নিজস্ব সংবাদদাতা: ঠিক ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ নেই ! শনিবার সকালের দিকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়নগড় থানার নাড়মা এলাকার মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি দিলীপ দন্ডপাট। ওইদিন বিকেলে খড়গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নিখোঁজ দিলীপের স্ত্রী ও ছেলে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/Screenshot_20211206-212406_WhatsAppBusiness.jpg)
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর দাবী ছিল দিলীপ নিজেই সরে পড়েছেন কাউকে না জানিয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে জানায় তাঁরা ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাবে পরিবারকে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কারন ওই সময়ের ফুটেজই মেলেনি।
নিখোঁজ দিলীপের স্ত্রী কাকলী দন্ডপাট জানিয়েছেন সোমবার সকালে হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষার সময় দেখা গিয়েছে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা অবধি কোনও ফুটেজ নেই। অথচ আগে পরের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। শনিবার দিলীপ দন্ডপাট নিখোঁজ হয়েছেন সকাল ৮টার পরেই।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211206-WA0025.jpg)
দিলীপের ছেলে সঞ্জয় দন্ডপাটের অভিযোগ ছিল, শনিবার একজন নার্স বাবাকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই সে তার মাকে ডাকতে যায়। বাইরে টিফিন করে এসে দেখতে পায় বাবা নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, দিলীপ না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেছে। তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে তা প্রমাণ করে দেবেন কিন্তু ওই সময়ের ফুটেজ না পাওয়া যাওয়ায় রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
সিসিটিভিতে ওই সময়ের যে ফুটেজ মেলেনি তা স্বীকার করে নিয়ে হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ” মনে হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিসিটিভি কাজ করেনি তাই ক্যামেরার ফুটেজে ওই রোগীর ছবি পাওয়া যায় নি।” তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছি সিসিটিভি সারানোর কথা। দুটো সিসিটিভির একটি মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে যায় বিশেষ করে যেটি প্রধান সেটাই। এক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ অন্যদিকে নিখোঁজ রোগীর স্ত্রী কাকলি দন্ডপাট বলেছেন ” হাসপাতাল থেকে ষড়যন্ত্র করে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ছবি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজে নিখোঁজ দিলীপের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি জানার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন নিখোঁজ রোগী দিলীপ দন্ডপাটের পরিবারের সদস্যরা। ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরা রীতিমতো তান্ডব শুরু করেন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। ভাঙচুর করা হয় হাসপাতাল সুপারের চেম্বারের উল্টোদিকে অফিস ঘরে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211206-WA0027.jpg)
দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা হয় হাসপাতাল সুপারের চেম্বারের। অফিস ঘরের টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। আছড়ে ফেলা হয় একটি কম্পিউটার। খবর পেয়ে খড়গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপক সরকারের নেতৃত্বে খড়গপুর টাউন থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দুজনকে আটক করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে হাসপাতাল সুপারের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুজনকে গ্ৰেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে নিখোঁজ রোগীর ছেলে সঞ্জয় দন্ডপাট রয়েছে। আর অপরজনের নাম ঝাকু দোলই। বাড়ি মেদিনীপুর মেডিকেল কোতয়ালী থানার জাগুল এলাকায়। এই ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়গপুর) রানা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন হাসপাতালে ভাঙচুর করার ঘটনায় দুজনকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও ভাঙচুর করার মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তিনি জানালেন।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ রোগীর যেমন হদিস পাওয়ার জন্য পুলিশ তদন্ত করছে তেমনই তদন্তের আওতায় এসেছে হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরাতে কী কারণে ওই সময়ের ফুটেজ ধরা পড়লনা অথবা কোনও ফুটেজ নষ্ট করার মত বিষয় আছে নাকি তাও। সিসিটিভির আওতার বাইরের কোনও এলাকা দিয়ে দিলীপ হাসপাতাল ছেড়েছে নাকি কোনও বড়সড় গন্ডগোল রয়েছে তাই নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে ঘটনা যাইহোক না কেন তা উদঘাটন করবেই পুলিশ। ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোথায় দীলিপ সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন তাঁর পরিবার এবং পুলিশের কাছে।