নিজস্ব সংবাদদাতা: ৩রা জানুয়ারি থেকে নতুন করে জারি হয়েছে করোনা বিধিনিষেধ আর সেই বিধিনিষেধের কবলে বন্ধ হয়ে গেছে রাজ্যের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও শপিংমল থেকে বার সবই খোলা থাকতে পারে রাত ১০টা অবধি। আর সেই নিয়ে নেটিজেনরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ট্রোল করতে। ফেসবুক, ট্যুইটারে লেখা হচ্ছে, ‘ উদোম খোলা পানশালা, বলি শুধু পাঠশালা!’ কেউ আবার লিখছেন, ‘ পানশালা কে ছেড়ে দিয়ে পাঠশালাকে ধর।’ যদিও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যের কাছে আর বিকল্প কিছু নেই। লকডাউন থেকে শুরু করে করোনাকাল অবধি রাজ্যের হাতে বড়সড় রাজস্ব এসেছে মদ বিক্রী থেকেই। সুতরাং বাঙালিকে যত মদ গেলানো যাবে ততই লাভ।’
ঘটনা ঘটেওছে তাই। কিছুদিন আগেই মদের দাম কমিয়েছিল রাজ্য। আর তারপর থেকেই বাঙালি যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে মদের দোকানে। রাজ্যে মদ বিক্রির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে পুজোর সময়কেও। বড়দিন থেকে বর্ষবরণ, রাজ্যের মদ বিক্রি হয়েছে ৬৫০কোটি টাকার। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে বড়দিন থেকে বর্ষবরণ, এমনকি তার পরেও টানা নয়দিন প্রতিদিনের হিসাবে ৭০ থেকে ৭৫ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে গোটা রাজ্যে। রাজ্যে মদ বিক্রির এই রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে অতীতকে। একেকটি ফরেন লিকার শপ জানিয়েছে, ওই ক’দিন ক্রেতার চাপ এতটাই ছিল যে সব ক্রেতাকে তাঁদের ব্র্যান্ডের মদ যোগান দেওয়া যায়নি।
কিন্তু কেন এত বিক্রি? সরাসরি উত্তর মেলেনি। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে নভেম্বর মাস নাগাদ বাংলায় মদের উপর আবগারি শুল্ক ছাড় দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকার। দামে বিপুল পতন হয়েছিল মদের। অনেকে অনুমান করছেন ঠিক সেই কারণেই এই পরিমান মদের বিক্রি গোটা রাজ্যে। আর সেই কারণেই বড়দিন থেকে বর্ষবরণ, রাজ্যের মদের দোকানে ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ওমিক্রন কিংবা ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের ভয় উপেক্ষা করে পানাহারের মজলিসে মেতে থাকা জনতা ভিড় জমিয়েছিলেন দোকানে। ফলে বিপুল লাভের মুখ দেখেছেন মদ ব্যবসায়ীরা। সমীক্ষা বলছে, চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় এই বছরে ৪৭% বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। পুজোতে দেশি মদ বিক্রি হয়েছিল ১.৪৬ কোটি লিটার। বিদেশি মদ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৭.৯৩ লাখ লিটার। বিয়ার বিক্রি হয়েছিল ৪৩.৭৪ লিটার। এই রেকর্ড অবশ্য ভেঙে গিয়েছে বড়দিনে।
আবগারি কর্তাদের দাবি করেছেন, মদের দাম কমানোর ফলে দেশি মদের বিক্রি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। সস্তায় বৈধ দেশি মদ পেয়ে অনেকেই চোলাইয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পানীয় থেকে সরে আসছেন। নতুন নতুন ব্রান্ডের দেশি মদ বাজারে আসছে। সর্বনিম্ন ২৩টাকায় মিলছে
৩০০ মিলিলিটার দেশি মদ। ফলে চোলাই, পচাই ছেড়ে একটা বড় অংশের মানুষ বৈধ নিরাপদ মদ পাচ্ছেন। অন্যদিকে গ্রামে গঞ্জে মদের দোকান হয়ে যাওয়ায় নেশাসক্ত মানুষকে চোরা পথে সরবরাহ হয়ে আসা চোলাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছেনা। মদ বিক্রির বেশিটাই হচ্ছে বৈধ পথে। আর তাতেই রাজ্যের কোষাগারে টাকা ঢুকছে। যদিও এই যুক্তি মানতে রাজি নন অনেকেই। তাঁদের মতে গ্রামগঞ্জে দেশি বিলেতি মদের দোকান খোলায় সরকারের মদ বিক্রির রাজস্ব বেড়েছে কারন মানুষ হাতের কাছে মদের দোকান পাচ্ছে। কিন্তু তাতে চোলাইয়ের বিক্রি কমে যায়নি। বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি করে চোলাইয়ের কারবার বেড়েছে।