Wednesday, May 22, 2024

কুম্ভ কথা ( পর্ব – ২ )

- Advertisement -spot_imgspot_img

কুম্ভ কথা- ১


আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

প্রাচুর্য্য ঐশ্বর্য এবং দারিদ্র্য এখানে হাত ধরাধরি করে থাকে। রঙীন বস্ত্রধারী-বস্ত্রহীন দের মধ্যেও বৈষম্য ভিখিরিপনা, লোভ, কাম,ক্রোধ, বাসনা জেগে থাকে আম গৃহীর মতো। একদিকে অবধেশানন্দ – রামদেব জাতীয়দের ৫০কোটির প্রাসাদ ,অন্যদিকে খোলা আকাশের নীচে নিজ ভক্তমন্ডলীর কল্যাণ কামনায় যজ্ঞানুষ্ঠান -আরেক দাড়িওয়ালা মার্কস এর haves & have nots এর কথা মনে করিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি বিরাজ করে পাইলট বাবা …..বিদেশী-বিদেশিনী দের ডলারে সিদ্ধ মহাপ্রাণ।

এখানে প্রচার ও বিপনন বড় বড় বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়। প্রচারের কৌশলে এখানে ভূত ও ভগবান হয়ে ওঠে, ভগবান কেও ছাই মাখিয়ে ভূত সাজায় মার্কেটিং গুরুরা। সিদ্ধ সাধু মহাত্মার বদলে তাই প্রচারের সব আলোটুকু শুষে নেয় এই সব অসিদ্ধ, দরসিদ্ধ, দড়কচা অর্থগিধ্নু বাবা মহারাজ মাতাজীরা।বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর ধর্ম সংসদ বসে, প্রবচন হয়। শংকরাচার্য আদি পীঠাধীশ্বর, মহামন্ডলেশ্বরদের উপস্হিতিতে রামমন্দিরের জিগির তুলে সুসজ্জিত মডেল প্রদর্শন করে শাসক দল। অন্যদিকে স্বামী অগ্নিবেশ পরম ধর্ম সংসদের তরফ থেকে ২১ শে ভূমি পূজনের ঘোষণায় বিরোধীদের পালে হাওয়া লাগে, অশান্তির মেঘ ঘনায়।

কুম্ভ কথা- ১


আজ সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারব, এমন বিশ্বাস ছিল না। সারা রাত পায়ের  যন্ত্রণা।  রাত তিনটে নাগাদ তাঁবুর বাইরে এলাম। নিস্তব্ধ চারিদিক।  শুধু এককোনে এক মহাজন গরম জল করছেন সকালবেলা ভক্তরা স্নান করবেন বলে। গরম জলের বালতিতে পা ডুবিয়ে রাখলাম বেশ খানিকক্ষণ।  অনেক অজানা কথা শুনলাম ওনার মুখ থেকে গঙ্গার বুকে রাতের আকাশ কে সাক্ষী রেখে। ঘুম ভাঙল আটটা নাগাদ। পাশের বিছানার কোচবিহারের  নিসন্তান ২২ কোটির মালিক  অনঙ্গ বর্মন তখন হিসাবে ব্যস্ত। সঙ্গম যাবেন নাকি, জিজ্ঞেস করি আমি। -না, না, কি জন্য যাব? দিন দশেক আছি , যাই নি….ধুস্। বিশ্বরূপ বাবু আস্তে করে বললেন, ঘরে অশান্তি। ভাইপোরা দেখে না, তাই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান এদিক ওদিক, তিরাশির কাঙাল মনটাকে নিয়ে। – চলুন না, হেঁটে ৫০ মিনিট…একেবারে অক্ষয়বট দর্শন করে আসবেন।

বেরিয়ে পড়া গেল। জুনা আখড়ার পাশ দিয়ে যেতে যেতে রাস্তার দুধারে ভন্ড নাগাদের বজ্জাতি দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই আমরা। কিন্নরদের নাচ, অর্থ সংগ্রহ অভিযান, রুদ্রাক্ষ বিভূষিত লিঙ্গ, শিকলবদ্ধ গুপ্তঅঙ্গ, হঠ যোগীদের নানা বিধ বাজীকরি অভিজ্ঞতার মাত্রা বাড়ায়। কিন্নরদের শ্রী অঙ্গের  প্রদর্শন বা ঢঙী নাগাদের অভিনব প্রকৌশলের ছবি তুলতে মন চায় না। দশটার সঙ্গমে তখন বেশ ভীড়।  একটা পোস্টের তলায় ঠেক নিলাম।

পায়ের তলায় খড়ের  পুরু আস্তরণ।  চারপাশে প্রায় লাখ দুয়েক স্নানার্থী। লজ্জা শরমহীন কাপড় পালটানো আর মোবাইলে ছবিতোলা উৎসাহী পুরুষদের। ঘোড়সওয়ার পুলিশ, মহিলা কমান্ডো, স্কাউট, Ncc,Nss  বাঁশি ফুঁকে ভীড় নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত। ডিউটির ফাঁকে তারাও সময় সুযোগ ডুবে নিচ্ছে সঙ্গমে, তুলে নিচ্ছে সেলফি।  slr ধারিণী কুমুদরানী  মুচকি হাসে আর বলে, কেয়া করুঁ দাদা, ডিউটি ভি করনা হ্যায়, পুণ্য ভি। – সাদি নেহি কিয়ে হ্যায় অবতক। হাসি ছড়ানো মুখে বলে, নেহি দাদা, জুলাই মে করেঙ্গে।  চার তারিখ কো ভি ডিউটি লাগেগা মেরি, এঁহি পে, ৪২ নং পোস্ট …আ যানা দাদা, বিশ্বরূপ বাবু বিস্কুট দেয় ওকে।  ভুলে ভটকে শিবির থেকে বারবার চিৎকার ভেসে আসে- রাজু কি মা, শোনপুর কে রহনেবালী, আপ যাঁহা কোই ভি হো ভুলে ভটকে শিবির পে চলে আইয়ে। আপকা পন্ডা মুক্তেশ্বর জি ইঁহা ইন্তেজার কর রহেঁ হ্যাঁয়।

সমস্ত ছবি – লেখক
লেখক – শুভঙ্কর দত্ত
প্রচ্ছদ-রামকৃষ্ণ দাস 
- Advertisement -
Latest news
Related news