নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক আলুচাষি। আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন সেই চন্দ্রকোনায় যেখানে গত মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে এক আত্মহত্যাকারী কৃষক ভোলানাথ বায়েনের। অন্যদিকে চন্দ্রকোনাতে রহস্য মৃত্যু ঘটেছে আরেক কৃষকের যাকে দুর্ঘটনা বলেই দাবি করা হয়েছে যদিও একটি সূত্রে জানা গেছে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় দেওয়ালে মাথা ঠুঁকে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই মৃত্যু হয় ওই কৃষকের। বৃহস্পতিবারই কৃষি ঋণ মুকুবের দাবিতে জাওয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা। আর এই দিনই জানতে পারা গেছে হতভাগ্য আরও ২কৃষকের কথা।
জানা গেছে চন্দ্রকোনা থানার কুঁয়াপুর এলাকার ধামকুড়া গ্রামের ৩৭ বছরের কৃষক কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মঙ্গলবার। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে শক্তিপদ মন্ডল প্রায় ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন এবং এরজন্য চড়া সুদে টাকা ধার করেছেন বন্ধন ব্যাঙ্ক, ছাড়াও একটি মাইক্রো ফিন্যান্স কোম্পানি, এমনকি গ্রূপ লোনও নিয়েছেন তিনি। জাওয়াদের জেরে তাঁর বিঘার পর বিঘা জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। কীভাবে সেই ঋণ শোধ করবেন এই আশঙ্কা পেয়ে বসে তাঁকে। অবশেষে বাড়িতে রাখা জমির আগাছা মারার কীটনাশক পান করেন। জানতে পেরেই বাড়ির লোকেরা তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানেই বর্তমানে চিকিৎসা চলছে তাঁর।
পাশাপাশি এক কৃষকের মৃত্যুর পেছনেও জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া জনিত কারন রয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার অর্থাৎ যেদিন চন্দ্রকোনার ধান্যঝাটি গ্রামের কৃষক ভোলানাথ বায়েনের মৃত্যু হয় সেদিনই মারা গেছেন ওই অসুস্থ কৃষক উত্তম খান। আগরপাড়া গ্রামের ৪৮ বছর বয়সী ওই কৃষক একজন সম্পন্ন চাষী। ১০বিঘা জমি ধানের চাষ করেছিলেন বলে জানা গেছে। প্রায় ৪০বস্তা আলুর বীজ এবং সার ও কীটনাশক অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনে রেখেছিলেন ধান উঠলে আলু লাগাবেন বলে। এবং এই বাবদ ১লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ হয়েছিল যা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মেটানোর কথা ছিল।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে ১০বিঘা জমির আড়াই বিঘার ধান কেটে আলের ওপর রেখেছিলেন বাকি পুরো জমির পাকা ধানই জাওয়াদের জলের তলায়। ফলে ধানের দফারফা। অন্যদিকে জমিতে জল জমে থাকায় এখুনি আলু লাগানো সম্ভব নয়। দেরি করলে বস্তায় থাকা আলু অঙ্কুরিত হয়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা। জানা যায় স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখেও ওই আলুর বীজ ও সার বাবদ ধার পেয়েছিলেন তিনি। এই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। প্রতিবার ঝুঁকি নিয়ে চাষ এবং প্রতিবারই লোকসান ইত্যাদি নিয়ে বচসা হয়। স্ত্রীকে জানায় এই ঝুঁকির চাষের জন্য এবার সপরিবারে মরতে হবে। এরপরই নাকি দেওয়ালে মাথা ঠুঁকতে থাকেন ওই কৃষক। চূড়ান্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর মৃত্যু হয়। কোনও এক কারনে বা চাপে এই মৃত্যুকে নিছকই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে ওই কৃষকের পরিবার।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবারই চন্দ্রকোনার ভগবন্তপুরে একটি কৃষি সমবায় অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কয়েকশ কৃষক। হাতে কীটনাশকের বোতল নিয়ে বিক্ষোভরত কৃষকরা জানিয়েছেন, কৃষি ঋণ মুকুব না করলে ভোলানাথ বায়েনের মত তাঁদেরও কীটনাশক খেয়ে প্রাণ দিতে হবে। এদিন সারা বাংলা আলু চাষী সংগ্রাম সমিতির পক্ষ থেকে কৃষি ঋণ মুকুব ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরনের দাবিতে চন্দ্রকোনা-২ বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। বাংলার আলু চাষের একটি বড় অংশই হয়ে থাকে চন্দ্রকোনা এবং সংলগ্ন এলাকায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কী নিদারুণ অবস্থায় তাঁরা একের পর এক সেই চিত্রই যেন উঠে আসছে। ছবি:নেটমাধ্যম