার জল শুকোয় না কোন দিন। সেই জলের ভিতরে শিবের লিঙ্গবিগ্রহটি অবস্থিত। পঙ্কোদ্ধারের সময় ছাড়া, সহজে দেখা যায় না।
গর্ভগৃহে শিব, দুর্গা এবং চার পুত্রকন্যার পাথরের বিগ্রহও আছে। তাঁদেরও নিত্য পূজা করা হয়।
সম্বৎসরে শিবরাত্রি এবং গাজন এই মন্দিরের বিশেষ আড়ম্বরের অনুষ্ঠান। গাজনটি ১৩ দিনের উৎসব। কামিনা ঘট তোলা, হাকণ্ড, হিন্দোল সেবা, বুড়ির ঘর পোড়ানো—নানান কৃত্যক পালন করেন ভক্তার দল। শতাধিক নারী-পুরুষ ভক্তার সমাবেশ হয় এই গাজনে।
এছাড়াও, কখনওবা অনাবৃষ্টি রোধের জন্য, যাগ এবং জাঁতাল- অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয় এই মন্দিরে।
ওড়িশী শৈলীর পশ্চিমমুখী শিখর-দেউল মন্দির। সম্পূর্ণ মাকড়া পাথরে গড়া। ওড়িশী শিখর মন্দিরের সুন্দর নিদর্শন এই মন্দির। পঞ্চাঙ্গ বাঢ়, গণ্ডী, শিখর, পা-ভাগের মোল্ডিং, ৬টি থাক যুক্ত বরণ্ড—সবই উপস্থিত আছে এই মন্দিরে।
শীর্ষক অংশে বড় মাপের আমলক, ঘন্টা, কলস এবং ত্রিশূল শোভিত।
মন্দিরের একটি বৈশিষ্ট চোখে পড়বার মতো—চার দিকের দেওয়ালেই, তিন থাক পিঢ় যুক্ত ক্ষুদ্র জগমোহন রচিত হয়েছে।
পশ্চিমের দেওয়ালে, জগমোহনে প্রবেশপথের মাথার উপর, একটি পাথরের ‘লিন্টেল’ দেওয়া। তাতে নব-গ্রহ মূর্তি খোদাই করা আছে। এমন নিদর্শন এই জেলার অন্য কোনও মন্দিরে নাই।
অলঙ্করণ বলতে চারটি সিংহমূর্তি। চার দিকের দেওয়ালে, বরণ্ডের উপর, উল্লম্ফনরত চারটি সিংহ দেখা যায়।
পরবর্তীকালে একটি নাট মন্দির নির্মিত হয়েছে মন্দিরের সামনে। তার ফলে, মন্দিরের সামনের দিকের দৃশ্যমানতা ক্ষুন্ন হয়েছে।
নিয়মিত প্রচুর সংখ্যায় ভক্ত সমাগম হয়ে এই মন্দিরে। দেবতার খ্যাতিও বুহু দূর পর্যন্ত ব্যাপ্ত।
সাক্ষাৎকার (২০১৭ সাল)ঃ  সর্বশ্রী পূর্ণেন্দু শেখর গিরি মোহান্ত, শতদল গিরি মোহান্ত, উৎপল গিরি মোহান্ত, গুরুপ্রসাদ গিরি মোহান্ত।
পথনির্দেশঃ মেদিনীপুর বা খড়গপুর থেকে কাঁথিগামী পথে খাকুড়দা বাজার। সেখানে নেমে, কিমিখানিক দক্ষিণে কেদার গ্রাম এবং মন্দির।

- Advertisement -
Latest news
Related news