Saturday, July 27, 2024

School: চিত্রনাট্য তৈরি সাংবাদিকদেরই! শিক্ষকদের মারামারির গল্প বানাতে অন ক্যামেরা প্রধান শিক্ষককে মারলেন ভূগোল শিক্ষক

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: সাংবাদিকতার কলঙ্ক কিছু সাংবাদিকের তৈরি করা চিত্রনাট্যর ফাঁদে পা দিয়ে একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও সহশিক্ষকের মারামারি দেখল গোটা বাংলা। দীর্ঘ কয়েকমাস পরে যখন বুধবার শুরু হতে চলেছে পড়ুয়াদের স্বাভাবিক পঠনপাঠন তাঁর ২৪ঘন্টা আগে বাংলার শিক্ষাপ্রাঙ্গনের একটি কলঙ্কিত ছবি দেখানো সম্ভব হয়ে গেল সাংবাদিকতার এই লজ্জা জনক প্রয়াসে। এমনিতেই গোটা লকডাউন পর্বে শিক্ষকদের দেগে দেওয়া হয়েছে অলস, ফাঁকিবাজ, হীন জীব হিসাবে। সরকারের ঘোষিত নীতি হিসাবে স্বাভাবিক পঠনপাঠন বন্ধ ছিল অথচ এই একইনীতিতে বাড়িতে থাকা সরকারি কর্মচারী, অধ্যাপক ইত্যাদিদের কেউ দোষ দেয়নি। শিক্ষকরা পড়াননি কিন্তু স্কুলে যেতে হয়েছে, পড়ুয়াদের জন্য সরকারি বরাদ্দ মিড-ডে-মিল, জামা জুতো, বইখাতা, সাইকেল প্রদান ইত্যাদি যাবতীয় সব কিছু দিতে হয়েছে। করোনা কালে স্কুলে গিয়ে এই কাজ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রধানশিক্ষক সহ শতাধিক শিক্ষক শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু দিনের শেষে ভিলেন করা হয়েছে তাঁদেরই। তারপর স্কুলে পঠনপাঠন চালু হওয়ার ঠিক ২৪ ঘন্টা আগেই আরও একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়া হল এবং মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সেই দুর্বল অথচ জমজমাট চিত্রনাট্য।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

দেখা যাক কী হয়েছিল ঘটনাটি। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। ওই ভিডিও ক্লিপিংর শুরুতে দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণনগর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে কিছু প্রশ্ন করছেন কিছু মানুষ। নিজেদেরকে যাঁরা সাংবাদিক বলছেন। ওই ‘ সাংবাদিক’রা সম্ভবত: প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইছিলেন কেন প্রধান শিক্ষক ভুগোলের শিক্ষকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন? প্রধান শিক্ষক উল্টে জবাব দেন, তিনি নন, বরং ভূগোলের শিক্ষকই তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এমন কী স্টাফ রুমে ভূগোল শিক্ষক তাঁকে জুতো পেটা করার কথাও বলেছেন। কথা হচ্ছিল সাংবাদিককুল বনাম প্রধান শিক্ষকের। এই ফ্রেমে ভূগোলের শিক্ষক ছিলেননা। কিন্তু এই কথা বার্তা চলার সময়ই দেখা যায় ভূগোলের শিক্ষক কোনও প্ররোচরনা ছাড়াই প্রধান শিক্ষকের মাথায় ঘুঁষি চালালেন। হত চকিত ভাব কাটিয়ে এরপর পাল্টা দিলেন প্রধান শিক্ষক এবং ভূগোলের শিক্ষকই বেশি মার খেলেন।

