নিজস্ব সংবাদদাতা: যেখানেই প্রশ্নের হাত পড়ছে সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে দুর্নীতির গন্ধ। সেই দুর্নীতি এতটাই স্পষ্ট যে খোদ বিচারপতি হাতে নাতে এক দুর্নীতির নিয়োগকে ধরে ফেলে ওই ব্যক্তির বেতন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আর তারই সঙ্গে আরও ৪০০টি নিয়োগকে মামলার আওতায় নিয়ে আসতে বলেছেন। অনুমান করা হচ্ছে পরবর্তী শুনানিতে এদেরও বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশন( SSC) গ্রূপ-ডি পদে নিযুক্ত ৫২৫ জনের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। এবার সেই রাস্তায় চলে এল গ্রূপ-সি পদের আরও ৪০০জন।
মঙ্গলবার গ্রুপ সি-র (Group C) নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শুনানি শুরু হয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। অভিযোগ ছিল
২০১৯ সালে ৪০০ ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court) এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন এক ‘ভুয়ো’ চাকরিপ্রার্থীকে হাতেনাতে ধরেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আপাতত তাঁর বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত।
২০১৯ সালের ১৮ মে-র পর সুপারিশের ভিত্তিতে এসএসসির (SSC) গ্রুপ-সি বিভাগে অনেকের নিয়োগ হয়। কিন্তু সেই নিয়োগেও বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এনিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে সেই শুনানি চলাকালীন এক মামলাকারীর নিয়োগপত্রে গরমিল ধরা পড়ে যায়। বিচারপতি দেখেন মেয়াদ উত্তীর্ণ সুপারিশপত্রে নিয়োগ হয়েছে তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরে কর্মরত ওই কর্মীর বেতন বন্ধের নির্দেশ দেন বিচারপতি।
পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৪০০ ভুয়ো নিয়োগের নথি আদালতে জমা করতে হবে মামলাকারীদের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে মামলার ‘পার্টি’ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সেই নথি খতিয়ে দেখবে আদালত। তার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে। বন্ধ হতে পারে ভুয়ো কর্মীদের বেতনও।
গ্রূপ-ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় আদালত মন্তব্য করেছিলেন এই দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরাট পরিমান আর্থিক লেনদেনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা উচিৎ। এরপরই CBI তদন্ত করার আদেশ দেয়। পরে রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ায় আপাততঃ তা স্থগিত রয়েছে। এবার গ্রুপ-সি অর্থাৎ আ্যকাউনটেন্ট, লাইব্রেরিয়ান, ল্যাব আ্যসিসটেন্ট ইত্যাদি পদে নিয়োগেও সেই অভিযোগ চলে এল।
এই মামলার অন্যতম আইনজীবী তথা সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, শুধু স্কুলে শিক্ষক বা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে এমনটা নয়। ২০১১ সালের পর রাজ্যের সমস্ত সরকারি পদে নিয়োগে দুর্নীতিতে কলুষিত হয়েছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে আদালতের কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিকাশের এই মন্তব্য ফেলে দেওয়ার মত নয় কারন গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর খোদ মূখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন বনসহায়ক নিয়োগ পদে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তিনি রাজীবের সময়কার নিয়োগের বিষয়টি তদন্তের আদেশ দেন যা ক্যাবিনেটে পাশ হয়েছিল। রাজীবও পাল্টা জানিয়েছিল কাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সেই সব নিয়োগ হয়েছিল তার তালিকা আছে। অর্থাৎ রাজীবের আঙুল ছিল তৃনমূলের বড়সড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে। রাজীব ফের তৃণমূলে ফেরায় সে তদন্তের ভবিষ্যত কী তা সহজেই অনুমেয়।