নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্য ক্ষমতায় আসার কয়েক বছর পর থেকেই ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু শপথ বাক্য পাঠ করিয়ে থাকেন। দলের শৃঙ্খলা মেনে চলার পাশাপাশি দুর্নীতি বিরোধী আচরণ করার জন্য কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই মূলত এই শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। ২০২১ সালের ২১শে জুলাই করোনা কালের জন্য তৃনমূলের শহিদ দিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল সভা থেকে যে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেছিলেন, ” বিশৃঙ্খলা কিন্তু বরদাস্ত করা হবে না। বলুন, চুরি করবেন না। কেউ অন্যায় করলে আটকাবেন। ” যদিও বাস্তবে তা আচরিত হয়নি। দলের মধ্যে এলাকা দখল ও নিজস্ব ক্ষমতা বজায় রাখার তাগিদে এনতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটে। তৃনমূলের অন্দরের হিসাবেই ২০২১ সালের ২১শে জুলাই থেকে ২০২২ সালের ২১শে জুলাই অবধি এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অন্ততঃ ৩০জন নেতা কর্মীর প্রাণ গিয়েছে। আহতর কোনও হিসাব নেই।
জানা যাচ্ছে বীরভূমের বগুটুই থেকে দক্ষিন ২৪পরগনার ক্যানিং গত একবছরে বালি, পাথর কিংবা পঞ্চায়েতের দখলদারি নিয়ে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘটেছে এবং যার পরিনতি গড়িয়েছে রক্তক্ষয়ী, প্রাণঘাতী গোষ্ঠীসংঘর্ষে । কোথাও দলের নেতারই ‘লাশ ফেলে দিয়েছে।’ কোথাও পুড়িয়ে মেরেছে ‘অন্য গ্রুপের বাড়ির শিশু, মহিলাদের। অন্তত তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের কাছে গোষ্ঠীসংঘর্ষে নিহত বা তৃনমূলের ভাষায় ‘শহিদ’ হয়েছেন বলে দলের কাছে তথ্য আছে। আহত হয়েছেন, এই সংখ্যাটি কত? এই প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের রাজ্য স্তরের এক নেতা জানিয়েছেন, “তার সঠিক হিসাব দলের কাছে নেই। তবে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩০ জনের এটা বোঝা যাচ্ছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীসংঘর্ষে লাগাম দেওয়া হবে নেত্রীর। অন্যতম লক্ষ্য। আশা করা যায় এই নিয়ে তিনি কিছু নির্দেশ কাল দেবেন।”
বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় আরও একটি ২১শে জুলাই হয়ে গেল আর তারপরই রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন । সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হতে পারে দলেরই একটা অংশ মনে করছেন যদিও তৃনমূলের এক প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন,“গোষ্ঠীসংঘর্ষে খুন জখম থাকেই। আগেও হয়েছে। নিচুতলায় এই মারামারি কলকাতা থেকে কিংবা সদরে বসেও আটকানো যায় না। তবু কিছুটা চেষ্টা করতে হবে।” গতবছর ‘২১ জুলাই’-র সভা হয়েছিল ভার্চুয়াল। সেই সভার পরেই, উত্তর ২৪ পরগনার মীনাখাঁয় গোষ্ঠীসংঘর্ষের কারনে ২ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে এক গ্রামবাসী প্রৌঢ়া ছিলেন। মাঝে রাজ্যের অনেক জায়গাতেই তৃণমূলের এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীকে নৃশংসভাবে খুন করেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছিল বীরভূমের বগটুইয়ে। স্থানীয় এক নেতার খুনের বদলা নিতে গিয়ে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীর বাড়িগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাতে মৃত্যু হয় শিশু, মহিলা সহ ৯ জনের। সম্প্রতি ক্যানিংয়ে ৩ জন দলের কর্মীকে কুপিয়ে, গুলি করে রাস্তায় ফেলে যায় অপর গোষ্ঠীর দলবল। এমন বর্বরতা তৃণমূলের মধ্যে প্রতিবছরই দেখা যায়। আর সব মিলিয়ে গত একবছরে গোষ্ঠীসংঘর্ষে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তৃণমূলের খবর।