ক্যামেরা চলছিলই ফলে গোটাটাই ভিডিও বন্দী হল। আর এরপর সংবাদিকরূপীদের আসল রূপ ফুটে উঠল। তাঁরা প্রশ্ন বান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন প্রধান শিক্ষকের ওপর। ‘আপনি প্রধান শিক্ষক হয়ে মারলেন কেন?’ ‘আপনি হাতে আইন তুলে নিলেন কেন?’ ‘উনি প্রথমে মারলেন বললেন বলে আপনিও মারবেন!’ ‘আপনি আপনার ক্ষমতা দেখালেন?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। মারামারি তো একশ শতাংশই খারাপ আর তারচেয়েও খারাপ সেই মারামারি যদি শিক্ষকরা করে থাকেন। কিন্তু ঘটনা যখন মারামারির তখন ওই ‘সাংবাদিক’কুল এই সব প্রশ্ন নিয়ে ভূগোল শিক্ষকের কাছে যাননি। তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করেননি, কথা যখন প্রধান শিক্ষক আর আমাদের মধ্যে হচ্ছিল। যখন উত্তেজনার লেশ মাত্র ছিলনা তখন হঠাৎ কোনও প্ররোচনা ছাড়াই প্রধানশিক্ষককে মারলেন কেন?’ অন্ততঃ ভিডিওতে এসব কিছু দেখা যায়নি। আসলে ওই সাংবাদিকদের এরকম একটা জমকালো ফুটেজ দরকার ছিল এবং ভূগোল শিক্ষক সম্ভবতঃ চুক্তি মত তৈরিই ছিলেন এমন একটি ভিডিও উপহার দেওয়ার জন্য।

কিন্ত তার আগের ঘটনাটি কী সেটাও জানা দরকার। জানা গেছে ওই ভূগোল শিক্ষক আজ তাঁর স্যালারি স্টেটমেন্ট চেয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে সেটা দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, আজ নেট ওয়ার্ক দুর্বল ছিল যে অনলাইন থেকে ওই স্টেটমেন্ট নামানো সম্ভব হয়নি। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন,’ আজকে বিদ্যালয় আসার পরে দেখি আমাদের বিদ্যালয়ের একজন ভূগোল শিক্ষক গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্যালারি স্টেটমেন্ট পাননি বলে,আমি বড় বাবুকে জিজ্ঞাসা করি উনি বলেন নেট কানেকশন ছিলোনা বলে অনেককেই স্যালারি স্টেটমেন্ট দিতে পারা যায় নি। আমি যখন উনাকে জিজ্ঞাসা করি স্যালারি স্টেটমেন্ট নেট ছিলনা তাই দেওয়া যায়নি , দুই-একদিনের মধ্যেই দেয়া হবে। তখন উনি একজন সাংবাদিককে নিয়ে আসেন এবং বলেন আমি অবস্থান-বিক্ষোভ করব তারপরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি কথা বলার সময় আমাকে পিছন থেকে সপাটে ঘুষি মারেন । আমি ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেকে রক্ষা করার জন্য উনাকে মারতে উদ্যত হই। আকস্মিক ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত।” অর্থাৎ ভূগোলের শিক্ষক আগে থেকেই ‘সাংবাদিক’ আ্যরেঞ্জ করেই এনেছিলে।

যদিও প্রধান শিক্ষক মারতে উদ্যত হয়েছিলেন নয়, বেশ কয়েকটি ঘুঁষি, চড় থাপড় মেরেছেন। যা না করলেই ভালো করতেন। যাই হোক ততক্ষনে যা হওয়ার হয়ে গেছে। বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া গেছে শিক্ষককুলের কান্ড! হৈ হৈ করে কাটছে সেই ভিডিও ফুটেজ। টি আর পি চড় চড় করে বাড়ছে। পাতা ফাঁদে পড়েই হোক কিংবা অন্য যে কারণেই হোক প্রধান শিক্ষক ভূগোলের শিক্ষককে পাল্টা মেরেছেন। দুই শিক্ষকের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। যদি পুলিশে অভিযোগ হয় তবে মামলা হবে। না হলেও শিক্ষা দপ্তর স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নেবেন।

অবশ্য প্রধান শিক্ষকও ব্যবস্থা নিতে পারেন ওই সাংবাদিকদের মধ্যে। কোনও অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ে ঢোকার জন্য অনধিকার প্রবেশের জন্য। সাংবাদিক হলেই কোনও প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়া সেই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করা যায়না, ছবি, ভিডিও তোলা যায়না। প্রধান শিক্ষক ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন ভূগোল শিক্ষককে প্ররোচিত করে তাঁর ওপর আক্রমণের ছক কষার জন্য। সব সাংবাদিক নয় কিন্তু কিছু সাংবাদিক এই ধরনের ‘সাংবাদিকতার নীতি’ বিরোধী কাজ করে থাকেন। কিছু শিক্ষকের জন্য সমগ্র শিক্ষক কুল নিন্দনীয় হন তেমনই এই রকম কিছু সাংবাদিকের জন্য নিন্দনীয় হয়ে থাকেন সমস্ত সাংবাদিকরা।

- Advertisement -
Latest news
Related news