নিজস্ব সংবাদদাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালের অস্বস্তি বাড়িয়ে গ্রেফতার হলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলী (Kalyanmay Gangyuly)। স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতি মামলায় (SSC Scam) তাঁকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। বিচাপতি বাগ কমিটির রিপোর্টে আগেই তাঁকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জীর ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ও প্রচুর সোনা গহনা ইত্যাদি উদ্ধার করেছিল ই.ডি। তখনই মনে করা হয়েছিল বেআইনি ভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগের পেছনে রয়েছে ওই টাকার খেলা। সিবিআই আধিকারিকরা মনে করছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই টাকা উপার্জনের পথকে সুগম করে দিয়েছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্য শিক্ষা পর্ষদেরই কিছু কর্তা ব্যক্তিরা।
বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী (Justic Avijit Gangyuly) এই মামলার তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকেই প্রাথমিক তদন্তের পরই আধিকারিকদের ধারনা হয় দুর্নীতির
ভুত স্বয়ং পর্ষদের মাথায় বসে রয়েছে।
তখন থেকেই তিনি সিবিআই স্ক্যানারে ছিলেন। বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কল্যাণময়কে। নিজাম প্যালেসে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্য শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও অশোক সাহাকে। এবার সিবিআইয়ের জালে উঠে আসলেন কল্যাণময়ও। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই সুস্পষ্ট ভাবে যে পাঁচটি অভিযোগ এনেছে সেগুলি হল, ১. নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া
২. যাচাই না করেই এসপি সিনহা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ, ৩. বাগ কমিটির রিপোর্টে নাম, ৪. গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগে দুর্নীতি
৫. প্রকৃত মেধার পরিবর্তে তালিকার তলায় থাকা অথবা না থাকা প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া।
বৃহস্পতিবার নিজাম প্যালেসে তলব করা হয়েছিল কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। সিবিআই সূত্রে খবর, সেখানে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। বাগ কমিটির রিপোর্টে নাম ছিল কল্যাণময়ের। তাঁর বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ, নিয়োগপত্রে সই করে তা প্রাক্তন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এসপি সিনহা অর্থাৎ শান্তিপ্রসাদ সিনহার কাছে পৌঁছে দিতেন। সেইসব বিষয় নিয়ে এদিন তাঁকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে সূত্রের খবর। এরপরই গ্রেফতারি। এদিন সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করার পর নিয়মমাফিক মেডিক্যাল চেকআপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই ফিরিয়ে আনা হবে নিজাম প্য়ালেসে। কল্যাণময়কে এর আগে সিবিআই একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডিও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মূলত নিয়োগ দুর্নীতিকে সামনে রেখেই এই গ্রেফতারি বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
কল্যাণময়ের গ্রেফতারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পশ্চিম বাংলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধানদের একমাত্র সংগঠন ‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স এন্ড হেডমিস্ট্রেস’ এর রাজ্য সাধারন সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি। তিনি বলেছেন,” মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ওই প্রাক্তন সভাপতি কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত তা আদালত বলবে কিন্তু একজন বিদ্যালয় প্রধান হিসাবে আমরা ভুক্তভোগী ওই আপাদমস্তক অহংকারী ও দুর্বিনীত ব্যাক্তিটিকে নিয়ে। তিনি প্রায়শই অকারণে বিদ্যালয় প্রধানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। নিয়োগ কমিটির প্রায় সবাই গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন! এটা ভাবতেও অবাক লাগে! শিক্ষা জগতে এত বড় দুর্দিন আগে কখনো আসেনি! শেষের সেদিন আরো ভয়ংকর, আরো অন্ধকার! শিক্ষার অন্তর্জলী যাত্রায় আমাদের সাক্ষী থাকতে হলো!”