Saturday, July 27, 2024

Save Girl Child :এবার ১৬দিনের কন্যাকে খুন করে মাটিতে পুঁতল বাবা! একবালপুরের পর বাঁকুড়ায় লক্ষ্মী নিধন

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপূজার দিনই কলকাতার একবালপুরে সদ্যজাত শিশুকন্যাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে পরিবার। ১দিনের সেই শিশুকন্যা খুনের ঘটনার পর এবার বাঁকুড়ায় ১৬দিনের শিশুকন্যাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাবার বিরুদ্ধে। মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাষন্ড বাবাকে। লক্ষ্মীপুজোর আরাধনার মাঝেই একের পর এক লক্ষ্মী নিধনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে কন্যা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে। জানা গেছে পরপর কন্যাসন্তানের জন্ম মেনে নিতে না পেরেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে ওই অভিযুক্ত। বাঁকুড়ার ছাতনা থানার তুলসা গ্রামের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হতভম্ব গ্রামবাসীরা।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ধৃত ব্যক্তির নাম আশ্বিনাথ সরেন। চারবছর আগে ছাতনার তুলসা গ্রামের বাসিন্দা কৃষিজীবী আশ্বিনাথের সঙ্গে বিয়ে হয় পুরুলিয়ার ভাতুইকেন্দ গ্রামের সোহাগীকে। একবছরের মাথায় তাঁদের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তারপর ফের দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হন সোহাগী। ১৬ দিন আগে তাঁর দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। জানা যাচ্ছে এখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। দ্বিতীয় কন্যা সন্তানকে ঘিরে শুরু হয় প্রবল অশান্তি। আশ্বিনাথ এই কন্যা সন্তানকে কিছুতেই মানতে পারছিলনা। এই সন্তানের জন্য স্ত্রীকেই দায়ী করে শুরু হয় গঞ্জনা, গালাগালি এমনকি মারধরও।

সোহাগী পুলিশকে অভিযোগ করেন , দ্বিতীয় কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকেই বিরক্ত এবং ক্রুদ্ধ হয়েছিল আশ্বিনাথ। শুরু হয় অশান্তি। সোহাগির উপর অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। এমনকি আশ্বিনাথের অন্য আত্মীয়রাও সোহাগীকেই দায়ী করে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করে বলেও অভিযোগ। গত সোমবারও এমনই অশান্তির মধ্যেই বাইরে কাজে বেরিয়েছিলেন সোহাগী। তার আগে সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে মেয়েকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে রেখে যান। বাড়িতে আশ্বিনাথও ছিল। কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরে দেখেন সন্তান নেই।
মেয়ে কোথায় জানতে চাইলে কোনও  সদুত্তর দিতে পারেনি পরিবারের লোকেরা। বারবার জিজ্ঞেস করার পরও বিষয়টি এড়িয়ে যায় স্বামী। বহু কান্নাকাটি, অনুরোধ,উপরোধ করার পরও চিঁড়ে ভেজেনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে সোহাগী প্রথমে ভেবেছিলেন তাঁর কন্যাকে কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে অথবা কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোহাগী বারংবার অনুরোধ করেন, তাঁর মেয়েকে ফিরিয়ে দিলে সে দুই মেয়েকে নিয়েই চলে যাবে। মেয়েদের লালন পালন সে একাই করবে। সে বা তাঁর মেয়েরা আশ্বিনাথের বোঝা হবেনা। কিন্তু এরপরও সদ্যজাত সম্পর্কে কিছুই জানাতে চায়নি তাঁর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এরপরই মেয়েকে ফিরে পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।

সোহাগী বাধ্য হয়েই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এই আশা নিয়ে যে পুলিশ তার সরিয়ে ফেলা মেয়েকে ঠিক খুঁজে বের করবে। এই ভেবেই ছাতনা থানায় অভিযোগ জানান তিনি। কিন্তু তদন্তে নেমে হতবাক হয়ে যায় পুলিশ। অশ্বিনাথ ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ১৬দিনের মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর তার দেহটি নিকটবর্তী একটি ধানজমিতে পুঁতে দিয়েছে আশ্বিনাথই। পুলিশ জমির সেই অংশ খুঁড়ে সদ্যোজাতর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। এরপরই গ্রেপ্তার করা হয়  কন্যার বাবা আশ্বিনাথকে। যদিও আদিবাসী সমাজে কন্যা হত্যা কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী ঘটনা বলেই এখনও মনে করা হয়ে থাকে। এই সমাজে বরপনের বদলে কন্যাপন চালু রয়েছে। ফলে কন্যারা পরিবারের বোঝা হওয়ার কথা নয়। তারপরও কেন এমন ঘটনা সেটাই ভাবনার। তাহলে নাগরিক বিষ কী গ্রাস করছে সহজ সরল আদিবাসী জীবনেও?

উল্লেখ্য লক্ষ্মীপুজোর দিনই কলকাতার একবাল পুরের একটি নার্সিংহোমে ১দিনের শিশুকন্যাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবা মার বিরুদ্ধেই। সেই ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট আলোড়ন হয়েছে ওই এলাকায়। ওই একদিনের কন্যাটি আবার দম্পত্তির প্রথম সন্তান। ফলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আরও বেশি। এসবের মধ্যেই বাঁকুড়ার এই ঘটনা রীতিমতো কলঙ্কের ছাপ রাখল বাংলায়।

- Advertisement -
Latest news
Related news