Friday, May 17, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল— ১৪৯ ।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশ
রঘুনাথ মন্দির, বাসুদেবপুর
(দাসপুর)

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

‘বাংলার শিবাজী’ নামে খ্যাত ছিলেন দাসপুরের চেতুয়া পরগণার রাজা শোভা সিংহ। দাসপুরেরই বঙ্গরাম চৌধুরী ছিলেন শোভার এক পত্তনীদার। এই দু’জনের তৎপর উদ্যোগে দাসপুরের গ্রামীণ শিল্পের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল।
তবে, এই এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেছিল তারও পূর্বকাল থেকে। রূপনারায়ণ, শিলাবতী, কংসাবতীর একটি শাখা সহ বহু ছোট-বড় জলস্রোতের সুবাদে, কৃষিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল দাসপুর। তার সাথে যোগ হয়েছিল রেশম শিল্প। এলাকার অর্থনীতি প্রভূত পুষ্ট হয়েছিল তাতে।
অর্থনীতি পুষ্ট হলে যা হয়! বহু জীবিকার বহু মানুষের আগমণ ঘটেছিল এলাকায়। তাঁদের বহুজনই বেশ সম্পন্ন হয়ে উঠেছিলেন।
তেমনই একটি সম্পন্ন পরিবার হোল মাসান্তবংশ। বড়মাপের লবণের ব্যবসা ছিল তাঁদের। ব্যবসার স্বর্ণযুগ এসেছিল যজ্ঞেশ্বর মাসান্তের সময়। সেসময় ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির এক ইংরেজ সাহেব মাসান্তদের ব্যবসায় অংশীদার হয়েছিলেন। সরাসরি ইংলণ্ডের লিভারপুল শহর থেকে জাহাজ ভর্তি করে লবণ আমদানি হোত কলকাতা-হাওড়ার বন্দর আর গুদামে। ফুলে ফেঁপে উঠেছিল ব্যবসাটি। তা থেকে হাওড়ার শালকিয়ায় অনেক সম্পত্তি করেছিলেন মাসান্তরা।
ব্যবসার অর্থে নিজের একটি জমিদারীও গড়েছিলেন যজ্ঞেশ্বর। রঘুনাথ নামের শালগ্রাম পূজিত হতেন পরিবারের কুলদেবতা হিসাবে। বড়মাপের অট্টালিকা গড়া হয়েছিল বাসুদেবপুরের বাস্তুতে। সেখানেই রঘুনাথের জন্য, স্থায়ী একটি মন্দির আর রাসমঞ্চও গড়েছিলেন যজ্ঞেশ্বর।
উঁচু পাদপীঠের উপর দালান-রীতির দক্ষিণমুখী মন্দিরটি ইটের তৈরি। সামনে অলিন্দ এবং পিছনে গর্ভগৃহ নিয়ে এটির গড়ন। অলিন্দে ‘কলাগেছ্যা-রীতি’র থামের সাহায্যে রচিত খিলান-রীতির তিনটি দ্বারপথ। দক্ষিণ এবং পূর্ব—দু’দিকে দুটি দ্বার আছে গর্ভগৃহের।
অলিন্দ এবং গর্ভগৃহের সিলিং হয়েছে খিলানের সাহায্যে। আর, মাথায় সমতল ছাদ। ফলে, মন্দিরের কার্ণিশগুলি ভূমির সমান্তরালে সরলরৈখিক। পাঁচটি ক্ষুদ্রাকার স্তম্ভ নির্মাণ করে, মন্দিরের শীর্ষক বা চুড়া রচিত হয়েছে সামনের আলসের উপর।
মন্দির সীমানার ঠিক বাইরে রত্ন-রীতির অত্যন্ত অলংকৃত একটি রাসমঞ্চও আছে। উৎকৃষ্ট টেরাকোটা ফলকের নিদর্শন এই মঞ্চটি। অলঙ্করণ আছে মন্দিরের সামনের দেওয়ালেও।
মূল মন্দিরের কার্ণিশের নীচ বরাবর এক সারি, এবং দুই কোণাচের গায়ে দুটি খাড়া সারিতে ছোট ছোট খোপে বহু টেরাকোটা মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। গর্ভগৃহের দ্বারপথের দু’দিকে দুটি দ্বারপাল মূর্তি এবং পূর্বদিকের দ্বিতীয় দ্বারপ্রান্তের দু’দিকে দুটি বড় আকারের পূর্ণাবয়ব বাদিকামূর্তি স্থাপিত।
অনেকগুলি বাদিকা-মূর্তি আছে পরিত্যক্ত রাসমঞ্চটিতে। সেগুলি রচিত হয়েছে প্রতিটি দ্বারপথের দু’পাশে। এছাড়াও, দ্বারগুলির মাথায়, সরলরৈখিক কার্ণিশগুলিতেও বহুসংখ্যক টেরাকোটা মূর্তির সন্নিবেশ করে মঞ্চটিকে সাজানো হয়েছিল।
কিন্তু হায়, সেই জমিদারী উচ্ছেদের কাল থেকে, মহাড়ম্বরের রাস উৎসব রহিত করে দিতে হয়েছে। সেদিন থেকেই সুদর্শন মঞ্চটি পরিত্যক্ত। সেদিন থেকে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগের স্থায়ী বাসা হয়ে হয়ে উঠেছে সৌধটি। অলঙ্করণের গরিমা হারিয়ে, সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিন গুণছে রাসমঞ্চটি।
সাক্ষাৎকারঃ সর্বশ্রী গোপাল মাসান্ত, কানাই লাল মাসান্ত এবং সুব্রত মাসান্ত—বাসুদেবপুর।
পথ-নির্দেশঃ পাঁশ কুড়া স্টেশন থেকে ঘাটাল্মুখী পথে চাঁদপুর। সেখানে চন্দ্রেশ্বর খালের পাড় ধরে পূর্বমুখে মাসান্ত বংশের মন্দির।

- Advertisement -
Latest news
Related news