নিজস্ব সংবাদদাতা: যেন পতাকাটাই এবার লাইট হাউস। ভারতের গর্ব সেই ত্রিবর্ন পতাকা দেখেই এবার বন্দরের দিশা খুঁজবেন ভিন দেশি নাবিকের দল। দিনের বেলায় সূর্য আর রাত নামলে উজ্জ্বল মায়াবী আলোয় এই পতাকার দেখা মিলবে বিশ, পঞ্চাশ মাইল দূর থেকেই। যার বাইনোকুলার যত শক্তিশালী সে ততোধিক দূরত্ব থেকে দেখতে পাবে এই ত্রিবর্ন পতাকা। ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সর্বোচ্চ জাতীয় পতাকা প্রতিস্থাপন করেছেন হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। না, শুধুই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নয়, রাজ্যের আরও কয়েকটি জেলার মধ্যে এই প্রথম ১০০ফুট উঁচুতে উড়ল জাতীয় পতাকা। দক্ষিণের সুদূর প্রসারি সমুদ্র গর্ভ থেকে যে পাতাকা দেখতে পাবেন বন্দরে আসা জাহাজের নাবিক দল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দেশ জুড়ে স্বাধীনতার ৭৫বছর উপলক্ষ্যে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কী অমৃতমহোৎসব।’ সেই উপলক্ষ্যেই ঠিক হয়েছিল নতুন কিছু করার। আর তাই এই ভাবনা। ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসকেই বেছে নেওয়া হয় এই উচ্চতম পতাকা প্রতিস্থাপনের দিন হিসাবে। ১০০ ফুট উঁচু মরচে বিহীন ইস্পাত নির্মিত স্তম্ভে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে ত্রিবর্ন পতাকাটিকে। দুই-তিন অনুপাতে পতাকার দীর্ঘ ৩০ ফুট এবং ২০ ফুট চওড়া। পতাকা স্তম্ভটির নিচের দিক থেকে ৬ফুট উচ্চতা অবধি গ্রানাইট পাথর খচিত একটি সুদৃশ্য বেদী নির্মিত হয়েছে। বন্দরের মূল প্রশাসনিক ভবন জওহর টাওয়ার চত্বরে এই পতাকা স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। জওহর টাওয়ারের ১৩তলা ভবনটির পাশেই প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে এই স্তম্ভ। হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(প্রশাসন) প্রভীনকুমার দাস জানান, ”স্বাধীনতার ৭৫বছরকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই ধরনের স্মারক পতাকা স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। প্রথমে বন্দরের প্রবেশপথে রানিচক এলাকায় স্মারক স্তম্ভ করার পরিকল্পনা করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জওহর টাওয়ার চত্বরে তৈরি হবে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সাধারণভাবে প্রশাসনিক ভবন বা অন্য কোনও জায়গায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা থাকলে তা সূর্যাস্তের পূর্বেই নামিয়ে নিতে হয়। পরের দিন ফের সূর্যোদয়ের পরে তা ওঠানো হয়। কারন অন্ধকারে জাতীয় পতাকা ওড়ানো পতাকার অবমাননা। এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানতে হবেনা কারন সূর্যাস্তর আগেই স্তম্ভটিকে ঘিরে প্রতিস্থাপিত উর্ধমুখী অত্যাধুনিক আলোক বিচ্ছুরন পাতাকটিকে আলোকিত করে রাখবে। দ্বিতীয়ত: যে বিষয়টি নজর রাখতে হয় তা হল প্রখর সূর্য তেজে পতাকাটি বিবর্ণ হওয়ার আগেই তা বদলে ফেলা এবং তৃতীয়ত: অত্যধিক উঁচুতে থাকায় পতাকার কাপড় প্রচুর পরিমান বাতাস ধারণ করে থাকে। আর যে কারনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পতাকার কাপড় ছিঁড়তে শুরু করে। বিবর্ণ এবং খুঁত যুক্ত পতাকা ওড়ানোও জাতীয় অবমাননা। তাই সেদিকেও নজর রাখা হবে।
বন্দরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘এটাও আমাদের একটা শ্লাঘার বিষয় যে ভারতের ভূখণ্ডে পা রাখার বহু আগে থেকেই ভারতের জাতীয় পতাকা নজরে আসবে বিদেশীদের। হলদিয়া বন্দরে বহুদিনই ঢুকতে পারেনা খুব বড় মাপের জাহাজগুলি। তাই বন্দর থেকে ১২৫কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্র গর্ভের স্যান্ডহেড নামক জায়গায় নোঙর করে জাহাজগুলি। সেখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে পণ্য আসে বন্দরে। সেই জাহাজে আসার সময় বহু মাইল আগেই ভারতের পতাকা দেখতে পাবেন ভিন দেশী নাবিকের দল। ঠিক কত মাইল সমুদ্র গর্ভ থেকে এই পতাকা দেখতে পাওয়া যাবে? উত্তরে বন্দর আধিকারিক বলেন, এটা নির্ভর সেই জাহাজের বাইনোকুলারের দৃষ্টি সীমার ওপর। তেমন শক্তিশালী বাইনোকুলার হলে স্যান্ডহেড থেকেই বন্দরের পতাকা দেখতে পাওয়া যাবে।’ গত সোমবার এবং মঙ্গলবার লাগাতার মহড়ার পর বুধবার ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসে যথাযোগ্য মর্যাদায় সেই পতাকা উড়িয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।