নিজস্ব সংবাদদাতা: সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়ে দিল্লির রোহিনী আদালতে সমাজবিরোধী হামলা হয়েছিল। আইনজীবীর ছদ্মবেশে দুই দুষ্কৃতি আদালতের ভেতরে ঢুকে পড়ে খুন করেছিল এক গ্যাংস্টারকে। পুলিশের গুলিতে খুন হয় ওই দুই গ্যাংস্টারও। টানা প্রায় ৬০ মিনিটের লড়াই আর ৪০ রাউন্ড গুলি খরচা করার পর দুষ্কৃতি মুক্ত হয়েছিল রোহিনী আদালত সঙ্গে সারা দেশ দেখেছিল দিনভর দুষ্কৃতি আর সন্ত্রাসীদের নিয়ে কাজ করা দেশের আদালত গুলির প্রকৃত চেহারা।
এরপরই নড়ে চড়ে বসে দেশের শীর্ষ আদালত। আধুনিক এবং আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয় দেশের আদালতগুলিকে। সেই পরামর্শ মেনেই রবিবার ছুটির দিন মেদিনীপুর জেলা আদালত এবং মুখ্য দায়রা বিচারকের আদালতের অবস্থান খতিয়ে দেখে গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক ও গোয়েন্দা আধিকারিকরা।
রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডেপুটি পুলিশ সুপার, রিজার্ভ ইন্সপেক্টর, গোয়েন্দা আধিকারিক সহ একটি বিশাল দল পরিদর্শন করে মেদিনীপুর জেলা আদালত এবং সিজিএম আদালত চত্বর। সঙ্গে ছিলেন মুখ্য দায়রা বিচারক বা সিজিএম। সকাল ৯টা নাগাদ একটি আ্যন্টি ল্যান্ডমাইন গাড়ি সহ কোর্ট চত্বরে প্রবেশ করেন পুলিশ আধিকারিকের দলটি। তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন আদালতে ঢোকার প্রতিটি প্রবেশদ্বার। মাপ নেওয়া হয় রাস্তা এবং প্রবেশদ্বারের।
তার পাশাপাশি মূল রাস্তা থেকে আদালতের দূরত্ব, বিচারকের এজলাস থেকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের দপ্তর, আদালতের হাজত, প্রাচীরের দূরত্ব এবং উচ্চতা সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়, মাপ নেওয়া হয়। বিভিন্ন জায়গার অজস্র ফটো তোলা হয়। আদালতের মধ্যে কোথায় কতটা ফাঁকা জায়গা আছে, কোথায় আইনজীবীদের সেরেস্তা এবং বার কাউন্সিলের অফিস তার পুঙ্খানুপুঙ্খ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে।
প্রবেশদ্বার দিয়ে কতটা অংশ পৌঁছাতে পারবে আ্যন্টি ল্যান্ডমাইন গাড়ি, কোথায় রাখা যেতে পারে সেটিকে তারও পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, মেদিনীপুরের পাশাপাশি রাজ্যের আরও অনেক আদালতেরই এই পরিসংখ্যান সংগ্ৰহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে যে সব আদালতে বেশি বেশি করে সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসীদের হাজির করতে হয়। এই তথ্য সবই পর্যালোচনা করবেন বিশেষভাবে গঠিত বিশেষজ্ঞদল তারপর তাঁদের পরামর্শ মত অদলবদল, পুনর্নির্মাণ, পুনর্গঠন করা হতে পারে আদালত চত্বর।
ওই আধিকারিক জানান, ‘সবচেয়ে বড় কথা প্রতিটি আদালতের একটি পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র থাকবে পুলিশের কাছে যাতে আপৎকালীন অবস্থায় নূন্যতম সময়ে পুলিশ আদালতে পৌঁছাতে পারে এবং পৌঁছনোর আগেই অবস্থা মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করে নিতে পারে। কারন দিল্লির ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। আমরাও চাইছি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না হোক।’