Saturday, July 27, 2024

CPM Maoist: মাওবাদীদের ঘুম কেড়ে নেওয়া এনায়েতপুরের আদিবাসী কন্যাই সিপিএমের প্রথম এরিয়া কমিটির নেত্রী

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২২তারিখ! সন্ধ্যার পর থেকে চমকে উঠেছিল বাংলা। একটি বাংলা টেলিভিশনে সম্প্রচার হচ্ছে মাওবাদীদের সর্বোচ্চ নেতা কিষানজীর লাইভ অডিও, ‘পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল ঘেরা গ্রাম এনায়েতপুরে সিপিএমের পার্টি অফিস আক্রমন করেছি আমরা। দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই চলছে। ইতিমধ্যেই সিপিএমের কয়েকটি ‘বডি’ পড়ে গেছে। রাতের মধ্যে বাকিদেরও বডি পড়ে যাবে। দীপক সরকারকে (তৎকালীন সিপিএম জেলা সম্পাদক)বলছি, আগামীকাল সকালে আসুন আর লাশগুলো নিয়ে যান।’

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

এনায়েতপুরে সেদিন সত্যি গুলির লড়াই। মাওবাদীদের মেদিনীপুর শহরে ঢোকার মুখে সিপিএমের শেষ প্রতিরোধ স্থল এনায়েতপুর। তার ২০ কিলোমিটার পূর্ব ঝাড়গ্রাম থেকে শুরু করে ধেড়ুয়া, চাঁদড়া একের পর এক জায়গা মাওবাদীদের দখলে। ঘনজঙ্গলের ট্রেঞ্চের মধ্যে এনায়েতপুর।

মাওবাদীদের ঘুম কেড়ে নেওয়া সেই পার্টি অফিস

তার আগে ধেড়ুয়া থেকে এনায়েতপুর হয়ে কঙ্কাবতী অবধি চারটি গ্রামপঞ্চায়েতে ২২জন সিপিএম নেতা কর্মী খুন, ৬জনের খোঁজ মেলেনি আজও, ২৫০বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে মাওবাদীরা। সিপিএমের অবশ্য অভিযোগ মাওবাদীদের সাথে তৃনমূলও ছিল। এরপরই মরতে মরতে মরিয়া সিপিএমের হার্মাদ হয়ে ওঠা আর এনায়েতপুরের দোতালা পার্টি অফিসে গড়ে তোলা দুধর্ষ বাঙ্কার।

এই পার্টি অফিসই ২২তারিখ সন্ধ্যায় আক্রমন করল কমান্ডার বিকাশের নেতৃত্বাধীন মাওবাদীরা। মনিটরিং করছেন স্বয়ং কিষানজী। উত্তরমুখো পার্টি অফিসের উলটো দিকেই মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক তার উত্তরে হাটচালা। জঙ্গলঘেরা সেই হাটচালাকে আড়াল করেই তিনদিক থেকে আক্রমনে নেমেছিল মাওবাদীরা। মাওবাদীদের ২৫জনের সেরা বাহিনীকেই নামিয়েছিলেন সেদিন কিষানজী। সবার কাছেই পুলিশের লুট করা একে ফরটি সেভেন, এসএলআর, কারাবাইন। লড়াই শুরু সন্ধ্যা ৬ টায়, রাত ৮টায় লড়াইয়ের আপডেট দিতে শুরু করলেন কিষানজী। বাংলার ১নম্বর চ্যানেলে আপডেট।

কিষানজী বলছেন, ‘চারটে বডি পড়ে রয়েছে পার্টি অফিসের সামনে, ওই আরও কয়েকটা পড়ে গেল! রাত ১২টা অবধি কিষানজীর হম্বিতম্বি ডজনের বেশি বডি পড়ে গেছে! দীপক সরকার বড় গাড়ি নিয়ে আসবেন।’ রাত ১ টার পর কিষানজীকে আর পাওয়া যাচ্ছেনা! হ্যালো কিষানজী, হ্যালো! কিষানজী ফোন ধরছেনা! কিষানজী সুইচ অফ। কিষানজী লাশ বইছে, বিকাশ লাশ বইছে। সাতটা, আটটা কটা লাশ কে জানে? পুলিশকে গ্রামবাসীরা বলেছিল, বিকাশ নাকি পাগলের মত চিৎকার করছিল আর বলছিল, একটাও যেন লাশ না পড়ে থাকে। দিনের আলোতে সেই লাশ যদি গ্রামবাসীরা দেখে ফেলে তাহলে মাওবাদীরা অপরাজেয় এই মিথ ভেঙে যাবে।

সেই মারের পর থেকেই গুড়গুড়িপাল থেকে চাঁদড়া হয়ে ধেড়ুয়ার জঙ্গল ফাঁকা করে দিয়ে পালিয়েছিল মাওবাদীরা। ১২ বছর পর সেই এনায়েতপুরের মাটি থেকেই এক আদিবাসী মহিলা নেত্রী সিপিএমের এরিয়া কমিটির সর্বোচ্চ পদে এলেন। ৪৬ বছরের এই ক্ষেতমজুর পরিবারের এই আদিবাসী কন্যার নাম সলমা মান্ডি। ১২বছর আগের সেই ঐতিহাসিক লড়াইয়ের সময় আত্মগোপনে সলমা। ভাঙচুর করা হয়েছে তার বাড়ি। সলমা সিপিএম করেন কিশোরী অবস্থা থেকেই। যুব সংগঠন থেকে মহিলা সংগঠন হয়ে দলের মূল শাখায়। সিপিএম করেন বলেই ভাঙা ঘরে এখনও চাঁদের আলো দেখতে পান সলমা, তার ভাই বোন ইত্যাদিদের পরিবার। ১০০দিনের কাজ, বাংলা আবাস যোজনা, নির্মল মিশন সলমাদের জন্য নয়। সরকার বদলের পর থেকেই সলমার কাছে বকলমে শিবির পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। বোকা সলমা সে প্রস্তাব নেননি। তাই সলমা এখনও গরিব।

সরকার পরিবর্তনের পর প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল ধমক চমক। রাস্তাঘাটে চলার সময় ঘিরে ধরত ওরা। বলত, লালঝান্ডা ধরা যাবেনা। বলত, লালঝান্ডা ধরলে মেরে লাল করে দেব তোদের। উত্তরে সলমা, মারতে তোরা পারিস কিন্তু মেরে মরব তোদের। তারপর শুরু হয় অনুনয়, বিনয়। বড় পদের অফার। কিন্তু টলানো যায়নি সলমাকে। সেই অটল অনড় সলমাকে রবিবার নিজেদের সর্বোচ্চ নেত্রী পদে নির্বাচিত করলেন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর পশ্চিম সদরের ২৫০জন পার্টি সদস্য। অবিভক্ত মেদিনীপুর মানে পূর্ব পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় এর আগে কখনও কোনও আদিবাসী কন্যা সংগঠনের সর্বোচ্চ যাননি, হয়ত বা সারা বাংলাতেও। জানা গেছে এনায়েতপুরে সেদিন কিষানজীদের খোয়াব ভেঙেছিলেন জঙ্গলের এই আদিবাসীরাই।

- Advertisement -
Latest news
Related news