নিজস্ব সংবাদদাতা: কৃষি জমির কোনও চরিত্র বদল ছাড়াই চাষের জমিতে তৈরি হচ্ছে ভেড়ি। আপত্তি মানা হচ্ছেনা ভেড়িতে অরাজি কৃষকের। হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ মানা হচ্ছেনা। কৃষকরা বারংবার দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের কাছে, ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের কাছে। সবাই জানেন কৃষি জমির চরিত্র বদল না করা অবধি অর্থাৎ চাষের জমিকে পুকুর অথবা অন্য কোনও চরিত্রে রূপদানের সরকারি অনুমতি না দেওয়া অবধি জমির চরিত্র বদল করা বেআইনি। স্থানীয় প্রতিবাদী কৃষকদের দাবি সব জেনেও নির্বিকার ভূমি রাজস্ব আধিকারিক, পুলিশ। আর সেই কারণে গায়ের জোরে কৃষি জমিতে ভেড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। বর্ষার আগেই ভেড়ি তৈরি করতে মরিয়া ভেড়ি মাফিয়ার দল জল ধরে রাখার জন্য তৈরি করেছিল সুউচ্চ মাটির বাঁধ। বৃহস্পতিবার সেই বাঁধ কেটে দিলেন ভেড়ি বিরোধী কৃষকদের জোট।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার রামভদ্রপুর মৌজায় কৃষক সমাজের সমবেত হুঙ্কারে পিছু হটল ভেড়ি মাফিয়ার দল। এদিন ভেড়ির বাঁধ কেটে সমস্ত জল কৃষি জমিতে বইয়ে দিলেন কৃষকরা। জানা গেছে প্রথম দিনে ওই বেআইনি ভেড়ির চারটি স্থানে বাঁধ কেটে দিয়েছেন শতাধিক কৃষক। তাঁরা আরও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁদের সন্তানদের স্বার্থে, কৃষিজমিকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ লড়াই চলবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার কৃষকরা যখন নিজেদের জমিতে চাষ শুরু করার জন্য ভেড়ির বাঁধ কাটছেন তখন রামভদ্রপুর গ্রামের ভেতরে শয়ে শয়ে কৃষক ও ক্ষেত মজুরেরা তাঁদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
উল্লেখ্য রামভদ্রপুর মৌজায় ওই ভেড়ি হয়ে গেলে ৪৩৬ একর তিন ফসলা কৃষি জমি যেখানে বছরে দুবার ধান এবং একবার করে সরষে চাষ হয় তা পুরোপুরি নষ্ঠ হয়ে যাবে এবং ১২০০ অধিক কৃষকের সর্বনাশ হবে বলে দাবি ভেড়ি বিরোধী আন্দোলনরত কৃষকরা। কৃষকদের দাবি এই ভেড়ি মাফিয়ারা কৃষি জমিকে নষ্ট করার জন্য গত বর্ষার মরসুমে কেলেঘাই নদীর পাড় ভেঙে দিয়েছিল। ফলে গত বছর আমন চাষ হয়নি বন্যার কারনে। এরপর এবছর গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ করার সময় এরা চাষের জমিতে ঘাস আগাছা নষ্ট করার ক্যামিকেল ছড়িয়ে ধান গাছ নষ্ট করে দেয়।
মানুষকে ভয় দেখিয়ে বন্দুক ঠেকিয়ে ভেড়ি তৈরীর জন্য বাঁধ তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল এরা। কৃষকদের উপর চলে জুলুম, অত্যাচার, বাইক বাহিনীর দাপট ছিল। এমনকি মহিলাদেরও কটূক্তি করতে ছাড়েনি ভেড়ি মাফিয়ার দল। রাতে নির্বিচারে বোমাবাজি করে বাইক বাহিনীর দল গ্রামবাসীদের ঘরে আটকে রাখে আর পঁচিশ/তিরিশটি ট্রাক্টর, মাটি কাটার যন্ত্র নামিয়ে ভেড়ি তৈরি হতে থাকে। গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকেই কৃষকরা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সামিল হয়। গড়ে ওঠে রামভদ্রপুর কৃষি ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম কমিটি। সারা ভারত কৃষক সভা ও ক্ষেতমজুর সংগঠন প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেই কৃষি ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির লোকেরাই কোদাল, গাঁইতি নিয়ে গিয়ে কেটে দিলেন অবৈধ ভেড়ির বাঁধ।