নিজস্ব সংবাদদাতা: সিবিআইয়ের (CBI) তদন্তের গতি নিয়ে আক্ষেপ আর হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেছিলেন, সিবিআইকে দিয়ে কোনও কাজই হচ্ছেনা, শুধুই কালক্ষেপ করছে তারা। তদন্তে কেন আসছে না গতি? এসএসসি দুর্নীতি মামলায় (SSC Corruption) কার্যত কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়তে হয় সিবিআইকে। তিনি বলেন, আমি ক্লান্ত। সোমবারের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই কাটাক্ষের মুখে বুধবার সিবিআই আধিকারিকরা কার্যত ক্ষমা চেয়েই বলেন, ভরসা রাখুন। কর্মী সঙ্কট। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিচারককে দেওয়া সিবিআই আধিকারিকদের সেই প্রতিশ্রুতির ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যেন তদন্তে গতি আনতে নতুন উদ্যোমে মাঠে নেমেছে সিবিআই। বারবার তলব করা সত্ত্বেও সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় এবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে বাড়ি থেকে তুলে আনল সিবিআই। বৃহস্পতিবার কাদাপাড়ার আবাসনে যান সিবিআই আধিকারিকরা। সেখান থেকেই তাঁকে সরাসরি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে নিয়ে এসে চলে জেরা। অবশেষে প্রায় প্রায় ১০ ঘণ্টা পর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিস থেকে বের হয় সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল।
এদিকে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় শহরের নানা প্রান্তে জোরদার তল্লাশি অভিযানে নেমেছে সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানে বৃহস্পতিবার সকাল ৯:১৫ নাগাদ সল্টলেকের নিবেদিতা ভবনের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে হানা দেয় সিবিআইয়ের ১১ জনের তদন্তকারী দল। তবে সেখানে সেই মুহূর্তে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি উপস্থিত না থাকায় সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পর্ষদের অ্যাডমিন পারমিতা রায়কে। এরপরই কল্যাণময় গাঙ্গুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে পর্ষদে আসতে নির্দেশ দেয় সিবিআই। তবে তারপরেও কল্যাণময় গাঙ্গুলি পর্ষদে না এসে পৌঁছালে তাঁর কাদাপাড়া এলাকার আবাসনে হানা দেয় সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল। সেখান থেকেই কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ নিজের গাড়িতেই কার্যত নজরবন্দি করে পর্ষদের দফতরে নিয়ে আসেন সিবিআই তদন্তকারীরা।
গাঙ্গুলিকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে সিবিআই। তাঁর বয়ানও রেকর্ড করা হয় বলেও সূত্রের খবর। এরপরই সন্ধ্যা ৭:১০ নাগাদ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পর্ষদ অফিস থেকে বেরিয়ে যায় সিবিআই। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পর্ষদ থেকে বেরিয়ে যান পর্ষদের অ্যাডমিন পারমিতা রায়। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। সেই নথি এবং দুজনের রেকর্ডেড বয়ান উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের দেখানো হবে। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সকালই শান্তিপ্রসাদ সিনহার সার্ভে পার্কের ফ্ল্যাটে পৌঁছে যান ৫ জন সিবিআই অফিসার। দলে মহিলা অফিসারও রয়েছেন। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, কয়েক ঘন্টা ধরে শান্তিপ্রাসাদের বাড়িতে ছিলেন গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে খবর, শান্তিপ্রসাদের কোথায় কত সম্পত্তি রয়েছে তার হদিস পেতে চাইছে সিবিআই। তাঁর বাড়ির লোককেও জেরা করা হয় বলে খবর। সেই সঙ্গে ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য এসসি নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। এর আগে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকবার তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। সম্পত্তির হিসাবও চাওয়া হয়েছিল বলে খবর। আয়ের সঙ্গে সম্পত্তি সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শান্তিপ্রাসাদের পাশপাশি উপদেষ্টা কমিটির বাকি সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তাঁদের বাড়িতেও সিবিআই হানা দিতে পারে বলে সূত্রের খবর।