নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশ্বভারতীর ৩ পড়ুয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের ওপর অন্তবর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সেই বহিষ্কারের নির্দেশ আপাতত স্থগিত করে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই ক্লাশ করতে পারবেন তাঁরা। তবে পাশাপাশি হাইকোর্ট এও জানিয়ে দিয়েছেন যে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে কোনও রকম বিক্ষোভ আন্দোলন করা যাবেনা। হাইকোর্টের এই নির্দেশ উপাচার্যের প্রতি জোর ধাক্কা বলেই মত অভিজ্ঞ মহলের। এই রায় স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনরত পড়ুয়া, অধ্যাপকরা। আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি অবধি এই রায় কার্যকরী থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার।
বুধবার এই বহিষ্কার নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জোরালো সওয়াল জবাব হয় দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে। উপাচার্য বিরোধী অধ্যাপকদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী অরুনাভ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘উপাচার্যের জন্য পৌষ মেলা বন্ধ হয়েছে। শান্তিনিকেতনের সাধারণ মানুষও তাঁকে সমর্থন করেন না। পচা আলুর বস্তা উনি।’’ হাইকোর্টে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘‘কয়েক জন ছাত্রকে তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী ছাত্ররা ভুল করলে ক্ষমা চাইবে এবং ক্লাসে যাবে। এটাই নিয়ম হওয়া উচিত। কিন্তু সাসপেন্ড কী ধরনের আচরণ?’’
অন্যদিকে উপাচার্যের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমিটির বৈঠকে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। উপাচার্যের একা সিদ্ধান্ত নেননি। তাছাড়া উপাচার্যের গাড়ি পরীক্ষা করে তল্লাশি করেছে পড়ুয়ারা। এটা ঠিক হয়েছে? এটা কি পড়ুয়াদের করা উচিত?’’ এরপরই বিচারপতি মান্থার বলেন, ‘‘যদি ধরে নিই উপাচার্য আচরণ খুব খারাপ। তাহলেও বলব উপাচার্যকে ঘেরাও না করে আদালতে আসতে পারতেন পড়ুয়ারা।’’ এর জবাবে বিকাশ বলেন, ‘‘মামলা লড়ার জন্য পড়ুয়ারা যে আদালতে আসবে অত টাকা কোথায় তাঁদের?’’ বিচারপতি জানিয়ে দেন ‘‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও বিক্ষোভ, আন্দোলন করতে পারবেন না পড়ুয়ারা। প্রশাসন-সহ সকলকে বিষয়টি নিশ্চিত করবে হবে। তিন জন ছাত্রের বহিষ্কার আপাতত স্থগিত থাকল। আন্দোলনরত পড়ুয়ারা যোগ দিতে পারবেন ক্লাসে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে রিলে অনশনে বসা বহিষ্কৃত এক ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী বলেছেন, ”এটা আমাদের প্রাথমিক জয়। আমরা আমাদের নায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। আমরা কোনদিনই উপাচার্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নামিনি। কিন্তু উপাচার্যই আমাদের পড়াশুনা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছেন। তাই উপাচার্যের অপসারনের দাবি থেকে আমরা সরছি না। সেই দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে আদালতের নির্দেশ মেনেই।”
উল্লেখ্য তিন পড়ুয়ার বহিষ্কারের প্রতিবাদে গত ২৭ আগস্ট থেকে উপাচার্যের বাংলোর সামনে অবস্থানে বসেছেন পড়ুয়ায়া। উপাচার্যের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছেন পড়ুয়ারা। তাতে সামিল হয়েছেন অধ্যাপকদেরো একটা অংশ। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে এই আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানী শেষে এদিন কলকাত হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই নির্দেশ দিয়েছেন। আন্দোলনরত অধ্যাপক ভিবিউফার সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, এটা মাদের প্রাথমিক জয়। অধ্যাপকদের পক্ষ থেকেও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করা হবে। কারন বহু অধ্যাপকও উপাচার্যের রোষের শিকার হয়ে রয়েছে।