Saturday, July 27, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্নাল-১৪৮ চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্নাল— ১৪৮
চিন্ময় দাশ
রাধা-দামোদর মন্দির,
কাতরাবালি (গড়বেতা)
সপ্তদশ শতকের একেবারে শেষের দশক। চেতুয়া-বরদার রাজা ছিলেন শোভা সিংহ। ইতিহাস মহাবীর্যবান শোভাকে ‘বাংলার শিবাজী’ নামে অভিহিত করেছিল। ইং ১৬৯৬ সালে, বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, বর্ধমানের রাজা কৃষ্ণরামকে হত্যা করেছিলেন শোভা। সেই যুদ্ধে চন্দ্রকোণার রাজা রঘুনাথ সিংহ ছিলেন শোভার অন্যতম সহযোগী।
পরে, প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য, ১৭০২ সালে কৃষ্ণরামের পৌত্র রাজা কীর্তিচন্দ্র যুদ্ধযাত্রা করেন। সেই ভয়াণক যুদ্ধে চেতুয়ার তৎকালীন রাজা হিম্মত সিংহকে পরাজিত এবং চন্দ্রকোণার রাজা রঘুনাথ সিংহকে হত্যা করে, দুটি রাজ্যই অধিকার করে নিয়েছিলেন তিনি।
নতুন এলাকার শাসনকাজ পরিচালনার জন্য, চন্দ্রকোণা নগরীর অযোধ্যাগড়ে একটি কাছারী স্থাপন করেছিলেন কীর্তিচন্দ্র। কাছারীর নবনিযুক্ত নায়েব ছিলেন হুগলি জেলার অধিবাসী। হুগলির লাগোয়া বগড়ী পরগণার পূর্বাংশ তখন সরকার (বর্তমানের জেলা) মান্দারণ-এর অন্তর্ভুক্ত। সেই এলাকায় কাতরাবালি গ্রামে এসে স্থায়ী বসবাস করেছিলেন নায়েব মশাই। তাঁর নামটি জানা যায়নি, এমনকি সেবাইত পরিবারও তাঁর নামটি স্মরণ করতে পারেননি।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

সে যাইহোক, নায়েব মশাই তাঁর নিজের কর্মদক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তায় নবাব দরবার থেকে ‘সরকার’ খেতাব পেয়েছিলেন। সেই থেকে নায়েবের বংশধরগণ সরকার পদবীতেই পরিচিত হয়ে আসছেন।
বলা হয়, হুগলিতে নায়েবের বংশ শৈব ও শাক্ত মতে দেবতার আরাধনা করতেন। কিন্তু মেদিনীপুরের নতুন ভূমিতে এসে তিনি চৈতন্যদেব প্রবর্তীত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ভগবান বিষ্ণুকে আশ্রয় করে, কুলদেবতা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। দামোদর নামক শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠা করে সেবাপূজার প্রচলন করেছিলেন।
নায়েব মশাইর ৬ জন পুত্র। তাঁদের মাত্র দুটি নাম জানা যায়—জ্যেষ্ঠ গদাধর এবং চতুর্থ দর্পনারায়ণ। পরিবার বিভাজন হতে শুরু করলে, গদাধর নিজের পরিবারের জন্য একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে, সেখানে ‘রাধা-দামোদর’ নামে একটি শালগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সময় ছিল ইং ১৭৫৭ সাল। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে, বাংলা তথা ভারতে মোগল শাসন উচ্ছেদের বীজ পোঁতা হয়েছিল যে বছরে।
রাধা-দামোদরের দক্ষিণমুখী মন্দিরটি মাকড়া পাথরে (ল্যাটেরাইট) গড়া। দালান-রীতির এই মন্দির আয়তাকার। দীর্ঘ পৌনে তিনশ’ বছরে মন্দিরের ভিত্তিবেদীর সিংহ ভাগ অংশ ভূমিগত হয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট অংশের উপর অপ্রশস্ত একটি প্রদক্ষিণ-পথ দেখা যায়।
সামনে খিলান-রীতির তিনটি দ্বারপথ যুক্ত একটি অলিন্দ। যার স্তম্ভগুলি ইমারতি-রীতির, আর খিলান দরুণ-রীতির। অলিন্দের ভিতরের ছাদ বা সিলিং হয়েছে টানা-খিলান রীতিতে। গর্ভগৃহের দু’দিকে দুটি বড় খিলানের মাথায় গম্বুজ স্থাপন করে সিলিং গড়া হয়েছে। বাইরে উপরে সমতল ছাদ। কিন্তু কার্ণিশগুলি বাঁকানো।
মন্দিরের শীর্ষক বা চুড়া নির্মিত হয়েছে সামনের দেওয়ালের মাথায় আলসের উপর। কার্ণিশের সমান্তরালে নির্মিত আলসেটিও বাঁকানো। সামনের আলসের মাঝখানটিতে বেঁকি, আমলক, পদ্মকোরক, কলস, এবং নিশানদণ্ডটি রচিত হয়েছে। বিষ্ণুচক্রটি কালের আঘাতে স্থানচ্যুত।
দ্বারপথগুলির মাথার দ্বিতীয় কার্ণিশটিতেও বেশ বঙ্কিম ভাব। তাতে একটি স্বাভাবিক সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। মন্দিরটি আকারে ছোট—দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ১২ ফুট হিসাবে, উচ্চতা মাত্রও ১৫ ফুট। কিন্তু প্রাচীনত্বের সমস্ত গৌরব তার সর্বাঙ্গ জুড়ে।
সাক্ষাৎকারঃ শ্রী মূরলীধর সরকার—কাতরাবালি।
সহযোগিতাঃ শ্রী সদানন্দ সরকার এবং মেদিনীপুর ছাত্রসমাজ—মেদিনীপুর শহর।

- Advertisement -
Latest news
Related news