নিজস্ব সংবাদদাতা: জীবনের প্রথম সন্তানটি লক্ষ্মী হয়েই এসেছিল কিন্তু মানতে পারেনি মা কিংবা বাবা, অথবা দুজনেই! তাই মাত্র ১দিনের মাথায় পৃথিবী ছাড়তে হল সদ্যজাত কন্যাটিকে। বুধবার বাংলা জুড়ে মহালক্ষ্মীর আরাধনার দিনেই এমনই কলঙ্কময় নৃশংস ঘটনার স্বাক্ষী থাকল কলকাতা মহানগর। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী বালিশ চাপা দিয়েই খুন করা হয়েছে ওই সদ্যজাতকে। কিন্তু খুন কে করেছে তাই নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। একটি মামলা রুজু করে তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুর এলাকার একটি নার্সিংহোমে। তাই একবাল পুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওই নার্সিংহোম সূত্রে জানা যাচ্ছে ১৮ তারিখ প্রসব বেদনা নিয়ে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন ২১ বছরের আসন্নপ্রসবা লাভলি সিং। ১৯ তারিখ সন্ধ্যাবেলায় তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সুস্থই ছিল সদ্যোজাত। কিন্তু বুধবার সকালে কর্তব্যরত আয়া এসে লক্ষ্য করে যে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানটি নড়াচড়া করছেনা, তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিষয়টি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপর এক চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন যে কন্যার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দেহটি সংগ্ৰহ করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
যদিও পুলিশের কাছে এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে পৌছায়নি তবুও প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও চিকিৎসকরা বিষয়টিকে খুনের ঘটনা বলেই মনে করছেন। তাঁদের ধারনা, শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। শিশুর কন্যার নাকে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মনে করা হচ্ছে বালিশ চাপা দিয়েই শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে যাতে তার কান্নার শব্দ বাইরে না আসে। এই হত্যার সময় কোনও ভাবে সদ্যজাত কন্যার নাকে আঘাত লাগে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রসব হওয়া ওই শিশু একদমই স্বাভাবিক ছিল। তার কোনও ধরনের শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা ছিলনা। এই অবস্থায় শিশুটির মৃত্যুই একটি অস্বাভাবিক ঘটনা যে কারণেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ মত পুলিশের দ্বারস্থ হন।
নার্সিংহোমের আয়া বা অন্যান্য কর্মীরা জানিয়েছেন, জীবনের প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও লাভলির মুখে হাসি দেখতে পাওয়া যায়নি বরং বেশকিছুটা বিমর্ষই দেখা গিয়েছিল তাঁকে যা কিনা তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। খুব স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হচ্ছে মেয়ে হওয়ার পর থেকেই খুবই চাপে ছিলেন ওই সদ্য প্রসূতি। প্রশ্ন উঠেছে প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির তরফে লাভলির উপর কোনও চাপ দেওয়া হচ্ছিল কী? বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কোনও অশান্তি আশঙ্কা থেকেই কী তবে লাভলি জীবনের প্রথম সন্তানকে হত্যা করল? সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অন্যদিকে নার্সিংহোমে লাভলির সঙ্গে একই কেবিনে ছিলেন তাঁর স্বামী অজয় সিংও। সদ্যোজাতর মৃত্যুর সময় তিনি কোথায় ছিলেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লাভলি নাকি অজয় কে ‘খুন’ করল সদ্যোজাতকে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি কারন পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে। মা বাবাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি বিষয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই করা হবে বলে জানা গেছে।