Saturday, July 27, 2024

Summer Vacation: ২রা মে থেকেই গরমের ছুটি, বললেন মুখ্যমন্ত্রী! সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তোলার ব্যবস্থা, জানালো শিক্ষক সংগঠনগুলি

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী ২রা মে থেকে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে গরমের ছুটি দেওয়ার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এও বলা হল যে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ১৫ অথবা ২০জুন অবধি এই ছুটি বজায় থাকবে। উল্লেখ্য চলতি শিক্ষাবর্ষে ২৪মে গরমের ছুটি পড়ার কথা ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ২রা মে থেকে ছুটি ঘোষণা হওয়ায় ছুটি এগিয়ে এল ২১ দিন। অন্যদিকে এবার গরমের ছুটির মেয়াদ ছিল ১১ দিন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী যদি নূন্যতম ১৫ই জুন অবধি ছুটি থাকে তবে ছুটির মেয়াদ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪৫ দিনের মত। আর ২০শে জুন স্কুল খুললে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০দিনে। মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের ভেবে দেখতে বলেছেন মানেই ২রা মে থেকে ছুটি পড়ে যাচ্ছে ধরে নিয়ে ছুটি পড়ছে ধরে নিয়েই তার তীব্র সমালোচনা করেছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। রাজ্যের তিনটি প্রধান শিক্ষক সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করে এই ঘোষণাকে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার নামান্তর বলেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি বা ABTA রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেছেন, ‘ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কর্পোরেট দায়বদ্ধতা থেকেই এসব করছেন। তাপপ্রবাহ বেড়েছে এটা ঠিকই কিন্তু মর্নিংস্কুল করে ছাত্রছাত্রীদের ইউনিট টেস্ট গুলি নেওয়া উচিৎ ছিল। আমরা ইতিমধ্যেই ছেলেমেয়েদের সেই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নোটিস দিয়ে দিয়েছিলাম। শিক্ষা ব্যবস্থা পঠন পাঠন একটা ছন্দে আসতে শুরু করেছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ১৫দিন স্কুল বন্ধ ছিল। এপ্রিল মাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পড়ুয়াদের প্রায় ১মাস পঠনপাঠন হয়নি। মর্নিংস্কুল করে সাড়ে ১০টা অবধি স্কুল চালালে সেই ঘাটতি পূরণ করা যেত। এতে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা আবারও উৎসাহিত হবে। যাঁদের টাকা আছে তাঁদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট টিউশন, অনলাইনে পড়বে। আর সাধারণের শিক্ষাটা ধ্বংস হয়ে যাবে। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, আবহওয়ার সামান্য পরিবর্তন হলেই বিদ্যালয়গুলি খুলে দেওয়া উচিৎ।”

রাজ্যের অপর একটি শিক্ষক সংগঠন, শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চর রাজ্য সম্পাদক
কিংকর অধিকারী বলেন, ” প্রায় আড়াই মাস পরে বিদ্যালয়গুলির স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল
বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন, একাদশ শ্রেণির প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার মুখে শিক্ষা দপ্তর থেকে সকাল স্কুল চালুর পরামর্শ জারি হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর আচমকা প্রায় দেড় মাসের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ঘোষণা বিস্ময়কর! প্রাথমিকভাবে কিছুদিন কি সকাল স্কুল চালু করা যেত না? উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই দাবদাহের কোন চিহ্ন নেই! সামগ্রিকভাবে আবহাওয়ার অবস্থা কেমন থাকবে তা না জেনে এত দীর্ঘ দিনের ছুটি ঘোষণা কি বাস্তবসম্মত?”

এই মুহূর্তে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে রাজ্য তোলপাড়। প্রতিদিন আদালতে মুখ পুড়ছে রাজ্যের। সেই পরিস্থিতির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার মধ্যে কী অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রী অধিকারী বলেন, ‘একটা প্রশ্ন আমাদের মধ্যেও আছে সেটি হল বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষক সংকটের ফলে শিক্ষার কঙ্কালসার চেহারা জনসমক্ষে যেভাবে উন্মোচিত হচ্ছিল তাকে চাপা দেওয়া কী একটি কারণ? সুলভে নম্বর পাওয়ার ব্যবস্থা থাক, আসল শিক্ষা নিপাত যাক! এটাই কি আমাদের ভবিতব্য? আমাদের অনুরোধ, অন্তত বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন হওয়ার পর ছুটি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।’

 

অন্যদিকে রাজ্যের বিদ্যালয় প্রধানদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড  সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসস্’ এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক
চন্দন মাইতি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘটনায় আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে রাজ্যের সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে সমূলে বিনাশ করার কোনও সুচতুর পরিকল্পনা হচ্ছে কি না! একদিকে বিদ্যালয়গুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার জন্য মৌ স্বাক্ষর হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি স্কুলে পঠনপাঠনের পরিস্থিতি সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। শিক্ষা দপ্তর আমাদের ৭ই মের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের মূল্যায়ন শেষ করতে বলেছিলেন। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ অবধি সেই মূল্যায়ন করা গেলনা। একাদশ শ্রেণীর প্র্যাকটিকেল করা গেলনা। তাঁদের রেজাল্ট ঘোষণার কথা ছিল। সেটা হলনা, বৃত্তিমূলক পরীক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে গেল। এই ছুটি শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীরাও চায়নি। তাহলে কার স্বার্থে, কি জন্য এত দ্রুত এই ছুটি ঘোষণা করা হল। উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা তো স্বাভাবিক আছে। যেখানে ৮ই জুনের মধ্যে বর্ষা ঢুকে যায় সেখানে এই ছুটিকে ১৫ বা ২০জুন অবধি বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে কেন? তাহলে পূজার ছুটি কাটছাঁট করুক সরকার। আমরা শিক্ষার স্বার্থে, রাজ্যের স্বার্থে এই ছুটি বাতিল করা হোক এটাই চাইছি। আমরা এও দাবি করছি পুজোর ছুটি কমানো হোক।’

- Advertisement -
Latest news
Related news