Saturday, July 27, 2024

Student killed Brutaly : বাংলায় বর্বরতার নৃশংস নজির, পুলিশ সেজে তিন তলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে খুন ছাত্রনেতাকে! অভিযোগ শাসকদলের দিকেই

- Advertisement -spot_imgspot_img
ক্যাম্পাসে বক্তব্য রাখছেন আনিস খান

নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বাধীনতার পরে বাংলায় এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে কী না মনে করতে পারছেননা আজকের বয়স হয়ে যাওয়া ছাত্রনেতারা। গভীর রাতে পুলিশের পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে এক ছাত্রনেতাকে বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে হত্যা করা হল শুক্রবার গভীর রাতে। হাওড়া জেলার আমতা থানা এলাকার সারদা দক্ষিণ খাঁ-পাড়ার এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিউরে উঠেছে গোটা বাংলা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম আনিস খান (২৮)। আনিস আইএসএফ(ISF) দলের ছাত্র নেতা ছিলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আনিস কলকাতাতেই থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু জমি সরকার অন্য একটি দপ্তরকে হস্তান্তর করতে চাইছে। তারই বিরুদ্ধে গত চার মাস ধরে টানা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন পড়ুয়ারা। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আনিস।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

২০২১ এর ভোটে বাম-কংগ্রেস – ISF জোটের একমাত্র জয়ী প্রার্থী ভাঙড়ের নওশাদ সিদ্দিকী। জয়ের পরে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সমর্থকদের উপরে হামলা হয়। বিশেষ করে ভাঙড়ে। বহু সমর্থক ঘরছাড়া হন। সেই সময় থেকেই নিজের এলাকার তৃনমূল নেতাদের বিষ নজরে পড়তে হয় আনিসকেও। আনিসও ঘরছাড়া ছিলেন। শুক্রবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন খবর পেয়ে চারজন যুবক পুলিশের পোশাক পরে তাঁর বাড়ি আসে।

ক্যাম্পাসের বাইরে জনমত সংগঠন করছেন আনিস খান

তারা আগ্রেয়াস্ত্র দেখিয়ে আনিসের বাবাকে নিচে আটকে রেখে বাড়ির উপরে উঠে যায়। সেখানেই আনিস ছিলেন। মার ধরে পরে তিন তলার ছাদ থেকে তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবার সূত্রে জানা গেছে এলাকায় ফিরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি জলসায় যান তিনি। এর পরে গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন। আর তার ঠিক কিছু পরেই পুলিশের পোশাক পরিহিত চার জন লোক আসেন বাড়িতে। এঁদের তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক জন খাকি পোশাকে ছিলেন। খাকি পোশাক পরিহিত নিজেকে আমতা থানার অফিসার পরিচয় দিয়ে আনিসের বাবাকে আটকে রাখেন। বাকিরা আনিসকে নিয়ে তাঁরা তিনতলায় চলে যান। তার পর ছাদ থেকে কিছু পড়ার শব্দ পান পরিবারের লোকেরা।

পোস্টার লিখছেন আনিস

যদিও আমতা থানার দাবি, তারা ওই বাড়িতে কোনও পুলিশ পাঠায়নি। তবে পুলিশের পোশাকে কারা গিয়েছিল আনিসের বাড়িতে? মৃত আনিসের পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার , রাত একটা তখন। তাঁরা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গ্রিল ধরে জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। আওয়াজ শুনে আনিশের বাবা গেটের সামনে এসে তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেদের আমতা থানার পুলিশ বলে দাবি করেন তাঁরা। জানান, আনিসকে খুঁজতে এসেছেন। গেট খোলা হলে আনিসের বাবাকে আনিসের বাবাকে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি বন্দুক দেখিয়ে ওখানেই আটকে রাখেন বলে অভিযোগ।

বাকি তিন জন বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় উঠে যান। তিন তলার সিঁড়ির ঘরের বারান্দার সামনে চৌকিতে বসে ছিলেন আনিস। তাঁরা উপরে এসে আনিসকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, তাঁকে তিন তলার বারান্দা থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নীচে নেমে ওই পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিকে ‘স্যর’ বলে সম্বোধন করে বাকি তিন জন বলেন, ‘স্যর কাজ হয়ে গিয়েছে।’ দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা। পরিবারের অন্যান্যরা ছুটে গিয়ে দেখেন মাটিতে পড়ে রয়েছেন আনিস। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়।

রাজ্য সরকার পরিচালিত নিউটাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্ররা ক্ষুব্ধ। ছাত্রদের স্বার্থে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই কলেজের সদ্য প্রাক্তন ছাত্র হাওড়া জেলার আমতার যুবক আনিস খান। এই কারণে আনিস অনেক দিন ধরেই তৃণমূলের বিষ নজরে। তাঁকে মারার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল।

এই বাড়ির তিনতলার ছাদ থেকেই ছুঁড়ে ফেলা হয় আনিসকে

উল্লেখ্য বামফ্রন্টের মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের সময় নিউটাউনের বিরাট এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে মুসলিমদের শিক্ষার জন্য এই অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমান সরকারের আমলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের খেলার মাঠের জন্য যে জমি নির্দিষ্ট করা ছিল, তা রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য দফতরকে দিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আনিস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ছাত্রদের এককাট্টা করেন। আন্দোলন শুরু হয়।এছাড়া ছাত্র বৃত্তি বৃদ্ধি, ছাত্র – ছাত্রীদের জন্য হস্টেল ও অন্যান্য দাবিতেও আনিস আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। এমনকি অনশনও করেন। NRC এর বিরুদ্ধে যখন দেশ এবং বাংলা জুড়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছিল, আনিস খান সেই আন্দোলনেরও প্রথম সারিতে ছিলেন।

এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃনমূলের দিকেই। কারন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি হস্তান্তরের বিরোধিতা করে গত ১৩৭ দিন ধরে ক্যাম্পাসে যে হাজার হাজার পড়ুয়া আন্দোলন করছেন তাতে বিপদে পড়েছে সরকার। আর যে কারনে আনিসকে বারবার তৃনমূল কংগ্রেস নেতাদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলি একযোগে দাবি করেছে আনিস হত্যার দায় নিতে হবে সরকারকেই।

- Advertisement -
Latest news
Related news