নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনে ছাত্রছাত্রীরা অন-লাইনে পড়বে তাই সরকারের তরফে বিগত এবং চলতি শিক্ষাবর্ষের উচ্চমাধ্যমিকে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়েছিল ১০হাজার করে টাকা। রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর জানিয়েছিল অনলাইন পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে ট্যাব অথবা স্মার্ট ফোন কেনার জন্য ওই টাকা দেওয়া হচ্ছে। সরকার এই প্রকল্পের নাম দিয়েছিল ‘তরুণের স্বপ্ন’ যা বর্তমানে বিদ্যালয় প্রধানদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাদপ্তরের তরফে বিদ্যালয় প্রধানদের বলা হয়েছে ওই টাকার ইউ.সি বা ইউটাইলেজশন সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিদ্যালয়গুলি জানাচ্ছে তরুণের স্বপ্নে আদৌ সব ছাত্রছাত্রী ট্যাব কিংবা স্মার্টফোন কিনেছে কিনা তাঁদের জানা নেই তাই এই সার্টিফিকেট তাঁরা কী ভাবে সরকারকে জমা দেবেন বুঝতেই পারছেননা।
খড়গপুর শহরের একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ‘KGP বাংলা’কে জানিয়েছেন, ‘তরুণের স্বপ্ন’ বাবদ বরাদ্দ টাকা সরাসরি পড়ুয়াদের ফান্ডে জমা পড়েছে। এরমধ্যে বিদ্যালয়ের কোনও ভূমিকা ছিলনা, এখনও নেই। ওই টাকায় সবাই ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনেছে কিনা, কিনলেও কত টাকায় কিনেছে তার কিছুই আমরা জানিনা। এখন আমাদের বলা হচ্ছে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার অরিজিনাল বিল বা ভাউচার সহ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বাংলার শিক্ষা পোর্টালে দু’তিনদিনের মধ্যে আপলোড করে দেওয়ার জন্য কিন্তু আমরা কিভাবে তা দেব? এর জন্য তো দোকানের আসল বিল বা ভাউচার কিছু একটা দরকার। আমরা যখনই পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।”
মেদিনীপুর শহরের একটি বিখ্যাত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘আমরা বুঝতেই পারছিনা সরকার একের পর এক অযথা অযৌক্তিক বোঝা আমাদের ওপর চাপাচ্ছেন কেন? গত বছরেও আমরা দেখেছি ছাত্রীদের একটি বড় অংশ ওই বিল ভাউচার বিদ্যালয় জমা দেয়নি। ছাত্রীদের এই নিয়ে কিছু বললেই তারা বিদ্যালয়ে আসাই বন্ধ করে দেয়। এমনকি আমাদের ফোনও ধরেনা। অভিভাবকরাও তাই করেন। হয়ত অনেকেই ওই ট্যাব বা ফোন কেনেইনি। কারও আগে থেকেই ছিল। কেউ আবার সেকেন্ডহ্যান্ড কিনেছে। হয়ত কেউ অভিভাবকদের ফোন থেকেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। ফলে তারা বিল দিতে পারছেনা। এখন আমরা কী করব?’
বিদ্যালয় প্রধানদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’ এর রাজ্য সম্পাদক শ্রী চন্দন কুমার মাইতি জানিয়েছেন, ‘ তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের ইউ.সি নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়েই বিদ্যালয় প্রধানরা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। যার টাকা আমাদের কাছে আসেনি, যা আমরা খরচ করিনি তার ইউ.সি আমরা দেব কী করে? তাছাড়া এই পড়ুয়ারা আউট গোয়িং। তাদের জোর করা যাবেনা, করার কথাও নয়। তা সত্ত্বেও আমাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে ইউসি দেওয়ার জন্য আমরা তো রীতিমত অসহায় বোধ করছি।’
শ্রী মাইতি আরও বলেন, ‘কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, সবুজ সাথী কোনও ক্ষেত্রেই তো আমাদের কাছে ইউ.সি চাওয়া হয়নি এবং সঙ্গতভাবেই হয়নি। তাহলে এক্ষেত্রে চাওয়া হচ্ছে সেটাই বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমরা মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী প্রধান সচিব শিক্ষা দপ্তর মাননীয় কমিশনের অফ স্কুল এডুকেশন কে জানিয়েছি আমাদেরকে ওই বিল ভাউচার এবং ইউসি দেওয়ার ক্ষেত্রে থেকে ছাড় দেওয়া হোক এবং স্কুল বন্ধ থাকায় ওই কাজ এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না একথাও আমরা জানিয়েছি।’
তরুণের স্বপ্নে নিজেদের আ্যকাউন্টে টাকা পেয়েছেন এমন এক খড়গপুর পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলতে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন-লাইনে পড়াশুনার জন্য ট্যাব কিংবা স্মার্টফোন কেনার জন্য ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের আগে থেকেই স্মার্টফোন ছিল। সুতরাং আমরা ধরেই নিয়েছি যে এটা আমাদের আগের ফোন কেনা বাবদ টাকা। এখন সেই বিল আমাদের কাছে নেই আর থাকলেও সেটা সরকার মানবে কেন? সেই বিল তো আগের। তাছাড়া আমাদের প্রশ্ন হল কন্যাশ্রীতে ছাত্রীদের যে ১৮বছরের শেষে ২৫ হাজার করে সরকার টাকা দেয়। তার কী ব্যবহার হল সরকার কী তার হিসাব চায়? শুনেছি ওই টাকা নাকি বিয়ে অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য। কোনও ছাত্রী যদি দুটির কোনোটাই না করে?’