নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী ১৬ই নভেম্বর খুলতে চলেছে রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলি। সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী তার আগে স্যানেটাইজ
বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সরকারের প্রাথমিক নির্দেশ অনুযায়ী ২৯শে অক্টোবরের মধ্যে স্কুলগুলিকে এই জীবাণুমুক্ত করার কাজটি শেষ করতে হবে। পরের এবং চূড়ান্ত দফার জীবাণুমুক্ত করার কাজটি সেরে ফেলতে হবে স্কুল খোলার ঠিক প্রাক্কালে। বিদ্যালয় প্রধানদের মাথায় হাত কারন এই জীবাণুমুক্ত করার জন্য যে পরিমান অর্থ প্রয়োজন তা এখনও অবধি এসে পৌছায়নি বিদ্যালয়ের হাতে। অন্ততঃ খড়গপুর এবং মেদিনীপুর শহরের বিদ্যালয়গুলি তা পাননি বলেই জানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধানরা।
খড়গপুর শহরের এক বিদ্যালয় প্রধান জানিয়েছেন, ” প্রায় ২বছর পরে বিদ্যালয় খুলবে, ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে ফিরবে এটা খুবই ভালো কথা কিন্তু তারজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কোথায়? সরকারের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ২৯শে অক্টোবরের মধ্যে প্রথম দফার জীবাণুমুক্ত করার কাজটি করতে হবে। এই কাজ সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠান নয় করতে হবে বিদ্যালয়গুলোকেই। শুধু শ্রেণীকক্ষ নয়, অফিসঘর, কমনরুম, লাইব্রেরী, ল্যাব সহ গোটা বিদ্যালয় চত্বরই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এরজন্য যে মেশিনটি দরকার তার দাম নূন্যতম ৬হাজার টাকা। এরপর রয়েছে ওই তরলটির দাম এবং বিদ্যুৎ বিল। সব মিলিয়ে দু’দফার খরচ প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেই এই বরাদ্দ করা হবে কিন্তু এখনও অবধি সেই বরাদ্দ করা হয়নি। ফলে আমরা কাজ করব কিভাবে?”
ওই প্রধান শিক্ষক আরও বলেছেন, “টাকা না দিয়ে যদি এই কাজটি করতে বলা হয় এবং বিদ্যালয়গুলি তা করতে বাধ্য হয় তবে তার ফল হবে মারাত্মক কারন সেই জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়াটি হবে ওপরে ওপরে, লোক দেখানো। আর এরফলে সংক্রমন ছড়ানোর সম্ভবনা দেখা দেবে। যে সতর্কতা ও সাবধানতা নিয়ে বিদ্যালয় খোলা কথা বলা হচ্ছে তা মাঠে মারা যাবে।”
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস এন্ড হেডমিস্ট্রেসস, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেছেন, “দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর করোনা জনিত অতিমারির জন্য স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হচ্ছে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করে আসছিলাম আমরা। তৃতীয় ধাক্কা যেহেতু আমাদের রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করে উঠতে পারেনি তাই আমরা এ দাবি বারে বারে শিক্ষা দপ্তর এবং মাননীয়ার কাছে রেখেছিলাম ।আমাদের দাবী কে মান্যতা দেওয়ায় আমরা খুশি। যে সকল বিদ্যালয় ,মাদ্রাসা এই খোলার জন্য অনুদান পাচ্ছে না তাদের অবিলম্বে স্যানিটাইজার,মাস্ক, পরিষ্কার পরিছন্নতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের আসবাবপত্র সহ পুনঃনির্মাণের জন্য বরাদ্দ টাকা দ্রুত পৌঁছে দিতে শিক্ষা দপ্তরের কাছে আমাদের আবেদন থাকছে। বিদ্যালয়গুলোর প্রাপ্ত টাকা যাতে সরাসরি বিদ্যালয় তহবিলে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত কাজ করানো যায় আগামী ১৫ই ই নভেম্বর ২০২১ এর আগে তার জরুরী ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা দপ্তরের কাছে আমাদের আবেদন থাকছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের একান্ত আবেদন এই যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের,মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী, মিড ডে মিল এর সঙ্গে যুক্ত কর্মী, নৈশ প্রহরী সহ সব স্তরের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকে করোনার টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে”
খড়গপুর মেদিনীপুরের বিদ্যালয় প্রধানরা আরও জানিয়েছেন, গত ১৬মাসে স্কুলগুলির অবস্থা বেশকিছু দিক থেকে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কোথাও স্কুলের ছাদ থেকে জল পড়ছে তো চেয়ারবেঞ্চি খারাপ। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়গুলিকে বলা হয়েছিল নিজ নিজ স্কুলের পরিকাঠামোগত ত্রুটি সম্পর্কে জানাতে এবং পরিকাঠামো উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য একটি বাজেট পাঠাতে। পূজার আগে থেকে দু-দুবার সেই বাজেট পাঠানো হয়েছে। এই বাবদ বিদ্যালয়গুলিকে প্রায় ৫লক্ষ করে টাকা বরাদ্দ করার কথা ছিল যা এখনও অবধি পাওয়া যায়নি। সেই টাকা কবে পাওয়া যাবে তা স্বয়ং জেলা স্কুল পরিদর্শকই বলতে পারছেননা বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয় প্রধানরা।
এদিকে অন্য আরেকটি সমস্যার দিকে নজরপাত করেছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী- শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী। শ্রী অধিকারী বলেছেন, রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রয়েছেন যাঁরা বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াত করার জন্য লোকাল ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। অথচ রাজ্য সরকার এখনও লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দেননি। ফলে শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মীরা কীভাবে স্কুল করবেন সেটাও একটা প্রশ্ন। তাঁর দাবি অবিলম্বে লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দিক রাজ্য সরকার।