নিজস্ব সংবাদদাতা: বেলা ছোট হয়ে আসছে! বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ঝুপ করে নামছে অন্ধকার। পূবালী হওয়ায় ভর করে পশ্চিমী ঝঞ্জা কেটে যাচ্ছে। উত্তুরে হওয়ায় শিরে শিরে ঠান্ডার আমেজ রাতের দিকে। শিশিরে ভারী হয়ে কুয়াশার চাদরে আড়াল হচ্ছে ভোরের আকাশ। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন আপনি, হামাগুড়ি শীত ঢুকে পড়ছে খড়গপুর মেদিনীপুরে। আর মাত্র ২দিনের অপেক্ষা! এমনটাই জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। জানিয়েছে এবার আর হেমন্ত নয়, সরাসরি শীত আসছে দুই শহরে।
মঙ্গলবার বিকালের পর বৃষ্টি হয়নি খড়গপুর মেদিনীপুরে। মঙ্গলবার ছেঁড়া মেঘের মধ্য দিয়েই কোজাগরীর চাঁদ দেখেছে কাঁসাই উপত্যকার দুই শহর। বুধবার সকাল থেকে আকাশে হালকা মেঘ আর বেলা কিছুটা বাড়ার পরই রোদ উঠেছিল ঝলমলিয়ে। আবহাওয়া দপ্তরেরও তেমনই পূর্বাভাস ছিল।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/10/20211020_182432-scaled.jpg)
বুধবার পূর্বমেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪পরগনা আর হাওড়াতে বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমে বৃষ্টি নাস্তিই ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই শহরের বাসিন্দাদের মন ফুরফুরে হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলেন লক্ষ্মীপূজার দিনটা ভালোই যাবে কিন্তু সেটা হয়ে উঠলনা শেষ অবধি। হঠাৎ ঝেঁপে আসা এক জোরালো বৃষ্টি আচমকাই ভিজিয়ে দিয়ে গেল দুই শহর।
বুধবার দুপর ১টার পরই একটু একটু করে জলভরা মেঘ সঞ্চিত হতে শুরু করেছিল খড়গপুর ও মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকাতে। মেঘলা আকাশ কিছুক্ষনের মধ্যেই কেটে যাবে এমনই আশায় ছিলেন সবাই। কিন্তু ২.১৫নাগাদ পুরোপুরি কালো হয়ে যায় চারদিক। দিনের বেলাতেই নেমে আসে আঁধার। আড়াইটা নাগাদ বড় বড় ফোঁটা পড়তে থাকে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় তীব্র ঝাপটা সহ ঘন বৃষ্টি। সঙ্গে ব্যাপক মেঘ গর্জন শুরু হয়। সাথে বিদ্যুৎ চমক।
হওয়ার দাপট এতটাই ছিল যে বাড়ির সানসেটের তলা দিয়েই জানলা দরজা ভিজিয়ে দেয় বৃষ্টির ঝাপট। মুহুর্তের মধ্যেই স্তব্ধ হয়ে যায় দুই শহরের ট্রাফিক। পথচারীদের দৌড়ে রাস্তার ধারে দোকানে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। বাইক থামিয়ে রেনকোট পরার অবকাশ পাননি অনেকে।
খড়গপুর শহরের কৌশল্যা থেকে তালবাগিচা, প্রেমবাজার থেকে ইন্দা, খরিদা, মালঞ্চ, নিমপুরা,আরামবাটি প্রায় সর্বত্রই একই মাপের বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের বাজার স্তব্ধ হয়ে গেছে বিশেষ করে ঝাপেটাপুর, পুরানোবাজার, মালঞ্চ, খরিদায়।
এই একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথমন্দির, বড়বাজার, রাজাবাজার, সিপাহীবাজার থেকে হবিবপুর হয়ে কেরানিতলা, জজকোর্ট, পাটনাবাজারে। শহরের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল যেমন রবীন্দ্রনগর, বিধাননগর, শরৎপল্লী মিনিট ১৫ জন্য যেন দিবানিদ্রায় চলে গিয়েছিল। সবার ঘরে জানলা দরজা সব বন্ধ হয়ে যায়। যদিও খড়গপুরের মত বজ্রপাত মেদিনীপুরে হয়নি।
বৃষ্টি অবশ্য স্থায়ী হয়নি ১৫মিনিটের বেশি। তবে তারই মধ্যে শহরের রাস্তাঘাট জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেই ধকল কাটিয়েই বিকাল থেকেই দুই শহরের ঘরে ঘরে গৃহলক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর মেঘমুক্ত আকাশে কোজাগরী পূর্ণিমার উজ্জ্বল বড় চাঁদ লক্ষ্য করা গেছে দুই শহরের আকাশেই। আর এরই মাঝে আবহাওয়া দপ্তর বার্তা পাঠিয়েছে এবার আর হেমন্ত নয়, সরাসরি শীত ঢুকতে চলেছে খড়গপুর মেদিনীপুরের। উত্তুরে হওয়ায় ভর করে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সেই শীত এসে পৌঁছাতে পারে যদি না নতুন করে আবহাওয়ার কোনও পরিবর্তন হয়।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে ২১ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার দিন থেকেই এই কালো মেঘ সরে যাবে রাজ্যের আকাশ থেকে। আগামী শুক্রবার থেকে রাজ্যে প্রবেশ করতে শুরু করবে শীত। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নানা জেলায় যে এখন প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেটিও কমতে শুরু করবে কিছু দিন পর থেকেই। অন্যদিকে পূবালী হওয়ার দাপটে পশ্চিমের ঝঞ্জা ধীরে ধীরে এখন বিহার অভিমুখী। যে কারণে রাজ্যের বৃহস্পতিবার থেকেই বঙ্গের আকাশ কালো মেঘ ও প্রবল বৃষ্টির হাত থেকে শান্তি পাবে। এবং আকাশে মেঘ সরে গেলেই আস্তে আস্তে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভিতরে শীতের দিন পড়তে শুরু করবে।