নিজস্ব সংবাদদাতা: অফলাইন নয়, পরীক্ষা নিতে হবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে। এরকমই দাবি তুলে সোমবার আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন পড়ুয়ারা। এদিন দুপুর ১টা নাগাদ আ্যকাডেমিক ক্যাম্পাসে প্রধান ফটকের (Main Gate) কাছে সমবেত হতে দেখা যায় প্রায় হাজার খানেক পড়ুয়াকে। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, হঠাৎ করে সমস্ত পড়ুয়াকে ক্যাম্পাসে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ। এর একটাই কারন তাহ’ল কর্তৃপক্ষ অফলাইন পরীক্ষা নিতে চায়। অথচ যে পড়ুয়াদের ফিরে আসতে বলা হচ্ছে তাঁদের জন্য কোনও পর্যাপ্ত পরিকাঠামোই নেই হোস্টেলগুলিতে।
পড়ুয়াদের দাবি, লকডাউনের সময় থেকে বন্ধ হয়ে থাকা হোস্টেলগুলির পরিকাঠামো অত্যন্ত নিম্নমানের। সেখানে তড়িঘড়ি করে পড়ুয়াদের ডেকে পাঠালো কেন? এতদিন ধরে যাদের অনলাইনে পাঠ দেওয়া হয়েছে তাদের স্বল্প মেয়েদের প্রস্তুতি অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে কোন যুক্তিতে? ইত্যাদি দাবিতে বিক্ষোভ চলল পড়ুয়াদের। বিক্ষোভ চলাকালীন আইআইটির নিরাপত্তারক্ষীরা আ্যকাডেমিক ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। যাতে বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা ডিরেক্টরের কার্যালয় বা প্রশাসনিক ভবনের দিকে না যেতে পারেন।
আইআইটি খড়গপুর সূত্র মারফৎ জানা গেছে, আগামী ৭ই এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানের সমস্ত সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে যা কিনা আগামী ১৮ই এপ্রিল অবধি চলবে। ১৮তারিখ থেকে ক্যাম্পাসের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। এদিকে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার পর ধাপে ধাপে সাড়ে ৬হাজার থেকে ৭ হাজার পড়ুয়া ফিরেছে ক্যাম্পাসে। পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা আরও প্রায় সাড়ে তিনহাজার পড়ুয়াকে আগামী ৩১শে মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাসে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আইআইটি খড়গপুরের তরফে পরিস্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে অফলাইন পরীক্ষার। এ কথা জানার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা।
আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের বিক্ষোভরত এক পড়ুয়া ‘KGP বাংলা’কে বলেন, ” আমরা অনলাইন পরীক্ষার দাবি করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিনা। আমরা আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষর খাম খেয়ালির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। লকডাউনের পর বন্ধ হয়ে থাকা হোস্টেলগুলিতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি না করেই পড়ুয়াদের ডেকে পাঠানো হচ্ছে। এতদূর থেকে পড়ুয়াদের স্বল্প মেয়াদের নোটিসেযেভাবে তড়িঘড়ি করে ক্যাম্পাসে ফেরৎ আসতে বলা হয়েছে তা অবৈজ্ঞানিক ও পরিকল্পিত। হঠাৎ করে এই নির্দেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা পড়ুয়ারা ফিরবেন কী করে? যদি কেউ না ফিরতে পারেন তাহলে তার দায় কে নেবে?”
ওই পড়ুয়া আরও বলেন, ” করোনা কালে কতগুলো পরীক্ষা অনলাইন হওয়ার পর পরীক্ষা যে অফলাইনে হবে এটা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পড়ুয়াদের জানানো উচিৎ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা একটা পদ্ধতি থেকে আরেকটি পদ্ধতিতে যাওয়ার সময় কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল পড়ুয়াদের সাথেও আলোচনা করা কিন্তু কর্তৃপক্ষ যে শুধু আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি তা নয়, উল্টে আলোচনা চেয়ে অপমানিত হয়েছি আমরা। সবচেয়ে বড় কথা, আইআইটি কর্তৃপক্ষ এই বলে মিথ্যাচার করেছেন যে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়াটা নাকি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু আমরা খবর নিয়ে জেনেছি এরকম কোনও নির্দেশিকা শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে নেই।”
পড়ুয়াদের দাবি, করোনা কালের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহাররের পরে ধাপে ধাপে পড়ুয়াদের ফেরানো হলেও বহু পড়ুয়া এখনও বাড়িতে রয়েছেন। এই অবস্থায় অধ্যাপকরা হাইব্রিড মোডেই পড়াচ্ছেন। অর্থাৎ যাঁরা ক্যাম্পাসে আছে তাঁরা ক্লাশ করছেন আর যারা বাড়িতে আছে তাঁরা অনলাইনে ক্লাস করছেন। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের দাবি যে পদ্ধতিতে পড়ানো হয়েছে পরীক্ষা নেওয়া হোক সেই হাইব্রিড মোডেই। অর্থাৎ যাঁরা ক্যাম্পাসে আছেন তাঁরা ক্লাসে বসে পরীক্ষা দেবে, আর যারা বাড়িতে বা বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তাঁদের অনলাইনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই দাবি তুলেই বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় ৫০ মিনিট বিক্ষোভ চলার পর আইআইটি কর্তৃপক্ষ বেলা ১টা ৫০ নাগাদ পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে বার্তা পাঠান এবং বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজনকে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠান আইআইটি খড়গপুরের সিনেট সদস্যরা। সেখানে আলোচনার পর ঠিক হয় যে সোমবার রাত ৮টায় ওপেন এয়ার থিয়েটার বা টেগোর অডিটোরিয়ামে সমস্ত পড়ুয়াদের সাথে আলোচনায় বসবেন ডিরেক্টর বীরেন্দ্র কুুুমার তেওয়ারী এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষ।