মেদিনীপুর

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-১৯৩ ।।চিন্ময় দাশ

Published by
KGP Desk

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ
কৃষ্ণ-বলরাম মন্দির, রবিদাসপুর                               (দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর) অনেকগুলি নদী আর নালা থাকবার সুবাদে, সমগ্র চেতুয়া পরগ্ণা ছিল উর্বরভূমি সমৃদ্ধ। সেই সুবাদে কৃষিজ সম্পদে ভরপুর ছিল এলাকাটি। এর সাথে অনেকগুলি কুটিরশিল্পেরও উদ্ভব হয়েছিল এই এলাকায়।

পরবর্তীকালে বিকশিত হয়েছিল রেশমশিল্প। ইউরোপীয় বণিকেরাও এসে সামিল হয়েছিল শিল্পটিতে। তাদের হাতে উন্নত হয়ে, বিদেশেও রপ্তানি হোত রেশমের বস্ত্রসম্ভার।
এই রেশমশিল্পের সুবাদে, এদেশীয় বহু পরিবারও বিশেষ অর্থবান হয়ে উঠেছিল। জমিদারীও গড়েছিলেন তাঁদের অনেকে। আঠারো শতকের শেষ পর্ব থেকে উনিশ শতক জুড়ে, প্রচুর মন্দির তৈরি হয়েছিল এই ধনী পরিবারগুলির হাতে।চেতুয়া পরগণা বা বর্তমানের দাসপুর থানার রবিদাসপুর গ্রামের একটি অধিকারীবংশও তেমনই একটি ধনীবংশ। তারাও একটি মন্দির স্থাপন করেছিল। একটি প্রতিষ্ঠালিপি থেকে পূর্ববর্তী পুরাবিদ, অধ্যাপক প্রণব রায় জেনেছিলেন– জনৈক গঙ্গাহরি দত্ত ছিলেন মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা। আনুমানিক উনিশ শতিকের প্রথমার্ধে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।  পুরাবিদ তারাপদ সাঁতরাও প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে একই অভিমত ব্যক্ত করে গিয়েছেন। তবে, সেবাইত বংশের অভিমত, মন্দিরের আয়ুষ্কাল আরও বেশি। ইটের তৈরি পঞ্চরত্ন রীতির মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। অনুচ্চ ভিত্তিবেদী। সামনের অলিন্দে দরুণ-রীতির খিলানের তিনটি দ্বারপথ। স্তম্ভগুলি ছিল ইমারতি-রীতির। তবে, কোনও সংস্কার কাজের সময়, স্তম্ভগুলির গড়ন বদল হয়ে গিয়েছে।
অলিন্দের সিলিং টানা-খিলানের। গর্ভগৃহের সিলিং হয়েছে পরস্পর বিপরীত দেওয়ালে, দুই স্তর পুরু খিলানের মাথায়, গম্বুজ স্থাপন করে। পাঁচটি রত্নই দেউল রীতির। সেগুলিতে কলিঙ্গশৈলীতে রথ বিভাজন করা। শীর্ষক অংশে্র বেঁকি, আমলক, কলস এবং চক্র বেশ সুবিন্যস্ত। বেশ কিছু টেরাকোটা ফলকে মোড়া মন্দিরটি। তার মধ্যে জটায়ু কর্তৃক রাবণের রথ গেলা, লঙ্কাযুদ্ধ, রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক, মা যশোদার দধিমন্থন, বলরাম কোলে মা রোহিনী, নৌকাবিলাস, বস্ত্রহরণ, দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণের অভিষেক ইত্যাদি মোটিফের ফলকগুলি উল্লেখ করবার মত।
এছাড়া, দশাবতার, কালীমূর্তি, রামশিঙাবাদক, সৈনিক ইত্যাদি মূর্তি আছে ছোট ছোট খোপে। একটি ‘লজ্জাগৌরী’ মূর্তিও আছে এখানে। তবে, মন্দিরটিতে জীর্ণতার প্রকোপ শুরু হয়েছে। অবিলম্বে সংস্কারের বিষয়ে তৎপর না হলে, সঙ্কটের সম্ভাবনা।পূর্বকালে একটি রাসমঞ্চ ছিল দেবতার। বহুকাল যাবৎ সেটি পরিত্যক্ত।
সাক্ষাৎকারঃ সর্বশ্রী স্বপন অধিকারী, শ্যামসুন্দর অধিকারী, পাঁচকড়ি অধিকারী—রবিদাসপুর।
·        জীর্ণ রাসমঞ্চ এবং তুলসিমঞ্চের ছবি দুটি শ্রী শঙ্কর অধিকারী তুলে দিয়েছেন।
পথ-নির্দেশঃ পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে ঘাটালগামী পথের উপর জগন্নাথপুর। সেখান থেকে পশ্চিমে, কিমি দুই দূরত্বে রবিদাসপুর গ্রাম। পথের গায়েই অধিকারীবংশের বসতবাড়ি ও মন্দির।

Recent Posts

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৯ ।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, প্রজাবাড় (ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর) যত দূর চোখ যায়, সবজি…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮ চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী দামোদরজীউ মন্দির, হাসিমপুর (কেশিয়াড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর) মেদিনীপুর জেলার…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৭।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শিব মন্দির, মিত্রসেনপুর (চন্দ্রকোণা, পশ্চিম মেদিনীপুর)বহুকালের প্রাচীন নগরী চন্দ্রকোণা। ভানবংশ,…

12 months ago

Templ Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ২০৬।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশলক্ষ্মীজনার্দন মন্দির, শ্রীরামপুর (সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর) জমিদারী গড়েছিলেন বটে, বৈষয়িক ছিলেন…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল- ২০৫।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী রসিকনাগর জীউ মন্দির, জয়ন্তীপুর (চন্দ্রকোণা শহর) মন্দির নগরী চন্দ্রকোণা। এর…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৪।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল— ২০৪ চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, মার্কণ্ডপুর (পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর) রূপনারায়ণ নদ—মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের…

1 year ago