নিজস্ব সংবাদদাতা: গ্রেফতার না হয় করা গেল কিন্তু কী মামলা দেওয়া হবে আনারুলকে? ধন্দে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের বগটুই গনহত্যা কান্ড পরিদর্শনে গিয়ে নিজের দলেরই ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণহত্যায় পুড়ে নিহত হওয়া মানুষদের পরিবার পরিজনেরা অভিযোগ করেন যে তাঁরা আনারুলকে বারংবার পুলিশ পাঠাতে বলেছিলেন কিন্তু আনারুল পুলিশ পাঠায়নি। এই অভিযোগ শুনে মুখ্যমন্ত্রী তখুনি আনারুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। সাথে সাথে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বাহিনী ছুটে যায় আনারুলের সন্ধীপুরের বাড়িতে। ঘিরে ফেলা হয় আনারুলের বাড়ি।
আনারুলকে অবশ্য বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে খবর পেয়েই আনারুল পালিয়ে যান তারাপীঠে। সম্ভবতঃ তাঁর বাড়িতে থাকা পুলিশ আধিকারিকরা বাড়ির লোকেদের কাছে আনারুলের অবস্থান জানতে পারেন। পরে রামপুরহাট পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারাপীঠ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং তাঁকে রামপুরহাটে নিয়ে আসা হয়। শেষ খবর পাওয়া অবধি জানা গেছে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বীরভূম জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আনারুলকে যখন গ্রামবাসীরা পুলিশ পাঠাতে বলেছিল তখন আনারুল পুলিশ না পাঠিয়ে অন্যায় করেছে। যদি আনারুল ঠিক সময়ে পুলিশ পাঠাতো তাহলে এতগুলো মানুষের প্রাণ যেতনা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আনারুল কে? আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, তিনি কি পুলিশ সুপার না SDPO নাকি IC? আনারুল কি করে পুলিশ পাঠাবে? গ্রামবাসীরা বলতেই পারে যে আনারুল পুলিশ পাঠায়নি। কারন গ্রামবাসীরা দেখেছে যে অনারুলের কথাতেই পুলিশ উঠে বসে। হয়ত শুধু রামপুরহাট বা বীরভূম নয় গোটা বাংলাতেই এখন পুলিশ তৃনমূল নেতাদের কথাতেই চলে কিন্তু তার আইনি ব্যাখ্যা কী হতে পারে? আর মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুলিশ মন্ত্রী হয়ে পুলিশ না পাঠানোর দায় একজন রাজনৈতিক কর্মীর ওপর চাপিয়ে দেন কী ভাবে? মুখ্যমন্ত্রী আবার এমনও নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ যেন এমন ভাবে কেস সাজায় যাতে ধৃতরা জামিন না পায় কিন্তু আনারুলের বিরুদ্ধে সেরকম কী কেস দেওয়া যেতে পারে? ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, ব্লক সভাপতি পুলিশ পাঠায়নি এই অভিযোগ কখনওই আদালতে ধোপে টিকবেনা। এমন মামলা পুলিশ দিতেও পারবেনা। আনারুলের বাড়ি ঘটনাস্থল বগটুই থেকে অনেকটাই দূরে। তাছাড়া ঘটনার সময় আনারুল যে হাসপাতালে মৃত ভাদু শেখের কাছে ছিলেন এমন দাবির স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমান আছে। পুলিশ যদি আনিরুলকে দীর্ঘদিন হাজতেই রাখতে চায় তবে পুলিশকে আনারুলের বিরুদ্ধে ওই গণহত্যায় ষড়যন্ত্রের মামলায় জড়াতে হবে। আইনজীবীদের বক্তব্য, আগে একটি নিরপেক্ষ সংস্থার উচিৎ আনারুলের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা। তাঁর সঙ্গে গ্রামবাসীদের কথোপকথন এবং পুলিশের সঙ্গে কথোপকথন সংরক্ষন করা উচিৎ। এতে পুলিশকে আনারুল ওই স্থানে যেতে মানা করেছিল কী না তা জানা যাবে। তবে সেরকম হলেও কপাল পুড়বে পুলিশেরই কারন প্রশ্ম উঠবে পুলিশ আনারুলের কথা শুনবে কেন? আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ আসলে পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকাকে সরকারি ভাবেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।