নিজস্ব সংবাদদাতা: আইআইটি খড়গপুরের (IIT Kharagpur)কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকরা মিলে ২৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে পিছিয়ে পড়া পরিবারের খুদে পড়ুয়াদের জন্য একটি হোস্টেল বানিয়ে ফেললেন। আইআইটি খড়গপুরের পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের সমাজকল্যাণ মূলক প্রতিষ্ঠান গোপালী ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির (GYWS) উদ্যোগে একটি ইংরেজি মাধ্যম প্রাইমারী স্কুল চলে ক্যাম্পাস থেকে 7.5 কিলোমিটার দুরে। জাগৃতি বিদ্যা মন্দির (Jagriti Vidya Mandir) নামক ওই স্কুলটিরই ৬০ জন ছাত্রছাত্রীকে রাখার জন্যই এই হোস্টেল বলে জানিয়েছেন সোসাইটি কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য 2008 সাল থেকে এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি চালিয়ে আসছে GYWS. বর্তমানে 220 জনেরও বেশি পড়ুয়া এখানে ক্লাস ফাইভ অবধি পড়াশুনা করার সুযোগ পায়।
Gopali Yuoth Welfare Society (GYWS) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৪ বছর এই স্কুলটি আমরা চালু করেছিলাম গোপালী ইন্দ্রনারায়ন মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রাঙ্গনেই। তখন আমাদের টাকা পয়সা বা পরিকাঠামো তৈরি করার মত অবস্থা ছিলনা। এরপর ধীরে ধীরে আমরা নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। অবশেষে সালুয়ার কাছে একটি জায়গা কিনে স্কুল স্থাপন করা হয়। এরপর আমরা বুঝতে পারি একেবারে সহায় সম্বলহীন কিছু পরিবারের পড়ুয়ারা রয়েছে যারা বাড়িতে পড়ার পরিবেশ পাচ্ছেনা। বাড়িতে এদের গাইড করার মত কেউ নেই। ফলে স্কুলে যা শিখছে তার পুনঃপাঠের অভাবে থমকে যাচ্ছে। এদের জন্যই একটি হোস্টেল নির্মাণের ভাবনা চলছিল। ২০২০ সালে আমরা এই হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম যা শেষ অবধি ৬ই মার্চ আমরা চালু করতে সক্ষম হলাম।
থোরাভি পিসে (Thoravi Pise) আইআইটি খড়গপুরের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (Department Of Chemical Engineering)এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘ শুধু পড়ানো নয়, কোনও পড়ুয়া কেন ঠিকঠাক পাঠ নিতে পারছেনা এই বিষয়টি আমরা জনে জনে বোঝার চেষ্টা করি। সেটা করতে গিয়েই আমরা একটি সার্ভে চালিয়ে বুঝতে পারি যে বাড়িতে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ ও গাইডের অভাবে পড়ুয়াদের একটা অংশ ছিটকে যাচ্ছে। ড্রপ আউট হচ্ছে। ওই অংশটির জন্যই এই হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হোস্টেলের ওয়ার্ডেন ও আমরা ওই পড়ুয়াদের গাইড করব।’ আরও এক GYWS সদস্য জানিয়েছেন, ‘করোনা ও লকডাউনে বহু পরিবার তাঁদের চিরায়ত পেশা হারিয়েছেন। আয়ের জন্য এদেরকে দুরদুরান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। সন্তানকে সময় দেওয়ার সময় পাননা এরা। কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের পড়া ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিবারগুলোর পড়ুয়াদের জন্যও এই হোস্টেল জরুরি ছিল।
আইআইটি খড়গপুরের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (Department Of Computer Science and Engineering)তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া আয়ুষি শর্মা (Ayushi Sharma) জানান, ” করোনা অতিমারীর কারনে ২বছর স্কুল বন্ধ ছিল। ওই সময় পড়ুয়াদের স্মার্টফোন দেওয়া হয়েছিল যাতে ডিজিটাল মাধ্যমে তারা পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে। আইআইটির পড়ুয়ারা নিজেদের পকেট মানি থেকে এই পড়ুয়াদের ডাটা প্যাক চালাতো। এবারও এই হোস্টেল চালানোর জন্য প্রতি মাসে যে ২লাখ টাকা খরচ হবে তাও আইআইটির অধ্যাপক আর পড়ুয়ারাই জোগাবেন”
হোস্টেলে পৃথক পৃথক ভাবে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য জায়গা ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডেন থাকছে। থাকছে খেলার মাঠ ও বিভিন্ন বিনোদনের সুবিধা। স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। নিজেদের ক্লাশ শুরু হওয়ার আগেই আইআইটি ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা সাইকেলে করে সকাল সকাল পৌঁছে যান এখানে। নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া দায়িত্ব মত কেউ কেউ পড়ান আবার কেউ কেউ মনিটরিং করেন।