নিজস্ব সংবাদদাতা: এযাবৎ কালে তিনিই দ্বিতীয় বাঙালি মাওবাদী নেতা যাঁর মাথার দাম ১কোটি টাকা। যা কিনা এর আগে জঙ্গলমহলের কোনও নেতার জন্য ঘোষণা করেনি কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রের পুলিশ। হ্যাঁ, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা টাউনের একদা বাসিন্দা আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডলের মাথার দাম ১কোটি টাকা ঘোষণা করেছে ঝাড়খন্ড পুলিশ। মৃত অথবা জীবিত, কোনও অবস্থাতেই যে কেউ তাঁর সন্ধান দিতে পারলে ঝাড়খন্ড পুলিশ সেই ব্যক্তিকে এই পরিমাণ টাকা পুরস্কার করবে। এবং এই ধরনের পুরস্কার পুরোপুরি করমুক্ত হয় বলেই জানা গেছে। এবছরের গোড়াতেই তাঁর ছবি সম্বলিত সেই পুরস্কারের ঘোষণা করে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সেঁটে দিয়েছে পুলিশ।
এবার তাঁর পৈতৃক ভিটা চন্দ্রকোনা থানার ফুলচক গ্রামের বাড়িতে আত্মসমর্পনের জন্য হুলিয়া জারি করে গেল ঝাড়খন্ড পুলিশের এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক সহ ২জন।
জঙ্গলমহলে রাজধানী এক্সপ্রেস কিডন্যাপ, শিলদা সিআরপিএফ ক্যাম্প আক্রমন ও ২৪জন জওয়ানের হত্যা এবং জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ১৫০জন যাত্রীকে হত্যার মত বহু অভিযোগে অভিযুক্ত এই আকাশ ওরফে অসীম মন্ডল একসময় সক্রিয় ছিল অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে। তত্ত্বগত দিক দিয়ে ইস্টার্ন রিজিওনে কিষানজীর পরেই স্থান ছিল তাঁর। বাংলার পাশাপাশি ছিলেন ঝাড়খন্ড ও ওড়িশার দায়িত্বেও। মাঝে বেশকিছুদিন ছত্তিশগড়েও ছিলেন তিনি। ২০১১ নভেম্বরে কিষানজী এনকাউন্টারে নিহত হলে সংগঠনের হাল ধরেন আকাশ।
সূত্রের খবর, গত কয়েকবছর ধরেই ব্লাড সুগার, চোখের সমস্যা সহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন আকাশ। এমনকী গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আকাশ সহ একাধিক প্রবীন মাওবাদী নেতা আত্মসমর্পণ করতে পারে বলেও জল্পনা ছড়িয়েছিল। কিন্তু সেই আকাশকেই এখন খুঁজছে একাধিক এজেন্সি। এর আগে অপর বাঙালি মাওবাদী প্রশান্ত বোস ওরফে কিষানদার মাথার দাম ছিল এক কোটি টাকা। তবে গত ১৯শে নভেম্বর নাকা চেকিংয়ের সময় ঝাড়খন্ড পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। কিষানদার গ্রেফতারির পরে বাংলা, বিহার, ঝাড়খন্ড এলাকায় মাওবাদী কার্যকলাপের অন্যতম ভরকেন্দ্র তৈরি হয় আকাশকে ঘিরেই। সেই আকাশকেই নাগালের মধ্যে পেতে চাইছে পুলিশ। কিন্তু ঠিক কোথায় গা ঢাকা দিয়েছে আকাশ সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
মঙ্গলবার সেই আকাশের ফুলচক গ্রামের বাড়িতেই হাজির হয়েছিলেন ঝাড়খন্ডের জামশেদপুর জেলার পাটমদা থানার দুই ওই পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীরা। আকাশ ওরফে অসীম মন্ডলের বাড়ি ও গ্রামের জনবহুল এলাকায় দুইটি নোটিশ জারি করেন, তাতে লেখা এক মাসের মধ্যে আকাশ আত্মসমর্পণ না করলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এমনকি এটাও জানানো হয়েছে যে আকাশের খোঁজ দিতে পারলে ১ কোটি টাকা পুরস্কৃত করা হবে। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ফুলচক ও তার আশেপাশের গ্রামে । চলছে আকাশকে নিয়ে জোর জল্পনা।
পুলিশের রেকর্ড বলছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার একটি গ্রামীন এলাকার এই মেধাবী ছাত্র আশির দশকের গোড়ায় দিকে তিনি গড়বেতা কলেজের অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করতেন। এরপর হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে যান। নয়ের দশকে ফের ফিরে আসেন এবং গড়বেতা থানার সন্ধিপুরের অসিত সরকার ও আরেক নেতা সুদীপ চোঙদারের সাথে মিলিতভাবে জনযুদ্ধ গোষ্ঠী বা পিপলস ওয়ার গ্রূপের সংগঠন গড়ার কাজে মন দেন। ২০০৪ সালে মাওবাদীদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গড়ে তুলেছিলেন সিপিআই (মাওবাদী)। বাকিটা ইতিহাস। জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর এক মহিলা নেত্রী অণু ওরফে কল্পনা মাইতিকে বিয়েও করেন বলে আকাশ। বাংলার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডেও একাধিক খুন এবং নাশকতার মামলার আসামি এই আকাশকে ধরতে মরিয়া দুই রাজ্যেরই পুলিশ। আকাশের পর জঙ্গলমহলের মদন মাহাত রয়েছেন যাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে ১৫লক টাকা।