Saturday, May 18, 2024

Midnapore: কেউ হয়েছে প্যাঁকাটি, কেউ ভুলেছে কোন ক্লাসে পড়ছে! স্কুল বন্ধের নির্মম পরিণতি গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখছেন মাষ্টারমশাইরা

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘কত রোগা হয়ে গেছিস রে!’ বাচ্চা ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরেন মাস্টার মশাই। ছেলেটা লজ্জা পায়। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ওঠার পরই করোনার জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেছিল। ফুটফুটে স্বাস্থ্যবান ছেলেটি এখন শুকিয়ে প্যাঁকাটি। ভূমিহীন ক্ষেত মজুরের ছেলে এক সময় স্কুলে এসে একবেলা পেট ভরে রান্না করা খাবার খেত। ২বছর সেই খাবার নেই। বদলে প্যাকেটে করা চাল, আলু, ডাল। সে খাবার বাড়িতে গেলে সে একা খেতে পারেনা, সবাই খায়। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের রিপোর্টে ফুটে উঠেছে, স্কুল বন্ধ হওয়ার ফলে দেশের এক বৃহৎ অংশের শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে পড়েছে। তারই একটি ছোট্ট নমুনা দেখতে পেলেন যেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ধলহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সাথে স্কুল বন্ধের আরও সব মারাত্মক কুফল।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

কেশপুর ব্লকের ধলহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানুযারি মাসে বিদ্যালয়ে ভর্তি করন কর্মসূচি চালাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমিত কুমার পাত্রের নেতৃত্বে শিক্ষকরা আশেপাশের গ্রামগুলির বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির যোগ্য পড়ুয়া রয়েছে কিনা। থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি করে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্লাসের চলতি পড়ুয়াদের হাল হকিকৎ। আর প্রতি পদেই উঠে আসছে নানা তথ্য। যেমন ৭ বছর বয়স হয়ে গেছে অথচ স্কুলে ভর্তি হয়নি কয়েকজন ছেলে মেয়ে। অভিভাবকদের বক্তব্য, স্কুলই যখন বন্ধ তখন ভর্তি হয়ে হবেটা কী? মাস্টার মশাইরা তাঁদের বোঝাচ্ছেন, স্কুলে ভর্তি হলে অন্যান্য সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে। মিড-ডে-মিলের সামগ্রী, বই খাতা, জামা জুতো ব্যাগ ইত্যাদি।

অবাক করা কান্ড ঘটেছে আরও। বেশ কিছু ছেলে মেয়ে বলতেই পারছেনা তারা কোন ক্লাসে পড়ে। ধলহারা প্রাথমিককের প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, আসলে যে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পরই করোনার জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেছিল সে বাড়িতে থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণীর পর তৃতীয় শ্রেণীতে উঠে গেছে। কিছু সচেতন অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ম করে পড়িয়েছেন। কেউ নিজের ক্ষমতায় প্রাইভেট টিউশন রেখেছেন কিন্তু যে সব পরিবারের বাবা-মা দুজনেই স্বল্প সাক্ষর বা নিরক্ষর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল তাঁদের ছেলে মেয়েদের অবস্থা খুবই খারাপ।

প্রায় ২৫০ জন খুদে পড়ুয়ার স্কুল এই ধলহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষক সংখ্যা ৯জন। টিম করে তাঁরাই বেরিয়ে পড়েছেন ধলহারা সহ উত্তরপড়শুড়া, মধ্যমপড়শুড়া, কাষ্টখামার, কেশবচক, চকপ্রসাদ, হূরুনুরু, কাজিচক গ্রামগুলিতে। ধলহারা বর্ধিষ্ণু গ্রাম হলেও বেশ কিছু গ্রামে রয়েছেন প্রান্তিক, ভূমিহীন, দিনমজুর পরিবার। সেই রকমই একটি গ্রামে গিয়ে ২বছরে প্যাঁকাটি হয়ে যাওয়া ছেলেটির রোগা জিরজিরে বুকের হাড়ের ওপর আঙুল বোলান মাস্টারমশাই। বলেন, ‘ একটা তরকারি, মুসুরডাল, সপ্তাহে ৩ দিন ডিম অনেক পরিবারেরই ছেলে মেয়েদের কপালে জোটেনা। এই জায়গাটাই সবচেয়ে মার খেয়েছে। শিশুদেহের এই পুষ্টিহীনতা হয়ত থেকে যাবে চিরকাল।’ ‘কবে স্কুল খুলবে স্যার?’ কচি মনের এই সহজ সরল প্রশ্নের উত্তর জানা নেই শিক্ষকদের। তবুও জবাব দেন, ‘খুলবে, খুলবে। শীঘ্রই খুলবে।’

- Advertisement -
Latest news
Related news