নিজস্ব সংবদাদাতা: গত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনার স্বাক্ষী রইল বাংলা। একজনের দেহ দাহ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ১৮জন যার মধ্যে নারী ও শিশু সহ একই পরিবারের ১০জন রয়েছেন। রবিবার ভোররাতে নদিয়ার হাঁসখালি এলাকার ফুলবাড়ির এই দুর্ঘটনায় চমকে উঠেছে গোটা দেশ। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে সাহায্যের ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের দেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা করে।
পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফেও মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। মূখ্যমন্ত্রী বলেছেন দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত পরিবারগুলির পাশে সরকার রয়েছে। রবিবারই নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা মতো নিহদের পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার মৃত্যু হয়েছিল উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদার পারমদন এলাকার বাসিন্দা ৯২ বছরের বৃদ্ধা শিবানি মুহুরীর। পরিবার ঠিক করে বৃদ্ধার সত্কার করা হবে পাশের জেলা নদিয়ার নবদ্বীপে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর দেহ নিয়ে নবদ্বীপে শেষকৃত্যের উদ্দেশে রওনা দেন মুহুরি পরিবারের অনেকেই। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজন মিলে শবযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪০। কিন্তু ওই রাতেই নদিয়ার হাঁসখালির ফুলবাড়ি মাঠের কাছে রাজ্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে শববাহী লরিটি। তার জেরে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৫ জনের। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও ৩জনের।
আহত সকলকেই উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখানেও মৃত্যু হয় কয়েকজনের। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ছ’জনকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। লরির চালককে আটক করেছে পুলিশ। শববাহী গাড়ির চালকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। ঘটনার খবর পৌঁছানোর পর শ্মশানের হাহাকার নেমে এসেছে বাগদার পারমদন এলাকায় হাহাকার। শুধুমাত্র মুহুরী পরিবারেই একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ১০জন কে। স্থানীয়রা জানান, ১৫ জনই ঘটনাস্থলে মারা যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বাকিদেরও মৃত্যু হয়। নদিয়ার পুলিশ সুপার সায়ক দাস বলেন, “দু’টো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। শ্মশানযাত্রীদের গাড়ির গতি কত ছিল তা দেখতে হবে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে।”
এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী নিহতরা হলেন প্রয়াত শিবানীর মেজ ছেলে বৃন্দাবন মুহুরি (৬০), তাঁর দুই মেয়ে, ভাইয়ের স্ত্রী জয়ন্তী মুহুরি (৫০), পুত্রবধূ অনিতা মুহুরি (২২), মেয়ে মুনমুন মুহুরি (২১), নাতনি খুশি (৪) এবং আরও কয়েক জন আত্মীয়। এ ছাড়া বিজয় মণ্ডল (৬৫), হাজারি বিশ্বাস (৮৫), সুকুমার বিশ্বাস (৫২), গোপাল সরকার (৬৩), অমর বিশ্বাস (৫০) ও অমলেন্দু বিশ্বাস (৪৭) নামে দুই ভাই, শ্যাম বিশ্বাস (৫৫)-সহ কয়েক জন প্রতিবেশীরও মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়। অভিযোগ নদিয়ার ফুলবাড়ির ওই রাস্তা বেশ সংকীর্ণ। তারই মধ্যে যত্রতত্র পড়ে থাকে বালি, পাথর। বর্ষায় রাস্তার হাল আরও খারাপ হয়েছে। তা মেরামতও করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের। খারাপ রাস্তা এবং পড়ে থাকা বালি, পাথরের কারণে বার বার ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু পুলিশের কোনও নজরদারি নেই বলেও অভিযোগ ওঠে।